You dont have javascript enabled! Please enable it! 1953.09.13 | পূর্ববঙ্গের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির স্মারক লিপি | ভাষা আন্দোলন - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ববঙ্গের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির স্মারক লিপি

তারিখ ১৯.৩.৫৩ইং ঢাকা
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
তারিখ : ১৯.৩.৫৩ ইং
খাজা নাজিমউদ্দিন সাহেবের বরাবরেষু। আমরা পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক সরকারের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী আজ দুই বৎসর যাবৎ আমরা প্রাদেশিক সরকারের নিকট বেতন বৃদ্ধি, বাসস্থান, ছেলে মেয়েদিগকে শিক্ষা ইত্যাদি দাবী নিয়া বার বার আবেদন করিয়াছি। এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন সাহেবের নিকট ৪ চারিখানা স্মারক লিপি দিয়াছি। দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত আমরা কোন জবাব পাই নাই। ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী জনাব নূরুল আমিন সাহেব ও বাণিজ্য সচিব এবং লেবার মন্ত্রী মহােদয় তিনিরা সকলেই যে আশ্বাস দিয়াছিলেন, ১৯৫৩ সনের ২৫শে জানুয়ারী ৪র্থ শ্রেণীর কৰ্মচারীর সাধারণ সভায় লেবার মন্ত্রী জনাব আব্দুল সলিম সাহেব মােছলেম লীগের পক্ষ হইতে তাহা অস্বীকার করিয়াছেন। ১৯৫২ সনের ১৩ই অক্টোবরের পর আমরা ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী প্রধানমন্ত্রীর বাড়ীতে অর্থাৎ, ঢাকা বর্ধমান হাউসে গিয়াছিলাম আমাদের দাবী দাওয়ার বিষয় নিয়া প্রধানমন্ত্রী আমাদিগকে এমন এক উপদেশ দিলেন যে তােমরা সকলেই খােদাতায়ালার নিকট ভিক্ষা চাও। তােমাদের জন্য খােদা আছেন। ইহাতে আমাদের মনে হয় যাহারা মক্কায় যান, তাহারা খােদাতালার দেখা পান আমরা ৪র্থ শ্রেণীর কশ্মচারী আমরা মক্কায় যাইতেও পারিব না খােদাতালার দেখাও পাইব না, আমাদের দাবী দাওয়াও পূরণ হইবে না। এক মাস পূর্বে জনাব নূরুল আমিন সিলেটে এক জনসভায় বলিয়াছেন পাকিস্তানের অভিভাবক একমাত্র মােছলেম লীগ তাহলে আমরা বলিতে চাই। পূর্ববঙ্গের ৪র্থ শ্রেণীর কশ্মচারীদের দাবী দাওয়া পূরণের দায়িত্ব কি মােছলেম লীগের নাই। ১৯৫২ সনের ২৭শা মে, করাচী হইতে এ. পি. পি.র যে খবর প্রকাশ হইয়াছিল এবং ২৮শা মে, আজাদ পত্রিকায় বাহির হইয়াছিল তাহা কতটুক কাজে পরিণত হইয়াছে আমরা জানিতে চাই। বর্তমান সময়ে আমরা দেখিতেছি পশ্চিম পাকিস্তানে নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য কম মূল্যে রেশন, ঔষধ, কাপড় ইত্যাদি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। ৯ই মার্চ ১৯৫৩ইং সংবাদ পত্রিকায় এ. পি. পির এক খবরে প্রকাশ করাচীতে ৪র্থ কৰ্ম্মচারীদের জন্য কিছু পরিমাণ বাসস্থানও তৈয়ারী করা হইতেছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের ৪র্থ শ্রেণীর কৰ্ম্মচারীদের বেতনও বৃদ্ধি করা হইয়াছে। উক্ত কাজগুলির কথা শুনিয়া আমাদের মনে হইতেছে আমরা পূর্ববঙ্গের ৪র্থ শ্রেণীর কশ্মচারী আমরা উর্দু ভাষা জানিনা বলেই আমাদের দাবী দাওয়া পূরণ করা হইতেছে না এবং আমরা ১৬০০ মাইল দূরে থাকি সেজন্যই মােছলেম . লীগের অপ্রিয় লােক বর্তমান সময়ে আমাদের বিশ্বাস কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় মােছলেম লীগের নিকট পূর্ববঙ্গের কোন দাবী দাওয়া পেশ করিলে প্রথমে রক্ত দিতে হয়, তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দাবী দাওয়া পূরণ করেন। ১৯৪৬ সনের পর হইতে আমরা জানিতাম যে মুসলমানের রক্ত দিয়া পাকিস্তান কায়েম হইয়াছে তবুও পূর্ববঙ্গে বাংলা ভাষা নিয়া জনসাধারণ রক্ত দিয়াছে ২/৩ বৎসর আগে পূর্ববঙ্গের পুলিশ বাহিনী রক্ত দেওয়ার পর তাহাদের দাবী দাওয়া, মানিয়া নেয়া হইয়াছে। আজ আমরা ৪র্থ শ্রেণীর কশ্মচারী আমাদের দাবী নিয়াও মােছলেম লীগ সরকারকে রক্ত দিতেই হইবে কিন্তু মহান নেতা কায়েদে আজম মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ যিনি ছিলেন পাকিস্তানের জন্মদাতা তিনির বাণী অনুসারে পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক সরকারের ৪র্থ শ্রেণীর কশ্মচারীদিগকে কিছুই সুযােগ-সুবিধা দেওয়া হয় নাই। যাহা হউক আমরা প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন সাহেবকে স্মরণ দিতেছি পূর্ববঙ্গের ব্যবস্থা পরিষদের মেয়াদ আর এক বৎসর আছে। যদি আমাদের দাবী দাওয়া পূরণের অনুগ্রহ হয় তাহা হইলে ১৯৫৩ সনের ৩১ (একত্ৰিশ) মার্চ মাসের মধ্যে পত্রিকা মারফৎ জানাইয়া পূর্ববঙ্গের দেশবাসীকে এবং ৪র্থ শ্রেণীর কৰ্ম্মচারীকে সুখী করিবেন। ইহাই আমাদের কামনা। এখানে উল্লেখ করিতে পারি ১৯৫২ ইং ২৫শ এপ্রিল করাচী হইতে এপিপির যে খবরখানা প্রকাশ করিয়াছিল তাহাতে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ভালই হইয়াছে এবং মনের আশা পূর্ণ হইয়াছে শুধু পূর্ববঙ্গের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবী রহিল বাকী।
পাকিস্তান জিন্দাবাদ
পূর্ববঙ্গের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতি
ঢাকা
Government of East Bengal, B-Proceedings Bangladesh National Archives, Political Department, Branch-Home, Bundle No. 92, May, 1954, Proceedings No. 232-40.

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত