You dont have javascript enabled! Please enable it! 1949.03.13 | পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে আরবীই গ্রহণ করা উচিৎ - সংগ্রামের নোটবুক

রাষ্ট্রভাষা

আরবী মুসলিম জগতের আন্তর্জাতিক ভাষা। তাহাদের নামাজ খােতবা, ও ধর্মীয় শিক্ষা আরবী ভাষায় হইয়া থাকে। আরব, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, উত্তর আফ্রিকা ও সুদানের প্রায় ২৫ কোটি লােকের মাতৃভাষা আরবী। মুসলিম জাহানে যত ভাষা প্রচলিত আছে, তুর্কী ও চীনা ব্যতীত সমস্ত ভাষাই আরবী বর্ণমালা দ্বারা লিখা হয়। তাহার কারণ, আরবী বর্ণমালা সংখ্যায় কম এবং তাহার লিখন-পঠন প্রণালী সরল। আরবী হরফ দুই প্রকার, বড় (Capital letter) ও ছােট (Small letter)। শব্দের শেষ বর্ণ Capital ও অন্যান্য।
পাকিস্তানের কোন বিদেশী ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করিতে হইলে এই সবদিক বিবেচনায় আরবীই গ্রহণ করা উচিৎ। আমাদের শিক্ষা খুব পশ্চাৎপদ। বিদেশী ভাষা রাষ্ট্র ভাষা করিলে শিক্ষা অনগ্রসরই থাকিবে। বিদেশী ভাষা শিক্ষা করিয়া তাহার মারফত জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা করা বহু সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়সাধ্য। এইসব বিবেচনায় বাংলাই পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিৎ। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত বাংলা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইতে পারে না। কারণ বর্তমান কেতাবী বাংলা পশ্চিম বাংলা পশ্চিমবঙ্গের ভাষা। পূর্ববঙ্গের জনসাধারণের পক্ষে সহজসাধ্য নহে। বিশেষতঃ মুসলমানদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য শব্দ ও ভাবধারা তাহাতে স্থান পায় নাই। বাংলা ভাষাকে পূর্ববঙ্গের জনসাধারণের পক্ষে সহজবােধ্য করা আবশ্যক।
বাংলা বর্ণমালাও রাষ্ট্রভাষার উপযােগী নহে। কারণ তাহার হরফের সংখ্যা ৫৩টি, আবার স্বরবর্ণ ও যুক্তাক্ষর নূতন নূতন আকার ধারণ করে। এই জটিল বর্ণমালা দ্বারা টেলিগ্রাফী ও টাইপ রাইটিং চালানাে দূরূহ ব্যাপার।
আরবী হরফ মাত্র ২৮টি। ইহাদের লিখন–পঠন প্রণালীও সহজ। বাংলা ভাষাকে আরবী : হরফ দ্বারা লিখা অতি সহজ। সুতরাং তাহাই করা উচিৎ। ইহার ফলে আরবী, উর্দু ও ফার্সী শিক্ষা করা সহজ হইয়া যাইবে এবং একটি মাত্র বর্ণমালা শিক্ষা করিলেই চলিবে। আরবী বর্ণমালা ছাড়া অন্য কোন বর্নমালা গ্রহণ করিলে মুসলমানকে অন্ততঃ দুইটি বর্ণমালা শিক্ষা করিতে হইবে। কারণ, কুরআন শরীফ আরবী ছাড়া অন্য কোন হরফ দ্বারা লিখা যাইবে না।
উর্দু ভারতের আন্তঃপ্রাদেশিক ভাষা, ইহা প্রাদেশিক যােগাযােগের ভাষা। ছাত্রগণ ২য় ভাষা হিসাবে তাহা শিক্ষা করিবে।
ঢাকা প্রকাশ
১৩ মার্চ, ১৯৪৯
পৃ. ৪

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত