অক্টোবর ১৯৭১
খুঁটির জোরে বকরি কোঁদে। বেডা ছােলতাইন্যা অখন কোন্ পাড়তাছে। আঃ হাঃ ছােলতাইন্যারে চিনতে পারলেন না? ইসলামাবাদের সামরিক জান্তার ফরিন ছেক্রেটারি ছােলতান মােহাম্মদ। হেইই যে পয়লা তেলের ডেরাম লইয়া মাখন বাজীর লাইগ্যা মস্কো গেছিলাে আর ধাওয়া খাইয়া লগে লগে ওয়াপস্ আইছিল। এরপর সেনাপতি ইয়াহিয়া খান তার গিলাসের দোস্ত লাড়কানার লাড়কা জুলফিকার আলী ভূট্টোরে পিকিংএ পাড়ানাের সময় ছােলতাইন্যারে ফর্দি হাতে লগে দিছিলাে আর ব্যাডারা সব খালি হাতে মাথা নিচু কইর্যা ফেরৎ আইলাে- হেই ছােলতাইন্যায় কথা কইতাছি।
কী হইলাে? কী হইলাে? ঠাস্ কইর্যা আওয়াজ হইলাে কীর লাইগ্যা? পিকিং-এর আসল রিপাের্ট পাইয়া ছদর ইয়াহিয়া চিত্তর হইয়া পইড়া গেছিলাে। লগে লগে ছােলতাইন্যা আইস্যা কইলাে, ছ্যার, দুইডা কড়া কিসিমের কাম করতাছি। নতুন মামু আমাগাে Help দিবাে কইয়া জোর প্রােপাগান্ডা করণের অর্ডার দিতাছি। রেডিও গায়েবী আওয়াজ, খবরের কাগজ ছাড়াও আমাগাে নেতারা পর্যন্ত এ্যার মাইদ্দেই ভ্যা ভ্যা করতে শুরু করছে। দুরা, আল্লায় দিলে আমারে একবার আমেরিকা সফর করতে দেন। মস্কোপিকিং-এর Progress রিপাের্ট দেখলে যদি নিক্সন সাবের দিলের মাইদ্দে কিছু রহম পয়দা হয়। ব্যাস, সেনাপতি ইয়াহিয়ার মােটা মােটা লােমওয়ালা হাতের মাইদ্দে চুমা খাইয়া ফরিন ছেক্রেটারি ছােলতাইন্যা সাদা চামড়া কবীগাে কথা চিন্তা করতে করতে অক্করে নিউইয়র্ক যাইয়া হাজির। মওলবী সা’বে পয়লাই যাইয়া তােপের মুখে পড়ছে। মার্টিনি খাইয়া ছােলতাইন্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে আরে তােলামীরে তােলামী। আকা ঘং ঘং কইর্যা কাইন্দ্যা ভরাইলাে। এইডা কি কথা? বাঙালি রিফিউজিরা ইয়াহিয়ার পাকিস্তানে ফেরত আইবাে না- হেরা বলে শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরত আইবাে? আমরা কত ডাকাডাকি করতাছি কত রিফিউজী Recepton সেন্টার খুলতাছি, তবু কী রিফিউজিরা ফেরত আইবাে না? এদিকে যে রাজাকাররা লুট পাটের আশায় দিন গুনতে গুনতে অক্করে ক্ষেইপ্যা উঠছে। থুক্কঃ। না-না-না এই রাজাকারের লুটপাটের অংশটা কাইট্যা দেন। এইটুক আমি কই নাইক্যা। এরপর ছােলতাইন্যায় গিলাসের থনে ঢক ঢক্ কইর্যা কি জানি খাইয়া আবার শুরু করলাে, “সাংবাদিক দোস্তরা আমার, আপনারাই বিচার কইর্যা দেখেন ছদর ইয়াহিয়া বার বার কইর্যা কইতাছে যে পাবলিকের হাতে ক্ষেমতা হস্তান্তর করবাে, আর হের লাইগ্যা অখন বঙ্গাল মুলুকে ইলেকশন চলতাছে। কিন্তু তবুও কিসের লাইগ্যা দুনিয়ার মাইনষে সামরিক জান্তারে বিশ্বাস করতে পারছে না। আগের ইলেকশনডা আমরা ভুলে কইর্যা ফালাইছিলাম। হেই জন্যিই অখন দোবারা কারবার করতাছি। কেমন সােন্দর আমাগাে জিনিষপত্র সব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় Elect হইতাছে। ভােটের গেনজাম নাই, পােলিং অফিসের বালাই নাই, গেরামে গেরামে ঘােরাঘুরি নাই, ভােটার লিস্টির পর্যন্ত দরকার নাই। আমাগাে মালেরা খুবই Popular কিনা। তাই এই রকম একটা কারবার হইতাছে। খালি বিক্ষুরাই আমাগাে কদর বুঝলাে না। খালি ফুটফাট কারবার করতাছে। এর মাইদ্দেই কয়েকটা মালেরে সাবাড় করছে। আঃ হাঃ আপনারা খুব বেশি হাসাহাসি করতাছেন। এই জায়গায়ই সাংবাদিক সম্মেলন খতম কইরা দিলাম।
সেনাপতি ইয়াহিয়ার তেলেসমাতি মার্কা গণতন্ত্রে বঙ্গাল মুলুকে যে ভােগাছ ইলেকশন হইতাছে, হেইডার ব্যাপারে একটা ক্যাডাবেরা খবর আইছে। বি বি সি সংবাদদাতা রবসন ঢাকার থনে এক জব্বর খবর পাডাইছে। ভােটাভুটি ছাড়া হগ্গল সিটেই কাইন্ঠামাে কইর্যা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় Elect হইয়া যাইতাছে দেইখ্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া খান পর্যন্ত ভিমূরি খাইয়া বইছে। হেইর লাইগ্যা আস্তে কইর্যা অর্ডার দিছে বাকী। মালগুলার Elect হওনের এলান বন্ধ কইর্যা দাও। আর মওলবী সা’বে বুড়া বিল্পী নুরুল আমীন সাবের উপর কি রাগ? কী পরিমান মালপানি খাইছাে যে, বঙ্গাল মুলুকে পিপলস পাট্টির কোনাে অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও হেতেনরা ছয় ছয়ডা সিট কেমতে কিনলাে? ঠিক আছে আমি জেনারেল রাও ফরমান আলীরে দিয়া Enquiry করাইতাছি। তখন বুঝবা ঠেলাডা।
এইদিকে ঢাকায় বইস্যা মেজর সালেক নিজ কলের সূতায় প্রস্তুত কাপড়ের কারবার। কইর্যা বইছে। নােয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতা মালেক উকিলের নাম দিয়া করাচীতে ভােগা সাংবাদিক সম্মেলন করাইয়া লাহুরের ‘ইমরােজ’ কাগজে ফলস রিপাের্ট ছাপাইছে। এরপর হেই খবরটা মাওলানা আখতার ফারুকার সংগ্রাম’ কাগজের মাইদ্দে ১৬ই ভাদ্র তারিখে বাংলায় ছাপাইবার ব্যবস্থা করছুইন। নােয়াখালীর অশান্তি কমিটির সেক্রেটারি ছৈয়দ শামসুল আলম কী খুশি? বেড়ায় এই রিপাের্টডা আবার হ্যান্ড বিল। কইর্যা বিলি করছে। আর এইদিকে মালেক উকিল সা’বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি। হিসেবে নানান দেশে ঘুইর্যা আবার মুজিবনগরে আইস্যা বিচ্চুগাে শামিল হইছে।
হ-অ-অ-অ এইদিককার কারবার হুনছেন নি? বিচ্ছুগুলা আইজ-কাইল দমাদম মস্ত কা লান্দর’ কাম শুরু কইরা দিছে। এতাে কইর্যা আংরেজ গাে না করলাম বঙ্গালা মুলুকে ব্যবসা বাণিজ্যডা দুই চাইর মাস একটু ক্ষ্যান্ত দাও। নাঃ- তাগাে চিরকিৎ হইছিল। সিটি অব সেন্ট আলবাস’ নামে আংরেজগাে একটা জাহাজ হাঁটি হাঁটি পা-পা কইর্যা যেই চালনা বন্দরের কাছে গেছে, অমনেই শুরু হইলাে গুম গুমা গুম্। কি হইলাে? কী হইলাে? এই বন্দরের বগল দিয়া না মছুয়ারা আছিলাে? তা হইলে বিক্ষুরা আইলাে কই থাইক্যা? ও মাই গড! পােলাপানে তা’ হইলে মছুয়া মাইর্যা সাবাড় করতাছে। এইডা ভিয়েতনাম থাইক্যাও ডেইনগারাস। খবর নাই, পাতি নাই খালি কোবায়া যাইতাছে। এই না কইয়া। আংরেজ জাহাজটা লেংড়াইতে লেংড়াইতে কোনাে মতে কইলকাত্তার দিকে গ্যাছেগা।
অ্যাঃ অ্যাঃ। ঢাকা টাউনে বিক্ষুগুলার কুফা কারবার সামনে চলতাছে। রেডিও গায়েবী আওয়াজের একজন মছুয়া ইঞ্জিনিয়ার পটল তুলছে। বায়তুল মােকারমের সামনে বােমা মাইরা পাঁচজন দালাল হালাক হইছে। ঠ্যাটা মালেকায় ভয়ে অক্করে থরু থর কইর্যা কাঁপতে শুরু করছে। গবর্ণমেন্ট পাবলিসিটির কবি আবুল হােসেন সাব, একটু হিসাব কইরা চইলেন। আপনে যেমন লাগে আইজ-কাইল দৌড়াদৌড়ি বেশি করতাছেন।
এরেই কয় ঠ্যালার নাম জশমত আলী মােল্লা। ঢাকা টাউনে এর মাইদ্দেই ট্রেঞ্চ কাডনের অর্ডার হইছে আর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারগাে বিদেশ সফর বন্ধ হইছে। আল্লাহরে, ইডা কি হলাে রে? আইয়ুব মােনেমের দালাল বগুড়ার খােরশেদ আলমের বলে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে নারে? উই কুটি মরলাে?
