আন্দোলনে হিন্দুরা নাই
গত ১৩ই মার্চ করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে বিরােধীদলের নেতা শ্রীযুক্ত শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেন যে, ঢাকায় গত বৃহস্পতিবারের লাঠি চালনা। সম্পর্কে আমি পূর্ণ বিবরণ পাই নাই। কিন্তু আমি জানি, ঢাকায় ভাষার প্রশ্ন লইয়া বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা চলিতেছিল। কিছুদিন পূর্বে বাঙ্গালী মুসলমানরা যখন সেক্রেটারীয়েট দপ্তরে আসিয়া তাহাদের দাবী জানায়, তখন এক ঘটনা ঘটে। আমি দৃঢ়তার সহিত বলিতে পারি যে, ঐ আন্দোলনে বাঙ্গালী হিন্দুরা কোন অংশগ্রহণ করে নাই। মিঃ ফজলুল হক আহত হইয়াছেন সংবাদে আমি দুঃখিত। ইহা হইতে মনে হয় যে, বাংলা যাহাতে রাষ্ট্রভাষা হয় তজ্জন্য বাঙ্গালী মুসলমানগণই আন্দোলন করিতেছিলেন, কারণ তাহারা উর্দুর সহিত পরিচিত নহেন। অবশ্য বাংলা যদি প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা হয় এবং শিক্ষার বাহন হয়, তাহা হইলে বাঙ্গালী হিন্দুরা খুবই প্রীত হইবেন সন্দেহ নাই। পূর্ববঙ্গ এদেশের মুসলমানদের মধ্যে কোনরূপ বিভেদ সৃষ্টি করা হিন্দুদের উদ্দেশ্য নয়, শাসনতান্ত্রিক অসুবিধা সৃষ্টি করা কিমা হট্টগােল সৃষ্টি করা হিন্দুদের উদ্দেশ্য নহে। ভাষার প্রশ্ন লইয়া ইতিমধ্যেই পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে দুই দল হইয়া গিয়াছে। মুসলমানগণ মনে করেন যে, তাহারা অবহেলিত হইতেছে। তাহাদের উন্নতির জন্য তাহারা কোনই উৎসাহ পাইতেছে না। বাঙ্গালী মুসলমানগণের মনােভাব উপলব্ধি করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের। যথা সময়ে যথােচিত কাজ করাই উচিত।
ঢাকা প্রকাশ
১৫ মার্চ, ১৯৪৮
পৃ. ১
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত