You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঢাকা বেতার কেন্দ্র

অনেকদিন যাবত ঢাকা বেতার কেন্দ্র সম্বন্ধে স্থানীয় পত্রিকাসমূহে নানারূপ সমালােচনা হইতেছে। সমালােচনার উদ্দেশ্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রে উহার বর্তমান পরিচালক ও তাহার সহকর্মী দ্বারা সম্প্রতি যে সকল অন্যায় ও অবিচার হইতেছে তাহার গতিরােধ ও প্রতিবিধান। স্বভাবতঃই এদেশের জনসাধারণের মনে প্রশ্ন জাগে যে দেশের মাতৃভাষা বাংলা, সেদেশের বেতার কেন্দ্রে বাংলা প্রােগ্রাম এত কম কেন? সামান্য সংখ্যক উর্দু ভাষীদের জন্য উর্দু প্রােগ্রামেরই বা এত ছড়াছড়ি কেন ? দেশের জনসাধারণের বােধগম্য নহে সে ভাষায় অতিরিক্ত প্রােগ্রাম দেওয়ার অর্থ কি ? এজন্য বা কে কাহারা দায়ী, সরকার তাহা দেখিয়াও দেখেন না কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন এই যে, বেতারকেন্দ্রে অধিকাংশ চাকুরী এদেশের লােক না পাইবার কারণ কি? বর্তমানে পূর্ববাংলার অধিবাসীর সংখ্যা বেতারকেন্দ্র খুবই কম এবং যাহারা এইরূপ পক্ষপাতিত্বের জন্য দায়ী তাহাদের বিরুদ্ধে জনসাধারণ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানাইতেছে। আশা করি, বেতার বিভাগের বড় কর্তার নজর একটু এইদিকে পড়িবে এবং এই সকল দুনীতি দমন হইবে।
এ প্রসঙ্গে আমরা আরও একটি কথা বলিতে চাই, যেদিকে একদিন কাহারও দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় নাই, এমন কি জামায়াতে উলেমাদেরও নয়।
আমরা মুছলমান, পাচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের ফরজ। এই নামাজের সময়ও নির্দিষ্ট। অতএব, আবাল-বৃদ্ধ বনিতা সকলেই জানে কখন নামাজের ওয়াক্ত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বেতার বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রােগ্রাম ডিরেক্টর সাহেবান নামাজের ওয়াক্ত ভুলিয়া গিয়াছেন বলিয়া মনে হয়। উর্দু গজল, উর্দু তরজমা ও উর্দু বয়াতে তারা এতই মশগুল যে, নামাজের সময় কখন আসে আর কখন যায় সে খেয়াল তাহাদের নাই। কিসের মাদকতায় তঁাহারা নিজেদের এবং সমগ্র ইসলাম জগতের নিত্য কর্তব্য ফরজ নামাজের কথা ভুলিয়া গিয়াছেন তাহ জানিবার জন্য সমগ্র মুসলিম সমাজ দাবী জানাইতেছে।
অবশ্য ফরজের নামাজের সময় রেডিও স্টেশন খােলা হয় না। জোহরের নামাজের ওয়াক্ত বেশ দীর্ঘ, আর বেলা ২ টায় রেডিও স্টেশন বন্ধ হইয়া যায় এবং ৪টার পূর্বে খেলে না। অতএব জোহরের এমন কি আছরের আউয়াল ওয়াক্ত রেডিও স্টেশন বন্ধ থাকার সময়ের ভিতরই পড়ে। কিন্তু তবুও মনে হয়, রেডিও ষ্টেশন পাঁচটার সময় খুলিলেও আছরের ওয়াক্তের জন্য সময় দেওয়া হয়। মাগরেবের ওয়াক্ত নিয়াই হইতেছে মুস্কিল। দেখা যায় এই সময়ই রেডিও প্রােগ্রামের গানের আসরের জমজমাট বেশী। পাকিস্তানের রেডিও মুসলিম জনগণের নামাজ পড়ার অসুবিধা ঘটাইলে ইহা কত বড় অপরাধ ও ইহার জন্য কিরূপ শাস্তির প্রয়ােজন তাহার বিচারের ভার জনসাধারণের উপর।” মসজিদের সামনে বাজনা বাজাইবার ” চেয়েও ইহা বড় অপরাধ কিনা তাহা বিচার করিয়া দেখা প্রয়ােজন। অতএব আমরা বেতার কেন্দ্রের তরজমা ও গজলে মশগুল কৰ্ম্মকর্তার কানের কাছে বলল আওয়াজে বলিতেছি—তিনি একটু হুস করুন, মাগরেব ও এশার নামাজের সময় তাহাদের নিজস্ব” বেতার কেন্দ্রটার কাজ ক্ষণেক বন্ধ রাখুন। তাহা হইলে আখেরাতের অবশ্য একটা “কিনারা” হইবে। ইহাদের এই কথাটাও মনে রাখা উচিত যে, “জনমত” ইহাদের নিজস্ব মতের চেয়ে লক্ষ গুণ বলশালী। এমনি সুমতি ফিরিয়া না আসিলে জনমত উহা ফিয়াইয়া আনিবার জন্য চেষ্টা করিবে। ক্লাবে বা বাড়ীতে ইহারা যাহা ইচ্ছা করুন সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ”। অতএব একমাত্র খােদা ছাড়া সেখানে অন্য কাহারও নজর দিবার শক্তি নাই। কিন্তু ইসলামের এইরূপ প্রকাশ্য অবমাননা চরম ধৃষ্টতা সন্দেহ নাই।
ঢাকা প্রকাশ
১১ জুন, ১৯৫০
পৃ. ১.

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!