হ-অ-অ-অ টাঙ্গাইলে মছুয়ারা আবার বলে লাল বাত্তি জ্বালাইছে। মধুপুরের জঙ্গল থনে দলে দলে কাদেরিয়া বিচ্ছু আইস্যা আরে বাড়ি-রে-বাড়ি! গাবুর বাড়ির চোটে ‘মামু আগে আইল কইয়া, মচুয়াগুলা মির্জাপুর কালিয়াকৈরের রাস্তা দিয়া দৌড়। পাশাপাশি আজরাইল ফেরেশতাও দৌড়াইতাছে। লাশ পড়লেই নাম ঠিকানা Short Hand-এ লিইখ্যা লইতাছে। অক্করে মেজি কারাবার। গেরামের পােলাপানে পর্যন্ত মছুয়া খুঁইজ্যা বেড়াইতাছে। সাত মাস আগে বাঙালিগাে লাশ শকুন চিলরে খাওয়াইছিলা এলায় মছুয়াগাে লাশ কুত্তা-শিয়ালে খাইতাছে।
সাতক্ষীরা-খুলনা, যশাের-কুষ্টিয়া, রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর-রংপুর, সিলেট-সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা-নােয়াখালী, ঢাকা-কুমিল্লা হগল জায়গায় একই কারবার শুরু হইয়া গেছে। আমেরিকার নিউজ উইক’ কাগজে ছাপাইছে যে, বঙ্গাল মুলুকের ৪১২ থানার শতকরা ২৫ ভাগ মানে কিনা একশ’র উপর থানা বিচ্চুগাে হাতে আইস্যা পড়ছে। অঙ্কা ছক্ক অক্করে ফাল পাইড়া উডলাে- এইনা বলে বর্ষার পর মছুয়ারা একহাত দেখায়া দিবাে। অহন তাে দেখি উল্ডা কারবার চলতাছে। যেকোনাে টাইমে যেকোনাে জায়গায় বিক্ষুরা ইচ্ছামতাে কারবার চালাইতাছে। হয় তাে হাজার পঞ্চাশেক বিচ্ছু ময়দানে নামছে, আরও বলে হাজারে হাজার হাতের গুল্লী বানাইতাছে। পাকিস্তানী হানাদার সােলজারগাে যখন বঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে হেই জিনিষ।
করতেই হইবাে, তখন তাড়াতাড়ি করাই ভালাে। ভাই সা’ব যেমন দেখতাছি ঢাকার থনে কাইট্যা পড়নই ভালাে। বিক্ষুগুলা যেই রকম পাগলা হইয়া উঠছে, তাতে মনে লয় দালাল-মছুয়া-রাজাকার এইগুলা মউতের খত পকেটের মাইদ্দে লইয়া খলি উল্ডামুহি একদুই গুণতাছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কোনাে ট্রিক্সই আর খাটতাছে না। হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম- খুটির জোরে বকরি কোঁদে। অঃ হঃ অঃ হঃ হেই খুঁটি অখন ভাইঙ্গা গেছে। মস্কো থনে ধাওয়া, পিকিং থনে খালি হাত- ওয়াশিংটনে ফক্কা।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল