বাংলাভাষার দাবী বা প্রদেশের স্বার্থের প্রতি সুবিচার করা হয় নাই
ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ইতিহাস সম্মেলনের সভাপতি আল্লামা সৈয়দ সােলায়মান নদভীর প্রতি যে ব্যবহার করা হইয়াছে, তাহার নিন্দা করিয়া পূর্বপাকিস্তান মােসলেম লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির আব্দুল মান্নান এক বিবৃতিতে বলেন, যেসব ছাত্র আল্লামার মত বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রতি দুর্ব্যবহার করিয়াছেন তাহার বাংলা ভাষার দাবী বা প্রদেশের স্বার্থের প্রতি কোনও সুবিচার করেন নাই।
জনাব মান্নান এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, আরও দুঃখের বিষয় যে ভাইস চ্যান্সেলর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তপক্ষ এখনও এ সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করিয়া একটা কথাও বলিলেন না। ইহাতে বুঝা যাইতেছে যে, হয় তাহারা এ ঘটনায় খুশী হইয়াছেন, না হয় শৃখলা রক্ষার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা তাহাদের নাই।
লীগ সম্পাদকের পূর্ণ বিবৃতি নিম্নে প্রদত্ত হইল : “গত ২৮শে ফেব্রুয়ারী কার্জন হলে পাকিস্তান ইতিহাস সম্মেলনের অধিবেশন চলিতে থাকাকালে যে ঘটনা অনুষ্ঠিত হয় তাহা অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন সকল লােকের নিকট উহা নিন্দনীয়। ছাত্ররা যদি শক্তি প্রয়ােগে কোন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন এবং অপরকে তাহাদের কথা বলার ন্যায়সঙ্গত অধিকার না দেন তাহা হইলে আমাদের ও আমাদের দেশের পক্ষে ইহাপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কিছু হইতে পারে না। যেসব ছাত্র আল্লামা সােলায়মান নদভী এবং সম্মেলনের অন্যান্য বিশিষ্ট প্রতিনিধির সহিত দুর্ব্যবহার করিয়াছেন তাহারা বাংলা ভাষার দাবী অথবা এই প্রদেশের স্বার্থের প্রতি সুবিচার করেন নাই। ইহা আল্লামা নদভীর অবমাননা নয় সমগ্র ছাত্র সম্প্রদায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বস্তুতঃ পাকিস্তানের এই অংশের অধিবাসীদের সকলের পক্ষে কলঙ্কের কথা। এই ঘটনাটি একটি গুরুতর ইঙ্গিত বহন করিতেছে। শুধুমােছলেম লীগই নয় বরঞ্চ বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন যে সকল পিতা চাহেন যে তাহাদের সন্তান ভদ্র শৃখলাপ্রিয় ও শিক্ষিত হইয়া উঠুক, তাহাদের কেহই ইহা হাল্কাভাবে গ্রহণ করিতে পারে না। ইহা আরও দুঃখের বিষয় যে ভাইস চ্যান্সেলার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করিয়া একটি কথাও বলেন নাই। ইহাতে মনে হয় তাহারা হয় ঘটনাটিতে খুশী হইয়াছেন, না হয় শৃঙখলা রক্ষায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তারে অক্ষম। এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে যে সব ব্যাপার ঘটিতেছে তাহার কোনটি সম্পর্কেই মােছলেমলীগ আর নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করিয়া থাকিতে পারে না। কারণ মােছলেমলীগকেই সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে দেশকে ভবিষ্যতের দিকে চালিত করিতে হইবে। রাজনৈতিক মতবাদ নির্বিশেষে অভিভাবকগণ যে তাহাদের সন্তান-সন্ততিদের শৃখলাবােধের অবনতির বিষয় বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিবেন এবং তাহাদের ভবিষ্যৎ উন্নতির ব্যাপারে যে আমাদের সহিত পূর্ণ সহযােগিতা করিবেন, তৎসম্পর্কে আবার কোন সন্দেহ নাই। কারণ ছাত্রদের ভবিষ্যৎ উন্নতির সহিত জাতির কল্যাণ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
ঢাকা প্রকাশ
৮ মার্চ, ১৯৫৩
পৃ. ৩
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত