You dont have javascript enabled! Please enable it! 1947.09.24 | পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভে আজ পাকিস্তান খণ্ডিতরূপে দুইভাগে বিভক্ত হইলও আমরা ইহার অধিবাসীরূপে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য দ্বারা ইহাকে সর্বপ্রকার উন্নতি ও শান্তির পথে বিশ্ববাসীর সম্মুখে আদর্শনীয় রাষ্টরূপে গড়িয়া তুলিব ; ইহাই হইবে আমাদের প্রধান কর্তব্য, এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সংগঠন, উন্নতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেকটি দেশবাসীর আন্তরিক প্রচেষ্টাই সব্বাগ্রে প্রয়ােজন এবং রাষ্ট্র নায়কগণকে এমনভাবেই সকলদিক বিবেচনা করিয়া, প্রত্যেকটি কাৰ্য্যে যাহাতে দেশবাসীর পূর্ণ সমর্থন থাকে, তৎপ্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে। আইন-কানুন প্রণয়নে সৰ্ব্বদিকে লক্ষ্য রাখা যেমন : প্রয়ােজন, তদপেক্ষা বেশী প্রয়ােজন দেশবাসী সৰ্ব্ববিষয়ে সহজ ও সরলভাবে জীবনযাপনের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সর্বকার্যের সঙ্গে সর্বশ্রেণীর তেমনি সরল ও সহজভাবে সহযােগিতায় ভাবের আদান-প্রদান। রাষ্ট্রভাষাই এক্ষেত্রে এই সকল প্রচেষ্টাকে সাফল্যমণ্ডিত করার প্রধান সহায়ক হইবে। পূর্ব পাকিস্তানবাসী সৰ্ব্বশ্রেণীর লােকেরই মাতৃভাষা বাংলা এবং সর্বপ্রকার ব্যবহারিকভাবে বাংলা ভাষাই এদেশের প্রত্যেকটি লােকের আজীবনের সম্বল। সুতরাং এদেশের সর্বকার্যেই সাধারণতঃ বাংলা ভাষার ব্যবহার না থাকিলে কোন প্রকারেই দেশবাসীর সঙ্গে সহজ ও সরলভাবে ভাবের আদান-প্রদান সম্ভব হইতে পারে না। শুনিতেছি উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হইবে। অবশ্যই পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ স্থলেই উর্দু ভাষার প্রচলন কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি হাজারের মধ্যে দুইজন মুসলমান এবং একজন হিন্দুও উর্দুভাষা সামান্য রূপেও জানেন কিনা সন্দেহ। নতুন ভাবে ইহা শিখিয়া লইতে কয়েক বৎসর সময়ের দরকার। বাংলাদেশের অধিকাংশ লােকই অশিক্ষিত ও কতক অর্ধশিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত লােকের সংখ্যা খুবই কম। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রভাষা সম্পূর্ণ নূতন হইলে, দেশের প্রত্যেকটি লােকই সেক্ষেত্রে অশিক্ষিত বলিয়া গণ্য হইবে, বিশেষতঃ সৰ্ব্বপ্রকার কাৰ্য্যেই প্রত্যেকটি লােকের বিশেষভাবে অসুবিধার সৃষ্টি হইবে। তদুপরি এই সকল ভাষাগত অশিক্ষার দরুন উপযুক্ত ব্যক্তির পক্ষেও চাকুরী এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হইবে। রাষ্ট্রভাষা উর্দুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখিতে হইলে রাজকাৰ্য্য ও ব্যবসাদির ব্যাপারে বাংলা ভাষায় অনভিজ্ঞ অবাঙ্গালী ছাড়া আর কোন উপায় থাকিবে না। ইহাতে উভয় পক্ষেই নানারূপে অসুবিধার সৃষ্টি হইয়া কাজ-কর্মের শৃঙখলা ব্যহত হওয়ার যথেষ্ট আশকা আছে। বিশেষতঃ এই সকল অসুবিধায় পড়িয়া রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে দেশবাসীর আন্তরিতার যে অভাব ঘটিবে, ইহা নিতান্তই অবাঞ্ছনীয়। কাজেই রাষ্ট্রভাষা সম্পকে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে রাষ্ট্রনায়ক মহােদয়গণকে এ বিষয়ে সৰ্বদিক বিবেচনা ও লক্ষ্য করিয়া দেখিবার জন্য আমরা সনিৰ্ব্বন্ধ অনুরােধ জানাইতেছি এবং বাংলা ভাষাকেই পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে প্রার্থনা করিতেছি।
ইতি
ঢাকা প্রকাশ
২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭
পৃ, ২

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত