You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভাষার গােলযােগে দাঙ্গা

বাংলা কি উর্দুভাষা রাষ্ট্রভাষারূপে পরিগণিত হইবে তাহা লইয়া গত পরশু শুক্রবার কয়েকদল মুসলমানের মধ্যে হাঙ্গামা হইয়া গিয়াছে। ফলে প্রায় ২০জন আহত হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ। হাঙ্গামার পরে বাঙ্গালী মুসলমানদের এক বিরাট জনতা সরকারী দপ্তরখানা ও রমনা এলাকা পরিভ্রমণ করিয়া ও বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে অবিলমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বলিয়া গ্রহণ করিবার দাবী জানায়।
শুক্রবার দিন ভাের হইতে কয়েকজন মুসলমান মােটরবাসযােগে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করিবার দাবী জানাইয়া বিভিন্ন রাস্তা পরিভ্রমণ করে। এই সকল বাস রমনাস্থিত পলাশী ব্যারাকের মুসলমান সরকারী কর্মচারীদের কোয়াটারের নিকট উপস্থিত হইলে হাঙ্গামা বঁধিয়া যায় এবং ইটপাটকেল ছােড়া আরম্ভ হয়। দুইদল রাষ্ট্রভাষা সমর্থকদের মধ্যে আরও কয়েক স্থানে হাঙ্গামা হয়।
সহযােগী ইনছাফ প্রদত্ত বিবরণ
গতকল্য মধ্যাহ্নে ঢাকা শহরে যে রক্তের খেলা চলিয়াছিল তাহা খুবই নিন্দনীয় ও শােকাবহ। ‘মুকুল’ নামক একখানা মােটর বাসে মাইক্রফোন ইটপাটকেল, লাঠিসােটা ও দুরী তলােয়ার লইয়া একদল লােক উর্দুকে বাংলার রাষ্ট্রভাষা করিবার জন্য শ্লোগান দিতে থাকে। হ্যাবিলের সারমর্ম এই —
উর্দু মুসলমানের ধর্মীয় ভাষা। যে এই ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলিবে সে কাফের। ঐ ধরনের কাফের বা বিধর্মীদিগকে শায়েস্তা করিতে হইবে ও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিতে হইবে।
এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট দণ্ডায়মান ছাত্রদের মধ্যে কেহ কেহ হ্যাণ্ডবিলের ভাষা সম্মন্ধে আপত্তি করে। সামান্য কিছু বাক-বিতণ্ডার পর প্রচারকারীগণ উপস্থিত ছাত্রদিগকে আক্রমণ করিয়া কয়েকজনকে গুরুতররূপে মারপিট করে। অতঃপর উক্ত বাস আরােহীগণ উত্তেজনাপূর্ণ শ্লোগান দিতে দিতে এবং বাংলা ভাষার সমর্থকদিগকে গালাগালি করিতে করিতে পলাশী ব্যারাকস্থ মেডিকেল হােষ্টেলের দিকে আসে। ব্যারাকের বাহিরে দণ্ডায়মান দুইজন মেডিকেল ছাত্র তাহাদের শ্লোগানে আপত্তি করিলে তাহাদিগকে হামলা করিয়া ব্যারাক পর্যন্ত তাড়াইয়া নেয়া হয়। ব্যারাকের সমস্ত ছাত্র বাহির হইয়া আসিলে তাহাদের উপর লাঠি ও তলােয়ার নিয়া আক্রমণ হয়। এই সময় ছাত্রগণ ইটপাটকেল ছুড়িতে আরম্ভ করে এবং অনেকক্ষণ ধরিয়া দুই পক্ষের মধ্যে ইট ছােড়াছুড়ি হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং হােষ্টেলের ছাত্রগণ ইতিমধ্যে বাহির হইয়া আসে এবং আক্রমণকারীগণ বাসে করিয়া চকের দিকে চলিয়া যায়। পরে বাস, ট্রাক প্রভৃতিতে করিয়া সশস্ত্র গুণ্ডা আমদানী হইতে থাকে। এই আক্রমণকারী দল কয়েক ভাগে বিভক্ত হইয়া পলাশী ব্যারাক, ইঞ্জিনিয়ারিং হােষ্টেল প্রভৃতি আক্রমণ করে। কয়েকজন ছাত্রও গুরুতররূপে আহত হয়। আহতদিগকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে।
পূর্ববঙ্গ সরকারের কর্মচারীদের এক সভায় একজন নারী, বহুছাত্র এবং সরকারী কৰ্মচারীদের উপর গুণ্ডাদল যে আক্রমণ চালায় তাহার তীব্র নিন্দা করা হয়। সভায় বাংলাভাষাকে পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা বলিয়া গ্রহণ করিবার দাবী গৃহীত হয় এবং বাংলা বা উর্দু ভাষার প্রবর্ত্তনের জন্য যে সকল গুণ্ডামী করা হইয়াছে তাহার প্রকাশ্য তদন্ত দাবী করা হয়।
ঢাকা প্রকাশ
১৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
পৃ, ২

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!