সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের লােক চিরদিনই সকল দেশের লােকদের কথা অথবা ভাষার অনুকরণে খুবই সুনিপুন। এ কথার অর্থও হয় না যে, তারা সকল ভাষাকে পছন্দ বা ভক্তি করে ও মাতৃজবানকে বিসর্জন দিয়ে উহাকে নিজেদের ভাষা বলে গ্রহণ করতে রাজী। এক পত্র লেখক সহযােগী মর্নিং নিউজে চিঠি-পত্রের কলামে লিখিয়াছেন যে, বাংলাদেশের মুসলমানেরা নাকি উর্দুকে খােদার ভাষা বলে তামিজ করে। আর একজন লিখেছেন, “কোরাণ শরীফ” উর্দুতে তরজমা হয়েছে অতএব উর্দুরও কিম্মত আরবীর চেয়ে এদিক দিয়ে কম নয়। কিন্তু তিনি কি জানেন না যে, “ কোরাণ শরীফ” উর্দু, বাংলা, ইংরেজী, জার্মানী প্রভৃতি অনেক ভাষায়ই তরজমা হইয়াছে ? তার কথার মূল্য কতটুকু তিনি বুঝিয়া দেখুন।
সকল দেশের আইনে কোন বিষয়ে মতানৈক্য হইলে ভােট নেওয়ার রেস্ত আছে, ভাষা নির্বাচনে ভােট নেওয়া যায় না কি?
সহযােগী “মর্নিং নিউজ” আদা-পানি খেয়ে নেমে গেছেন উর্দুর পক্ষে। উহার শ্রাদ্ধ শান্তি হওয়া পর্যন্ত যে ইনি ক্ষান্ত হবেন না, এদেশের লােক তা ভাল করেই জানে। কিন্তু টাকা ও ক্ষমতার বলে কাম ফতে করার দিন আর নেই। জনবল চাই, জনগণের সাপাের্ট পেতে হলে জনগণের মতামতকে গ্রাহ্য করতে হয়। তাই জনসেবা করাইকি সহযােগীর কৰ্য্য নয়?
ঢাকা প্রকাশ
২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫১
পৃ. ৩
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত