You dont have javascript enabled! Please enable it!

পূৰ্ব্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন

গত ৩১শে ডিসেম্বর অপরাহে স্থানীয় কার্জন হলে বিপুল জনসমাগমের মধ্যে আজাদ পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জনাব ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেব ও অভ্যর্থনা জানান সম্মেলনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি জনাব মুহম্মদ হাবিবুল্লাহ বাহার সাহেব।
মৌলানা আবদুর রহিম সাহেবের কোরান পাঠের দ্বারা সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। তৎপর কবি গােলাম মােস্তফা উদ্বোধনী পাঠ করিবার কালে নবজাগ্রত রাষ্ট্রের নবচেতনা ও সাহিত্য সাধনার ভবিষ্যৎ ও সাহিত্যিকদের কর্তব্য সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত ভাষায় আলােচনা করেন। পাকিস্তান রেডিওর শিল্পীবৃন্দ “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” গান গাহেন।
বেগম শামসুন্নাহার শিশুসাহিত্য সম্মন্ধে আলােচনা করেন। তিনি তাহার ভাষণে বলেন যে, ছােটদের জন্য লাইব্রেরী ও রিডিং রুম এবং তাহাদের লিখিবার সুযােগ দেওয়া সম্পর্কেও তিনি আলােচনা করেন।
ভাষাবিজ্ঞান সম্পর্কে আলােচনা করেন আবুল হাসনাৎ সাহেব। তাহার মতে টাইপের ও বানানের সুবিধার জন্য অক্ষরের সংখ্যা কমান দরকার, এবং এ কার, ই কার ইত্যাদি দূর করা একান্ত প্রয়ােজন। তিনি ভাষাবিজ্ঞানের সহজ সৰ্ব্বসাধারণের উপযােগী দিক সম্মন্ধেই প্রধানতঃ আলােচনা করেন এবং ভাষাকে সহজেই আয়ত্তাধীন করিবার পথ বলিয়া দেন।
১লা জানুয়ারী সকাল নয়টায় উক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে কার্জন হলে পূর্বপাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন আরম্ভ হয়। বেলা ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন চলিবার পর কিছুক্ষণের জন্য অধিবেশন মুলতবী রাখা হয়। অতঃপর ৩টায় অধিবেশন পুনরায় আরম্ভ হইয়া সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত চলে। অতঃপর কবি জসীমউদ্দীন, সুগায়ক আবদুল আহাদ ও স্থানীয় বেতার শিল্পীগণের উদ্যোগে এক বিচিত্রানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অদ্য সাহিত্য সম্মেলনের অধিবেশন শেষ হয়।
এই দিনের অধিবেশনে জনাব ইব্রাহীম খা পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষা সমস্যা, জনাব মােহাম্মদ মােদাব্বের সংবাদ-সাহিত্য এবং আবদুল ওহায়েদ চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে আলােচনা করেন। অধ্যাপক শরফুদ্দীন ইতিহাস সম্পর্কে এবং অধ্যাপক ত্রিপুরা শঙ্কর সেন শাস্ত্রী লােকসংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেন।
পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে নিম্নলিখিত প্রস্তাবাবলী গৃহীত হয় :
সৰ্ব্ব প্রথম প্রস্তাবে পাকিস্তানের জনক কায়েদে আজম মােহাম্মদ আলী জিন্নার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এবং আশা প্রকাশ করা হয় যে, তঁাহার অমর আত্মা পাকিস্তানের সকল নাগরিককে শাশ্বত অনুপ্রেরণা দান করিবে।
বাংলাকে পূর্ব-পাকিস্তানের সরকারী ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে প্রবর্তন করিবার জন্য গত বৎসর পূর্ব-পাকিস্তানের আইন সভায় যে প্রস্তাব গৃহীত হয়, উহা এ পয্যাস্ত কার্যকরী না হওয়ায় গভীর দুঃখ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করিয়া এবং অবিলম্বে কার্যকরী করিবার জন্য সরকারকে অনুরােধ জানাইয়া একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এতদ্ব্যাতীত পূর্ববঙ্গ সরকারকে একটি মাদ্রাসা শিক্ষা অনুসন্ধান কমিটি, বয়স্কদের নিরক্ষরতা নিবারনকল্পে একটি পরামর্শ কমিটি ও একটি নারীশিক্ষা পরামর্শ কমিটি গঠনের অনুরােধ জানাইয়া প্রস্তাব গৃহীত হয়। পূর্বপাকিস্তান সরকারকে অপর একটি প্রস্তাবে ঢাকায় একটি পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপনের অনুরােধ করা হয়।
অপর এক প্রস্তাবে ঢাকার জাদুঘরের পুস্তকালয়টিকে গবেষণার উপযােগী করিয়া তুলিবার জন্য এবং আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের সংগৃহীত পুথিগুলি সংগ্রহ করিয়া যাদুঘরে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখার অনুরােধ জানানাে হয়। বাংলা বানান সংস্কার, পরিভাষা সকলন, বাংলা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিয়া এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। অতঃপর আই, এস, সি, ও বি, এস, সি, ক্লাস সমূহের পরীক্ষায় ও যথাসম্ভব সত্বরই বাংলাকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করিবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকটে অনুরােধ জানাইয়া একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
অপর একটি প্রস্তাবে আরবী, পাশী, উর্দু প্রভৃতি ভাষা হইতে ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক আবশ্যকীয় পুস্তকগুলির বঙ্গানুবাদ প্রকাশের জন্য একটি অনুবাদ দপ্তর খুলিবার নিমিত্ত পূর্ববঙ্গ সরকারকে অনুরােধ জানান হয়।
পরিশেষে ইসলামী ইতিহাস ও কষ্টি বিষয়ক গবেষণার জন্য প্রয়ােজনীয় পুস্তকালয় সম্বলিত একটি একাডেমী স্থাপনের জন্য পূর্ববঙ্গ সরকারকে অনুরােধ জানান হয়।
ঢাকা প্রকাশ
জানুয়ারি, ১৯৪৯
পৃ. ২

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!