২৩ অক্টোবর ১৯৭১
শেষের সে দিন কী ভয়ংকর ভাইসব- শেষের সেদিন কী ভয়ংকর। স্কুরুপ অক্করে টাইট। বাংলাদেশের বিচ্ছুগুলা আইজ-কাইল খােদ ঢাকা টাউন আর তার আশপাশেই স্কুরুপ টাইটের কারবার শুরু করছে। ঠ্যাটা মালেক্যার ছিক্রেট এ্যাডভাইসার মােনাইম্যার খতম তারাবী করণের পর অখন পাকিস্তানের ফরিন মিনিস্টার এ্যালেন বেরী ড্রাম ফ্যাক্টরি হরিবল হক চৌধুরীর স্কুরুপ টাইট করতাছে। মওলবী সা’বে ব্যারিস্টার হইলে কি হইবাে, আসলে একজন কড়া কিছিমের ব্যবসায়ী। আইজ থনে তেইশ বচ্ছর আগে যখন এই হরিবল হক চৌধুরী বঙ্গাল মুলুকের উজিরে খাজানা আছিলাে, তখন এমন মাল-পানি। বানাইলাে যে বেডারে খুনী নুরুল আমীনের মতাে মানুষও উজির সভার থনে লাখাইয়া খেদাইলাে। আর পাকিস্তান গভর্ণমেন্ট দুর্নীতির জন্যি EBDO কইর্যা থুইলাে। পেরধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানে কইলাে আমরাও তাে’ মাল-পানি কামাইতাছি, কই কেউ তাে আন্তাজ করতে পারে না। আর তুমি হরিবল হক চৌধুরী ঢাক-ঢােল পিডাইয়া হরির লুট করতাছাে? যাও তােমারে EBDO কইর্যা থুইলাম।
হেই চৌধুরী সা’বে মন্ত্রী থাকনের টাইমে মাইনষেরে লাইসেন্স দেওনের নামে আলহেলাল প্রিন্টিং প্রেসের শেয়ার বেচইন্যা পয়সা দিয়া সদর ঘাটে এই সাদা চামড়ার সাবের লগে একটা চুক্তি করছিল, এই কামের লাইগ্যা Stanely সা’বে এর মাইদ্দে মােলবার বঙ্গাল মুলুকে যাতায়াত করছে। এই বার বাংলা মুলুকে লড়াই শুরু হওনের পর আকা ইসলামাবাদ থাইক্যা খবর আইলাে বঙ্গাল মুলুক Normal হইয়া গেছে। এলায় আপনে আবার কামে হাত দেন। Stanely সা’বে কি খুশি? অক্করে হাওয়াই জাহাজে উড়াল দিয়া ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় আইছিলাে। হের পর দ্যাহে কী? কেইস খুবই খারাপ। খােদ ঢাকা টাউনের মাইদ্দেই বিচ্ছুগুলা ফুটফাট কারবার চালাইতাছে। মফস্বলে যাওন আর মউতের লগে মােলাকাত একই কথা।
Stanely সা’বে নিজেই কি কইছে হােনেন। ঢাকা এয়ারপাের্টে কাস্টমূস-ওয়ালারা নাইক্যা। মছুয়া মেলেটারিরা হেই কাম করতাছে। আর সার্চিং মানে সার্চিং। ফুল প্যান্টের মাইদ্দে পর্যন্ত হাত দিয়া মালপত্র দেখতাছে। এয়ারপাের্টের চাইরাে মুড়া বিমান ব্বিংসী কামান আর বাংকারগুলার মাইদ্দে মচুয়াগুলা থর থর কইরা কাঁপতাছে। ঢাকা টাউনে সার্চিং, ডর দেখান, চেক পােস্টে পাঞ্জাবি পুলিশ, রাজাকার, মেলেটারি হগগল কিছু মিইল্যা একটা ক্যাডাবেরাস অবস্থার সৃষ্টি হইছে। Stanely সা’বে আরাে কইছে রেল লাইন নাইক্যা, ঢাকার বস্তিগুলা সাফ, শহীদ মিনার গায়েব, মন্দির হাওয়া, মসজিদ গুড়া। টাউনের মাইদ্দে কাগাে ডরে যেনাে পাঞ্জাবি পুলিশ বেয়নেটওয়ালা জিনিষপত্র লইয়া ঘুরতাছে, বড় গাড়িতে মেলেটারিরা টহল দিতাছে, বহু বাংকার তৈরী করছে, সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাট ধলী- মাইনষে কথা কইতে ডরায়। এইডাতাে Normal কারবারের নমুনা হইতে পারে না।
এই আমেরিকান সা’বে ‘ঢাকার অবস্থা দেইখ্যা ঠিকই আন্দাজ করছে, বিক্ষুগুলার নমুনা কারবারেই যখন মছুয়াগুলার কাপড় বাসন্তী Colour হইছে তখন আসল কাম শুরু হইলে না জানি কি অবস্থা হয়? এর থাইক্যা আগে কাইট্যা পড়নই ভালাে। এরপর এই মার্কিনী সা’বে বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার থনে ভাইগ্যা যাইয়া ট্রাংককলে Resign করছে। খালি কইছে, বাংলাদেশ পুরা স্বাধীন হইলে আবার আমু- তার আগে আগে না। ও মাই গড।
ছক্ক মিয়া ফাল দিয়া কইলাে, ভাইসাব এই আমেরিকান সা’বে একটা জায়গায় মিছা কথা কইছে। আইজ ছয়মাস ধইর্যা ঢাকা টাউনে যে অবস্থা দেখতাছি তার একটুও Change হয় নাইক্যা। মানুষ মার্ডার, বলাৎকার, মেলেটারির টহল, রাজাকারগাে লুটপাটে আর বিষ্টুগুলার কায়কারবার এইগুলাই তাে ঢাকা টাউনে Normal ব্যাপার। আসলে আমেরিকান সা’বে Normal ঢাকা দেইখ্যাই ডরাইছে।
এই দিক্কার কারবার হুনছেন নি? ছয়মাস Time হাতে পাওনের গতিকে এর মাইদ্দেই হাজারে হাজার বিক্ষুর ট্রেনিং Complete হওনের খবরে মছুয়াগুলা অক্করে পাগলা হইয়া উঠছে। ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা একটা মাস্টার প্ল্যান বানাইছে। এই প্ল্যানে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকারে চাইর ভাগে ভাগ করছে। কারণ? বিজুগুলার লগে পাইট করনের চিরকিতের লাইগ্যা রাস্তাঘাট বানাইতে হইবাে- রেল লাইন বহাইতে হইবাে- মেরামতির কারবার করতে হইবাে। বিক্ষুগুলার হাতে গাবুর মাইর খাইয়া ভাগনের টাইমে এইসব মেরামত করা রাস্তাঘাট আর রেল দিয়া আইস্যা বাঙালি Public মার্ডার করণ লাগবাে। একদিকে বাঙালি আরেক দিকে জাতিসংঘ ও মার্কিনীগাে মাইদ্দে ধান্ধা লাগনের লাইগ্যা কইতে হইবাে এই রাস্তাঘাট দিয়া ভূখা বাঙালিগাে লাইগ্যা খাবার পাঠামু। কি সােন্দর আরাে বাঙালি মারণের লাইগ্যা ঠ্যাটা মালেক্যা-পিঁয়াজীর বুদ্ধি। আবার গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। রাস্তা মেরামতের আগেই পশ্চিম পাকিস্তান বিদেশ থাইকা ট্রাক আনতাছে।।
আগের ট্রাকগুলা বিচ্ছুরা গায়েব কইরা ফেলাইছে। নতুন আমদানী ট্রাকে কইরাই মছুয়াগুলা গেরামের মাইদ্দে ঢােকনের বুদ্ধি করছে। ঢাঁই-ই-ই কি হইলা, কি হইলাে? আরাে দুই চাইর খান যে ব্রিজ-কালভার্ট আছিলাে বিচ্ছুগুলা হেইসব উড়াইয়া দিলাে। একটা কথা খেয়াল রাইখেন- যেসব গেরামে যাওনের লাইগ্যা রাস্তাঘাট, রেললাইন নাইক্যা, হেইসব গেরামের লােক একটু শান্তিতে থাকবেন। মছুয়াগুলা হেই দিকে আইতে পারবাে না আর কামটুকু করনের লাইগ্যা তাে বিচ্ছুরাই রইছে। ছয়মাস ধইর্যা বিচ্ছুগুলার টেস্টিং কারবারেই পঁচিশ হাজার মছুয়া আজরাইল ফেরেশতার দরবারে গেছেগা। বাকিগুলার উপর আজরাইল আছর করছে।
ঐ দিকে হুনছেন তাে। বঙ্গাল মুলুকের ক্যাডাবেরাচ অবস্থার ছিক্রেট রিপোের্ট পাইয়া জুলফিকার আলী ভুট্টো আইবাে না বইল্যা ঠিক করছে। সেনাপতি ইয়াহিয়ার একই অবস্থা। ব্যাডায় অখন শরাবন তুহুরার মাইদ্দে সাঁতার কাটতাছে। এর মাইদ্দে মওলবী সাবে আবার একটা ট্রিক্স করছে। জোট নিরপেক্ষ দেশগুলার যে সম্মেলন শুরু হইতাছে, হেই সম্মেলনে join করণের লাইগ্যা কি কান্দন! আমরা সিয়াটো, সেন্টো, আর.সি.ডি.-র মেম্বার হইলে কি হইবাে? আমরা বহুরূপী। আমাগাে দেশে সামরিক জান্তা থাকলে কি হইবাে- আমরা ঠ্যাটা মালেকারে দিয়া গণতন্ত্র বানাইছি। ইয়াহিয়া-পিয়াজী খালি গার্জিয়ান হইয়া আছে। বঙ্গাল মুলুকের গণতন্ত্র অক্করে গেন্দা পােলা কিনা খালি হারু পাট্টি দিয়াই চলে- হেইখানে Election-এ জেইন্যা ব্যাডারা দেশের দুশমন। খালি বিক্ষুগুলাই মহা গ্যানজাম কারবার শুরু করছে।
হারু পাটির লােকজনগুলা এইভাবে মন্ত্রী হইতাছে দেইখ্যা আমাগাে চাটিগার ফ.কা. চৌধুরীর মুখ দিয়া অক্করে লালা পড়তে শুরু করছে। ব্যাড়ায় ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে কইছে সেন্টারের মাইদ্দে ন্যাশনাল কোনােই রাস্তা নাইক্যা। মিঠাই-এর দোকানের সামনে চাম উঠা জীবগুলারে লাখাইলেও যেমন কেউ কেউ আওয়াজ কইর্যা বার বার আরাে লাথি খাওনের লাইগ্যা ফিইর্যা আসে, জুলফিকার আলী ভুট্টোর হেই রকম অবস্থা হইছে। বেডায় আবার সেনাপতি ইয়াহিয়ার লগে মহব্বত করতে শুরু করছে। এইবার খুনী ইয়াহিয়া ভুট্টোরে কায়রাে-প্যারিস-লন্ডনে যাওনের Order দিছে। লগে লগে মওলবী সা’বে তার পােির পথে বহাইয়া গ্যাছেগা।
হ-অ-অ-অ এইদিকে বলে খুলনার সবুরের Boy Friend আমজাইদ্যা হেইদিন অল্পের জন্যি বাইচ্যা গেছে। যেইদিন বিক্ষুরা মােনাইম্যারে শেষ করলাে, হেইদিন মােনাইম্যার বাড়িতেই আছিলাে। কিন্তুক বিচ্ছুগুলা হ্যারে ঠিকমতাে চিনবার পারে নাইক্যা।
আল্লায় সারাইছে! One man party মানে কিনা একজনের পার্টি কে. এস.পি. আর করাচীর দাউদ গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজের দালাল ছলু মিয়া- জেরাছে চুট গিয়া- অপির জন্যি হায়াত পাইছে। রয়টারের এক খবরে কইছে মিনিস্টার মােহাম্মদ ছলু মিয়া যখন হাওয়া গাড়িতে যাইতেছিল, তখন আঙ্কা রাস্তার মাইদ্দে দুইডা মাইন ফাটলাে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের জন্যি ছলু মিয়া বাইচ্যা গেছে। শেষে মওলবী সা’বে অক্করে টাঙ্গাইল যাইয়া হাজির। বেডায় কি কাঁপন! বুকের মাইদ্দে অক্করে চেঁকির আওয়াজ।
হ-অ-অ-অ এই দিকের খবর হুনছেন নি? পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা আর সিলেট সেক্টরে আইজ-কাইল গাজুরিয়া বাড়ি শুরু হইয়া গেছে। কসবা-শালদিয়া মুক্তিবাহিনীর কব্জায়। কুমিল্লা টাউন ধুয়া। বাড়ির চোটে মছুয়াগুলার কাপড় হেই জিনিষ হওনের গতিকে নিজেরই এয়ারফোর্স আইন্যা বােম্বিং করছে। মুক্তিবাহিনীর হামলায় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে অখন মহরমের মাতম পইড়া গেছে। জেনারেল পিয়াজী নিজে হাজির থাইক্যা লাড়াই চালাইয়াও অবস্থা কুফা দেইখ্যা ঢাকায় ভাইগ্যা গেছে। এ্যঃ এ্যঃ! কেইস কি? বিচ্ছুগুলার কোবানীর মুখে কয়েক হাজার রাজাকার এর মাইদ্দেই বর্ডার পার হইয়া আরে দৌড় রে দৌড়। মা চাই’ মহারাজ কইয়া ফরিনে যাইয়া ছারেন্ডার করছে। খালি কইতাছে বিক্ষুগুলা ডেইগারাস, তােমরা Arrest করলে জানে বাঁচমু। আমরা তাে লাড়াই করতে চাই না- মছুয়াগুলার ডরের চোটে খালি আমাগাে সামনে ঠেলতাছে। একটা সিংহাতিক গ্যাড়াকলের মাইদ্দে পইড়াই আমাগাে এই অবস্থা হইছে। হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম- দালাল রাজাকার মছুয়ারা এখনও টাইম আছে। না হইলে ‘শেষের সেদিন কি ভয়ঙ্কর ভাইসাব, শেষের সেদিন কি ভয়ঙ্কর।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল