নভেম্বর ১৯৭১
মরছে পাগলায় মরছে। নুরুল আমীন ঠ্যাটা মালেকারে মরণে ডাক দিছে। দুই বুড়ায় মিল্লা কি সােন্দর ঢাকার গবর্ণমেন্ট হাউসের মাইদ্দে বইস্যা হারু পাট্টিগাে মাইদ্দে সিট ভাগাভাগি করতাছে। মাত্রক সাত মাস আগে ভােটের টাইমে পাবলিক যেইসব মালের গতরের মাইদ্দে থু দিছিলাে, নূরুল আমীন-ঠ্যাটা মালেকায় মিইল্লা হেইসব মালপত্র খুঁইজ্যা খুঁইজ্যা বাইর করছে। কোরবাণীর খাসী যেইরকম আড়াই পােচের কারবার করণের আগে গােসল করায়- এইসব হারু মালগা হেইরকম ইয়াহিয়া সাবের তেলেসমাতি মার্কা গণতন্ত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় Elect করাইয়া আহা-রেঃ বিচ্চুগাে লাইগ্যা অক্করে Ready রাখছে। শেরােয়ানী-পাজামা পরা এইসব জিনিষপত্রের তেলতেলা গতরের থাইক্যা জেল্লা মারতাছে। বিচ্চুগাে লুট বই-এর পাতা লিস্টিতে ভইরা গেছে। আইজরাইল ফেরেশতা আবার গােপনে এইসব লিস্টির কার্বন কপি বানাইছে।
চাই-ই-ই-ই। কি হইলাে? কি হইলাে? ঢাকার থনে মাত্র দশ মাইল দূরে একটা হেই জিনিষের উপর বিচ্চুগাে কারবার হইলাে। মুছলমান লীগের সুলতান উদ্দিন খান।
মওলবী সা’বে ঠ্যাটা মালেক্যারে মাল-পানি দিয়া খুনী নুরুল আমীনরে হেই মাল-পানির ছিলিপ দেখাইয়া প্রাদেশিক পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় Elect হইছিলাে। ব্যাস্আজরাইল ফেরেশতায় তারে জাবৃড়াইয়া ধরলাে। আকা আমাগাে বকশি বাজারের চকু মিয়া ফাল দিয়া উঠলাে। ভাইসাব, নুরুল আমীন-ঠ্যাটা মালেইক্যার খুব বুদ্ধি দেখতাছি। একটা ভােগা Election-এর উছিলা কইর্যা পেরতেক জেলার দালাল মহারাজগাে হিসাব ঠিক কইরা দিতাছে। বিক্ষুরাও বগল বাজাইয়্যা ঘষাঘষি অর ফুটফাট কারবার চালাইতাছে। ছক্কর কথাবার্তায় আমি অক্করে থ’। বেডায় নাইড়া মাথা হওনের পর থাইক্যাই দামী দামী বাচি করতাছে।
এইবার হারু মালগাে নমুনা দিলেই বুঝতে পারবেন। পাবনার চোরা মতিন। আহাঃ হাঃ। মতিন তাে বহুত লােকের নাম আছে। কিন্তু চোরা মতিন কইলেই অক্করে চকু বন্ধ কইর্যা সােহাগপুর ট্রান্সপাের্টের চোরা মতিনরে চিনতে কোনােই কষ্ট নাইক্যা। মওলবীসা’বে সত্তর সালের Election-এ আওয়ামী লীগের আব্দুল মােমেন তালুকদারের ৯৬ হাজার ভােটের মােকাবেলায় ৪,৪২০ ভােট পাইছিল । কিন্তুক সাত মাসের মাথায় হেই চোরা মতিন কেমন সােন্দর ঢাকায় বইস্যাই ‘তেলেসমাতি গণতন্ত্রে বিনা। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় Elect হইছে। বিচ্চুগাে লুট বই-এর মাইদ্দে নাম লেখাইতে কি কষ্ট?
বঙ্গাল মুলুক সিট ভাগাভাগি হওনের খবরে লারকানার লাড়কা স্যার শাহনেওয়াজ ভুট্টোর কেতাবী পােলা জুলফিকার আলী ভুট্টো বাইশ লাখ টাকা দিয়া ছয়টা সিট কিইন্যা বইছে। লাহােরের কোহিস্তান কাগজে এই খবর ছাপাইয়া কড়া কিছিমের গাইল দিছে। আর পালের গােদা নুরুল আমীন সা’বে পুরা কেইসডারেই চাপিস্ করণের লাইগ্যা টেরাই। করতেছে। কই না তাে? আমি কিছুই জানি না তাে? বুড়ায় অক্করে সেয়ানা পাগল।
এইরকম একটা অবস্থায় জুলফিকার আলী ভুট্টো সা’বে ছদর ইয়াহিয়ার হাতে চুমা খাইয়া পিকিং সফর কইর্যা আইছে। ডাইল গলে নাই। দুই দ্যাশের মাইদ্দে বাতচিত্ হওনের পর নিয়ম মাফিক যুক্ত বিবৃতি দেওনের যে নিয়ম আছিলাে, এইবার হেই বিবৃতি পর্যন্ত বাইরায় নাই। কিছু থাকলে তাে বারাইবাে। মনে লয় চীন সরাসরি যুদ্ধে জড়াইবার প্রশ্নে হাঃ-‘না’ কিছুই কয় নাই। সেনাপতি ইয়াহিয়ার বােতলের দোস্ত ভূট্টো সা’ব। অক্করে নাঙ্গা হইয়া ওয়াপস্ হইছুইন।
রাওয়ালপিণ্ডি হাওয়াই আড্ডায় খবরের কাগজে রিপাের্টাররা তাইনরে জিগাইলাে, স্যার, কেইস কি? ক্যামন বুঝতাছেন? মাল-পানির লিস্টি কন? সােলজার কবে আইতাছে?’ ভুট্টো সা’ব অক্করে Deaf & Dumb স্কুলের হেড মাস্টার। আমি হগুগল। রিপোের্ট পয়লা ছদর ইয়াহিয়ার কাছে দিমু। একই টাইমে ইয়াহিয়া ইসলামাবাদ থইক্যা। চিল্লাইতাছিলা, বেয়াদারানে ইসলাম; ডরাইয়েন না, ডরাইয়েন না, আমরা Attack করণের লগে লগে নতুন মামু আইবাে- আরাে কত কিছু। আর রেডিও গায়েবী আওয়াজ ইচ্ছামতাে মিছা কথা কইতে কইতে গাইলস্যার মাইদ্দে ফেনা তুইল্যা ফেলাইছে। কিন্তু বিবিসি সামরিক জান্তার ভাণ্ড ফুটা কইর্যা ফেলাইছে। আসল খবর বাইর কইন্যা দিচ্ছে। খবরটা হইতাছে, জুলফিকার আলী ভুট্টো পিকিং থনে খালি হাতে ফেরত আইছে ।
ঢং-ং-ং। কি খবর? কি খবর? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তারে আর অস্ত্রপাতি দিবাে না বইল্যা ঘােষণা করছে।
হ-অ-অ-অ এই দিককার কারবার হুনছেন নি? যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীর উত্তর মুড়া সমানে Silent কারবার চলতাছে। কোনােরকম যােগাযােগ না থাকনের গতিকে এইসব খবর দেরীতে Disclose হইতাছে। অংপুর জেলার সৈয়দপুর থানার মধুপুর ইউনিয়নে বিচ্ছুগুলা ডাংগুলীর কারবার চালাইছে। মােছলমান লীগ আর অশান্তি কমিটির তিন মাল আজিজুল হক চৌধুরী, আব্দুল জব্বার আমীন আর ছােলায়মান পাইকাররে বিক্ষুরা ঘইষ্যা দিছে। তিন ব্যাডায় এক লগে আজরাইল ফেরেশতার খাতায় নাম লেখাইছে। এই খবর না পাইয়া বদরগঞ্জের রাজাকাররা দলে দলে সারেন্ডার কইর্যা বইছে।
এঃ হেঃ! তেসরা নভেম্বরে ডিমলা থানার কলােনীর হাটে আহা রে একটা ডেইনগ্যারাস্ কারবার হইছে। চল্লিশজন মছুয়া-রাজাকার দৌড়াইয়া আইস্যা মরণফাঁদে পা দিয়া বইলাে। দুইজন রাজাকার যাইয়া মছুয়াগাে খবর দিছিলাে ‘দুশমন লােক কলােনীর হাট মে হ্যায়’। আগা-মাথা চিন্তা না কইরাই ভােমা ভােমা সাইজের বেড়াগুলা। ফস-তাম্বু ক্যাম্পের উপর ফাল্ দিয়া পড়লাে। আল্লাহূরে, পরের টুক আর কওন যায়
কইতাছি, কইতাছি, আমারে আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় Elect করানাের ডর দেখাইয়েন না-তাইলে আমি গেছি। আধা ঘণ্টা বাদ মছুয়াগুলা দ্যাহে কি? মউত তগাে পিছনে খাড়াইয়া আছে। গেরামের বউরা যেমতে কইয়া বটি দিয়া কাডনের আগে বত্তা কই মাছের গতরের মাইদ্দে ছাই লাগাইয়া মাটির মাইদ্দে বাইড়ায়, বিক্ষুগুলা হেইরকম একটা কারবার করলাে। চল্লিশজন মছুয়া রাজাকার খতম্ হইলাে।
এতাে কইর্যা না করলাম, যাই না- যাই না, ভুরুঙ্গামারীর দিকে যাই না। ঐ দিক্কার বাহে বিচ্ছুগুলা খালি Silent কারবার করতাছে। নাঃ যেইডা না করলাম, হেইডাই করলাে। তােমরা লা এলায় বােঝেছেন? প্যাদানি চিনবার পারছেন? বিচ্চুগাে নায়েব সুবাদার মজহারুল হক ভুরুঙ্গামারীর জওমুনির হাটে মছুয়াগাে কোম্পানি কম্যান্ডার পাঞ্জাবের মেজর আকবর খানরে Clear কইর্যা ফেলাইলাে। আরে এইটা কি? এইটা কি? ম্যাজিক কারবার। এই বদরগঞ্জ-পাবর্তীপুরের মাইদ্দে না যমুনেশ্বরী নদীর ব্রিজ আছিলাে? আমাগাে কাল্লা মিয়া যারে ভালােবাইস্যা মহল্লার মাইনষে কাউলা কইর্যা ডাকে, আস্তে কইর্যা কইলাে, বিচ্ছুরা এইডারে গায়েব কইর্যা ফেলাইছে।
হ-অ-অ-অ আসল কাথাডাই কওয়া হয় নাইক্যা। বেধড়ক মাইর খাইতে খাইতে মছুয়ারা এর মাইদ্দে ট্রিসের কারবার করছিল। মানিকগঞ্জের তরার ঘাট থনে গােটা দশেক গয়না নৌকা বােঝাই কইর্যা কিছু অস্ত্রপাতি ছাড়াও লাখ দেড়েক টাকার আটা, ময়দা, ডালডা, ঘি নিয়া গাইবান্ধার মচুয়াগাে লাইগ্যা রওয়ানা করছিল। কালি গঙ্গার থনে যমুনা নদী দিয়া নাওগুলা আস্তে আস্তে কইর্যা আগুইয়া যাইতেছিল। গাইবান্ধা এলাকায় আহনের লগে লগে বিচ্ছুগুলার মুখ দিয়া অক্করে লালা পড়তে শুরু করলাে। গেরামের গৃহস্থ যেতে কইর্যা খুদ ছিটায়া আঃ আঃ আঃ কইর্যা বাচ্চা সমেত বুড়ানি মুরগিরে ডাক দেয় হেইরকম একটা কারবার হইলাে।
হেরপর ঘেটাঘ্যাট, ঘেটাঘ্যাট, ঘেটাঘ্যাট, ঘেটাঘ্যাট। কেইস খতম্ মছুয়া হজম। এই খবর না পাইয়া আর সব ক্যাম্পের বিক্ষুগুলা অখন ডবল আপ কারবার শুরু কইর্যা দিছে। হিলি-ফুলবাড়ী, তেতুলিয়া-পঁচাগড়, ঠাকুরগাঁও-রুহিয়া, পাটগ্রাম-ডিমলা, রৌমারি-চিলমারি, পীরগঞ্জ-মিঠাপুকুর, গাইবান্ধা-বােনারপাড়া, ভরতখালী-ফুলছড়ি, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা-করতােয়া এইসব এলাকায় কভি ঘােড়াকা আগে গাড়ি, কভি গাড়ি কা আগে ঘােড়ার কারবার চলতাছে। এক সময় মছুয়ারা বিচ্চুগাে খুঁইজ্যা বেড়াইতােআর অখন! বিক্ষুরাই মছুয়া খুঁইজ্যা বেড়াইতাছে। পাইলেই মাইর, পাইলেই মাইরআরে মাইর রে মাইর।
হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম, মরছে। পাগলায় মরছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল