সৰ্বাত্মক ধর্মঘট
বাঙ্গালাভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমূহের অন্যতম ভাষা বলিয়া ঘােষণা করিবার দাবীতে যে সর্বাত্মক ধর্মঘট ঘােষণা করা হইয়াছিল তাহার ফলে গত বৃহস্পতিবার শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। বিভিন্ন বিদ্যায়তনগুলি বন্ধ ছিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশগুলি ছাত্র শূন্য ছিল। বিভিন্ন গভর্নমেন্ট অফিসের সম্মুখে মুসলিম ছাত্র ও নাগরিকগণ পিকেটিং করেন। পিকেটিংরত ছাত্র ও নাগরিকদের উপর পুলিশ বেয়নেট ও লাঠি চার্জ করে এবং তাহাতে সমগ্র বাংলার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মােঃ ফজলুল হক সাহেব সহ প্রায় দুইশত মুসলমান আহত হন। এই দিনের ঘটনা সম্পর্কে কয়েকশত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হইয়াছিল, পরে উহাদের অধিকাংশকেই ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে।
এই দিন সকালে শতাধিক লােকের এক জনতা কমিউনিষ্ট পার্টি এবং রেল রােড ওয়ার্কাস ইউনিয়নের অফিস আক্রমণ করেন। অফিসের আসবাবপত্র ভাঙ্গিয়া কাগজপত্রে আগুন লাগাইয়া দেয়। নবাবপুরের একটি পুস্তকের দোকানের বহু মূল্যবান পুস্তক নাকি লুণ্ঠিত হইয়াছে।
আলােচ্য সর্বাত্মক ধৰ্ম্মঘটের ব্যাপারে সংখ্যালঘুদের দোকান বন্ধ নিয়া নানারূপ আশঙ্কায় সময় কাটিয়াছে। একদল উত্তেজিতভাবে বলিতেছিল যে, যদি দোকান না খােলা হয় তবে দোকানের তালা ভাঙ্গিয়া দোকানে আগুন লাগাইয়া দেওয়া হইবে। অপর দল ঠিক তাহার বিপরীতভাবে বলিতেছিল যে, যদি দোকান খােলা হয় তবে দোকানের অনিষ্ট হইলে কেহ দায়ী হইবে না।
নারায়ণগঞ্জে হরতাল
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমুদ্দিন মসলিসের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত যুক্ত সাব কমিটি যে সর্বাত্মক ধৰ্ম্মঘট পালনের আহ্বান জানাইয়াছিলেন তদানুযায়ী গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ পূর্ণ হরতাল প্রতিপালিত হইয়াছে।
ঢাকা প্রকাশ
১৫ মার্চ, ১৯৪৮
পৃ. ২
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত