You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাষ্ট্রভাষা ও মিঃ সােহরাওয়ার্দী

এক হিসাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে। পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থা পরিষদ মােছলেম লীগ এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান স্বীকার করিয়া লইয়াছেন যে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা গ্রহণ করিবে। এ লইয়া বিরােধ বিতর্কের সীমারেখা ক্রমেই সঙ্কুচিত হইয়া আসিয়াছে। ভাষার ব্যাপার নিয়া পূর্বপাকিস্তানের বহু ছাত্র যেভাবে আত্মদান করিয়াছেন,তা আজ সর্বজনবিদিত। ঢাকার শােচনীয় গুলিবর্ষণের ফলে এখনও সারা দেশ মূহ্যমান। ঠিক এই সময় মিঃ সােহরাওয়ার্দী একটি বিবৃতি প্রচার করিয়াছেন এবং বিবৃতিতে বলিয়াছেন যে, উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। কারণ পাকিস্তানের আদর্শের দিক দিয়া ইহাই ঠিক। কিন্তু এ কথা বলার পর তিনি আবার বলিতেছেন যে, বাংলার বুকে জোর করিয়া উর্দু চাপাইয়া দেওয়া হইবে না। আস্তে আস্তে তাকে পরিচিত করিয়া তুলিতে হইবে ইত্যাদি।
মিঃ সােহরাওয়ার্দীর এই বিবৃতি বর্তমান সময়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পানি যখন ঘােলা হইয়া আসে তখন অনেকেই মাছ শিকার করিতে আসে। আজ ভাষার ব্যাপার লইয়া বিক্ষুদ্ধ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে মিঃ সােহরাওয়াদী বাছিয়া লইয়া নতুন জটিলতা সৃষ্টি করিতে চাহিতেছেন। তাঁর মতলব এই যে, এতে করিয়া তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির সুবিধা হইবে। তিনি সমস্যার সমাধা চান না, তিনি সমস্যাকে বাঁচাইয়া রাখিতে চান। যখন উর্দ-বাংলা সমস্যার অবসান ঘটিতে চলিয়াছে, তখন তিনি এই সমস্যাকে নুতন জীবন দান করিতে চাহিতেছেন। বস্তুতঃ মিঃ সােহরাওয়ার্দীর উর্দুর জন্য এক্ষেত্রে অহেতুক আগ্রহ প্রকাশকে সহজভাবে গ্রহণ করা যাইতে পারে না। উর্দু ও বাংলা দুইটিই পাকিস্তানের সমৃদ্ধশালী ভাষা। এই দুই ভাষাকে সমান মর্যাদা দানই বাংলার দাবী। এজন্যই ঢাকার ছাত্ররা লড়িয়াছেন এবং তাদের সে সংগ্রাম জয়যুক্ত হইতে চলিয়াছে। নুতন করিয়া এই ভাষার বিতর্ক জীয়াইয়া তুলিতে যাওয়া কোন পাকিস্তানীর উচিত নয়। মিঃ সােহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের স্বার্থ না দেখিয়া নিজের রাজনৈতিক স্বার্থকে বড় করিয়া দেখিয়াছেন এবং সমস্যায় মুক্ত গ্রন্থি বন্ধনকে জট পাকাইয়া তাকে আরও জটিল করিয়া তুলিতে চাহিতেছেন।
এই শ্রেণীর উদ্দেশ্যমূলক রাজনৈতিক প্রচারের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে আজ সচেতন থাকিতে হইবে। মিঃ সােহরাওয়াদী তার গরজে ভাষাই বিতর্ককে জীয়াইয়া রাখিতে চান। কারণ, ইহাতেই তার সুবিধা। এইরূপ রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের উক্তি ও মতামতকে সকল দিক হইতে বিচার ও বিশ্লেষণ করিয়া গ্রহণ করিতে হইবে।
ঢাকা প্রকাশ
২ মার্চ, ১৯৫২
পৃ. ৭

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!