নভেম্বর ১৯৭১
কাউয়া ডাকে কা-কা- আগে অ, পরে আ। খােকা হাসে হি-হি-হ্রস-ই, দীর্ঘ-ঈ। কি হইলাে মেরহামতু মিয়া? এইডা কি করতাছাে? এই বুড়া বয়সে আবার লেখাপড়া হিকতাছাে নাকি? খয়েরী রং-এর দাঁতগুলা বাইর কইর্যা আমাগাে মেরহাম মিয়া কইলাে, ভাইসা’ব একটা নতুন কিসিমের কেতাব হাতে আইছে। এই দেখেন, এই দেখেন? এইডার মাইদ্দে লেখা রইছে ক-তে কেকা মাইর, খ-তে খাজা খয়ের, গ-তে গাবুর বাড়ি, ঘতে ঘাউয়া। এই যে আরাে রইছে চ-তে চান্দি গরম, ছ-তে ছ্যাল কুত্ কুতু, ঠ-তে ঠতে কি? ঠ্যাটা মালেকা। ব-তে বাঘইর, ম-তে মছুয়া। আমি অক্করে থ’ ।
গ্যান্দা পােলাপানরা মিল্ল্যা এইডা কি করছে? এগাে কি ডার ভয় নাইক্যা? মেহামত মিয়া আমার হাত ধইর্যা একটা টান দিলাে। ভাই সা’ব অখন উল্ডা কারবার শুরু হইছেএদ্দিন ধইর্যা পােলাপানরা মছুয়া ডরাইতাে আর অখন মছুয়ারাই পােলাপানরে ডরাইতাছে। বিচ্চুগাে গাবুর বাড়ির চোটে মছুয়ারা অখন চোখে মুখে আন্ধার দেখতাছে। এ্যার মাইদ্দে আবার খবর পাইতাছি মছুয়া জেনারেলরা পাকিস্তানে ভাগােয়াট হওনের লাইগ্যা স্যুটকেস গােছাইতাছে। কখন ফুইট্টা পড়ে তার ঠিক নাইক্যা।
কিন্তুক বিচ্চুগাে যেইরকম কুইক কারবার চলতাছে, তাতে মনে হয়, মছুয়া জেনারেলরা ফুইট্ট্যা পড়নের টাইম পাইবাে না। ভিয়েতনামের দিয়েন বিয়েন ফু’তে যেইরকম হেইখানকার বিচ্ছুরা জেনারেল গিয়াপের অর্ডারে হানাদার ফরাসিগাে এমন মাইর দিছিলাে যে, এক বাড়ির চোটে ফরাসি সােলজাররা ‘ও মাই গড’ কইয়া ভাইগ্যা গেছিল। হের পর ফরাসি গবর্ণমেন্ট জেনিভাতে বইস্যা খস্ খস্ কইর্যা সমস্ত দলিলপত্রে দস্তখত কইরা দিলে। মনে লয় বঙ্গাল মুলুকে হেইরকম কারবার হইবাে।।
আরে এইটা কি? এইটা কী? অংপুরের ভুরুঙ্গামারী-পাটেশ্বরীতে ছ্যাল কুত কুত্ খেলা চলতাছে কির লাইগ্যা? একদিকে বিচ্চু- একদিকে মছুয়া। ছ্যাল কুত্ কুত, ছ্যাল কুত কুত, ছ্যাল কুত কুত- চাই-ই-ই-ই। হইলাে? কি হইলাে? আরে ইটি না, বেবাক মছুয়া গুড়া কইর্যা ফেলছে রে? একশ’র মতাে ভোেমা ভোেমা সাইজের লাশ ফালাইয়া বাকী মছুয়ারা ঝাইড়া দৌড়।
কই যাও? কই যাও? ওই দিকেও বিচ্ছু আছে। ডাইনে বিচ্ছু, বাঁয়ে বিচ্ছু, ওরা কোবানি ছাড়া জানে না কিচ্ছ। হ-অ-অ-অ জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে হেইদিন বাবা জগন্নাথের কারবার হইছে। রিয়ার এডমিরাল শরীফ সা’বের পেয়ারা জাহাজ ‘শের আফগান’ ঘাটের মাইদ্দে ঝিমাইতাছিল। দক্ষিণে কাদেরিয়া বাহিনী, উত্তরে বাহে বিচ্ছু, এলায় করি কি? এরপর ঘেটাঘ্যাট, ঘেটাঘ্যাটু। আরে বাড়ি রে বাড়ি। গাবুর বাড়ির চোটে খেইল খতম মছুয়া হজম।
হ-অ-অ-অ নােয়াখালীর কেইস কি? এরি ও ছইরুদ্দির বাপ, গাড়ি হুই কইচ্চে। নােয়াখালীতে আচম্বত্ ইয়া আলীর কারবার হইছে। জাতি কারে কয়? পরশুরামবেলােনিয়াের থাইক্যা মছুয়া অক্করে Clear.
এইদিকে ঠ্যাটা মালেকার কারবার হুনছেন নি? বিচ্ছুগুলার কামানের খােরাকির জন্যি মুছলমানী নাম দিয়া যে রাজাকার বাহিনী বানাইছিল, হেইডাতে কাম হইতাছে না দেইখ্যা, ঠাটা মালেইক্যায় পাবলিকগাে নতুন কিসিমের ভােগা মারনের টেরাই নিছে। হেতনে কয়েক হাজার গুণ্ডা যােগাড় কইর্যা এটা অশান্তি বাহিনী বানাইবার বুদ্ধি করছে। পাঞ্জাব থাইক্যা যে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী আমদানী করছিল, হেগাে আর্ধেকের মতাে বঙ্গাল মুলুকের ক্যাদো আর প্যাকের মাইদ্দে গাইড়া যাওনের গতিকে বাকীগুলা টাইম থাকতে দেশে ফেরত যাইতছে বইল্যাই ঠ্যাটা মালেইক্যায় এই বুদ্ধি করছে।
এই খবর না পাইয়া বিচ্চুগাে মুখ দিয়া খালি লালা পড়তে শুরু করছে। কোরবানীর আগে দুর্বা ঘাস খাওয়াইয়া খাসী যেতে কইর্যা তেতেলা করে- ঠ্যাটা মালেইক্যায় হেইরকম তেলতেলা খাসী বাহিনী থুক্কু অশান্তি বাহিনী তৈরী করতাছে।
এ্যাঃ এ্যাঃ-এ! কক্সবাজরের বিচ্ছুরা মারি তাে হাতি-লুটি তাে ভাণ্ডারের কারবার কইর্যা বইছে। টাটিগা থাইক্যা নব্বই মাইল দক্ষিণে সমুন্দর পাড়ে কক্সবাজার। যেইখানে কথাবার্তা হয়, তাম্বুই ছারেলা- ছারেলা। কি ছাম্মাদারে? হ্যাংলে ছারে, লারে ছার। হেই কক্সবাজারে জাঙ্গালিয়া বিক্ষুরা হেইদিন অক্করে হাত পাইটের কারবার কইর্যা বইছে। গুড়ি যেতে গােত্তা খায়, বিচ্চুগাে ফুটফাটে মছুয়া এয়ার ফোর্সের একটা পেলেন হেইরকম গােত্তা খাইয়া বইলাে।
জেনারেল পিঁয়াজী কি রাগ? ঘাড় তাড়া কইর্যা দ্যাহে কি? টেবিলের উপর Wirelessএর অক্করে পাহাড় হইয়া রইছে। ময়নামতী Cantonment কা খবর বহুত থতরুনাক হ্যায়। চিটাগাং পাের্টে বিচ্চুগাে ফুটফাট কারবার চলতাছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের কথা হুনলেই World-এর বেস্ট পাইটিং ফোর্সরা থ থ কইর্যা কাঁপতে শুরু করতাছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধলেশ্বরী নদীর পাড়ের এলাকা বাঙালিগাে কজায় গ্যাছেগা। কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের কাজ কাম শুরু হইয়া গেছে। পঁচাগড় তেতুলিয়া, রুহিয়ার আশেপাশে যাওন সম্ভব হইতাছে না। হিলি-ফুলবাড়ী, চরকাইতে তুফান বাইড়া-বাইড়ি শুরু হইছে। চাপাইনবাবগঞ্জে গেরামের পর গেরাম মুক্ত হইতাছে। দর্শনায় বিক্ষুরা মছুয়া বােঝাই টেরেন ডাবিশ করছে। কুস্টিয়াতে শও মাইল এলাকা হাতছাড়া হইছে। যশােরে সামনে বিক্ষু-পিছনে বিচ্ছু। সাতক্ষীরায় মছুয়ারা ভাগােয়া হইছে। সুন্দরবনের মুহি সােলজারগাে যাওয়া সম্ভব হয় নাইক্যা। বরিশাল পাউট্টাখালি, গােপালগঞ্জে চুবানির কারবার চলতাছে। টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনী পাগলা হইয়া বাইড়াইয়া কিছু থুইতাছে না- বেবাক মছুয়া গায়েব হইয়া গেছে।
নারায়ণগঞ্জের চরে Silent কাম চলতাছে। কাজলা-ডেমরায় দিনে মছুয়া, রাইতে বিচ্ছু। মানিকগঞ্জের খবর নাইক্যা। জেনারেল পিয়াজী আর একটা ফাইলের মাইদ্দে দেখলাে লেখা রইছে ‘যেভাবে বিক্ষুরা আমার দেশ, তােমার দেশ- দালালমুক্ত বাংলাদেশ করতাছে তাতে কইর্যা খতম্ হওয়া দালালগাে নাম-ঠিকানা আর রেকর্ড করা সম্ভব হইতাছে না। আকা ঢাকার সেকেন্ড ক্যাপিটালের ইস্টার্ন কম্যান্ডের হেড কোয়াটার্সে একটা বােমা ফাটনের আওয়াজ হইলাে। লগে লগে পিয়াজী সা’বে জেনারেল ফরমানরে ডাইক্যা পাঠাইলাে। ব্যস বুধবার সকাল থাইক্যা ঢাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ জারী হইলাে। রেডিও গায়েবী আওয়াজ কি খুশী! এলান কইর্যা বইলাে, আইজ সকাল থাইক্যা সােলজাররা বাড়ি বাড়ি সার্চিং কইর্যা দুষ্কৃতিকারী পাকড়াও করবাে। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। দৈনিক আজাদ পত্রিকার হরলিকসের বােতল ছৈয়দ শাহাদৎ হােসেন, মর্নিং নিউজের এস.জি. বদরুদ্দিন, দৈনিক পাকিস্তানের আহসান আহমদ আক, বিলেক মেইলের আজিজুর রহমান বিহারী, সংগ্রামের কাউঠা মাওলানা আকতার ফারুক্যা আর পাকিস্তান অবজার্ভারের খাসীর গুদার শুরুয়া খাওইন্যা মাহবুবুল হাক্ মছুয়া জেনারেলগাে Support দিলাে।
কাম শুরু হইলাে। ছেহেরী থনে এফতার পর্যন্ত বহু নিরীহ বাঙালি মার্ডার আর arrest করলাে। কিন্তু আন্ধার হওনের লগে লগে জেনারেল পিয়াজীর কাছে খবর আইলাে, জনা ছয়েক মছুয়া সােলজার কেতে জানি গায়েব হইয়া গ্যাছেগা। বাকী মছুয়ারা রাইতের বেলায় আর Action চালাইতে নারাজ। কি করি? অখন তাে Prestige ঢিলা হইয়া যাইবাে। আন্ধারের মাইদ্দে পাইয়া বিচ্ছুরা আমার সােলজারগাে তাে শেষ কইর্যা ফেলাইতাছে। যেমন মনে লইতাছে বিচ্ছুরাই কারবার করণের লাইগ্যা রাইতের কারফিউ চাইতাছে। ব্যস্ মওলবী সাবে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ রাইত আটটার সময় তুইল্যা ফেলাইল।
এইডরেই কয় ঠ্যালার নাম জশমত আলী মােল্লা। হয় তাে ঢাকায় ছয় থানায় ছয়জন ব্রিগেডিয়ার বইছে। কিন্তুক তবু কইতে হইবাে এইটাই হইতাছে ঠ্যাটা মালেইক্যা-নুরুল আমীনের Civil Administration-এর নমুনা। মনে লয় দিন কয়েকের মাইদ্দে ঢাকা টাউনের মেসিন গান কাঁধে মছুয়া জেনারেলরা রাস্তা পাহারা দিতে নামবাে।
হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম, কাউয়া ডাকে কা-কা, আগে অ পরে আ। ঠ্যাটা-ভুট্টো-ইয়াহিয়া ইয় তুমনে কেয়া কিয়া।।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল