You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

ডিসেম্বর ১৯৭১

ছেরাবেরা। অক্করে ছেরাবেরা। বঙ্গাল মুলুকে হানাদার সােলজারগাে অবস্থা অক্করে ছেরাবেরা হইয়া গ্যাছে। এক রামে রক্ষা নাই, সুগ্রিব দোসর। হাজারে হাজার বাঙালি বিচ্চুগাে গাবুর মাইরের চোটে যখন সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের ভােমা ভােমা সাইজের মছুয়া সােলজারগাে হালুয়া অক্করে টাইট হয়া গ্যাছে, ঠিক হেই টাইমে মিত্র বাহিনী আইস্যা, আরে মাইর রে মাইর! ওয়াল্ড-এর বেষ্ট মছুয়া এয়ার ফোর্স পয়লা দিনা দুই কুচকা কইর‌্যা অক্করে জমিনের মাইদ্দে হমান হয়া গ্যাছে। এ্যার মাইদ্দে আবার বিচ্চুগাে এয়ার ফোর্স চিটাগাং, ভৈরব আর নারায়ণগঞ্জের মাইদ্দে কড়া কিছিমের কারবার কইর‌্যা হানাদার সােলজারগাে মেরামত করছে।
গরিবের কাথা বাসী হইলে ফলে। এতাে কইর‌্যা কইলাম, হে ইয়াহিয়া-নিয়াজ-ঠ্যাটা মালেকা তােমাগাে যে চুলকানি উঠছে, হেই চুলকানি খুইব শীঘ্রি মাইর্যা দেয়া হইতাছে। এখনও টাইম আছে। কিন্তু নাহ- মওলবী সা’বগাে তখন কী চোটপাট! আমাগাে লগে শ্যাম চাচা রইছে নতুন মামু আছে আরও কত কী!
কি হইলাে তােমাগাে? হগুগল চাচা-মামুর দল যে খালি চাপাবাজী কইর‌্যা অখন। আস্তে কইর‌্যা খামুশ হইয়া যাইতাছে বুঝছি, বুঝছি। সােভিয়েট রাশিয়া বুঝি কইছে ‘চাআ-প’। ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা বঙ্গাল মুলুকে যে গেন্জাম করছে, হেইডার মাইদ্দে কোনাে বেড়ায় যেনাে আর মাথা না ঘামায়। ব্যাস, সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের দোস্তরা অক্করে Deaf & Dump স্কুলের হেড মাস্টার হইয়া গেছে। আর জাতিসংঘের স্টেজের মাইদ্দে এইসব দোস্তরা ‘ধা-ধিন-ধিন-না-না-তিন-তিন না, ধায় ধিনা ধা’, কইর‌্যা নাচতাছিল, সব খামুশ হইয়া গেছে। ওইখানেই ফুলস্টপ- নট নড়নচড়ন। আর বাড়াবাড়ি করণের ক্ষেমতা নাইক্যা।
এই দিকার কারবার হুনছেন নি? নুরুল আমীন, মাহমুদ আলী, গােলাম আজমের মতাে মালগুলা তাগাে বঙ্গাল মুলুকের ছাপাের্টারগাে’ পথে বহাইয়া, হেই যে পাকিস্তানে পাড়ি জমাইছে, আর তাে আহনের নাম করে না। সেনাপতি ইয়াহিয়া খান এইসব মওলবী সাবগাে অক্করে কোলের মাইদ্দে লইয়্যা বইয়া আছে আর ঠ্যাটা মালেকায় এর মাইদ্দে আবার টিরিকস্ করছে। হেতনে গবর্ণর হাউসে বইস্যা একটা লেকচার রেকর্ড কইর‌্যা ঢাকা রেডিওর দালাল মহারাজ জিল্লুর সা’বের কাছে পাঠাইছে। আর জিলুর মিয়া ঠ্যাটা মালেকার হেই রেকর্ড করা লেকচার রেডিও গায়েবী আওয়াজের মাইদ্দে বাজাইছে। দালাল, রাজাকার আর মছুয়াগাে দিলের মাইদ্দে হিম্মত পয়দা করণের। লাইগ্যাই নাকি মাঝে মধ্যে এরকম লেকচার কামে দেয়। কিন্তুক হেই গুড়ে বালি। হগুগল মিয়াই অখন বিচ্চুগাে ডরে অক্করে লেডুলেড় করতাছে।
এইদিকে ছত্রিশা মহাশক্তি জীবন রক্ষক বটিকা’ আর কুয়াতে-হালুয়া খাইয়া ছিয়াত্তর বচ্ছরের বুড়া বিল্লী বেতাে রুগী খুনী নুরুল আমীন আবার সিনা টান কইর‌্যা খাড়াইছে। বেডা একখান! সেনাপতি ইয়াহিয়া খান লগে লগে তারে মরা পাকিস্তানের নয়া পেরধান মন্ত্রী প্রস্তাব কইর‌্যা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বানাইছে। বঙ্গাল মুলুকের ১৬৯ টা সিটের মাইদ্দে নুরুল আমীনের পি.ডি.পি. মানে কিনা পাঞ্জাব ডেমােক্র্যাটিক পার্টি অউগ্যা মাত্র সিট পাইছিলাে। ব্যাস, ছন্দর ইয়াহিয়া হেই ‘ওয়ান ম্যান’ পাটির নেতা নুরুল আমীনরে নয়া পেরধান মন্ত্রীর প্রস্তাব করছে। আরে এইডা কি? এইডা কি? ফরিন মিনিস্টার হওনের শপথ না লইয়াই স্যার শাহনেওয়াজ ভুট্টোর Doubtful পােলা পােংটা সরদার জুলফিকার আলী ভুট্টো মামু আগে আইল’ কইয়্যা রাওয়ালপিন্ডির থনে কাবুল হইয়া ভাগােয়াট হইছে।
এইরকম একটা ক্যাডাভেরা অবস্থার মাইদ্দে আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান একটা জব্বর কাম কইর‌্যা বইছে। মওলবী সা’বে মছুয়া সােলজারগাে Morale Strong করণের লাইগ্যা, বঙ্গাল মুলুক থাইক্যা ৯৯ জন ভাগােয়া মছুয়া অফিসার আর জেনারেল ‘খামুখায়ে পাকিস্তান’, ‘বিল্লীয়ে পাকিস্তান’, ‘চুটিয়ায়ে পাকিস্তান’ ‘লেডুলেড়া-এ পাকিস্তান’, কাউলায়ে পাকিস্তান’, ‘ঘাউয়ায়ে পাকিস্তান’- এইসব তমঘা দিয়া বইছে।
আরে এই মেহামত মিয়া, হা কইর‌্যা রইছাে কার লাইগ্যা? মুখের মাইদ্দে মাছি হান্দাইবাে কিন্তুক! কী হইলাে। কী হইলাে? মনে লইতাছে আমাগাে মেহামত মিয়া কিছু কাথা কইবার চাইতাছে? | ভাইসাব, আমি ভাবতাছি, যখন কড়া কিছিমের মাইরের মুখে মছুয়ারা খালি ঝাইড়া দৌড়াইতাছে, আর তাগাে জেনারেলরা ট্রি কইর‌্যা পাকিস্তানে ফুইট্যা পড়তাছে; তখন সেনাপতি ইয়াহিয়া কী সােন্দর ভাগােয়া জেনারেলগাে তমঘা দিতাছে। হেইর লাইগ্যাই তাে হা কইর‌্যা রইছি। ইলেকশনে হারলে মিনিস্টার হওন যায়; জংগের ময়দানে থাইক্যা ভাগােয়াট হইলে তমঘা পাওন যায়; মাইয়া মানুষের ইজ্জত নষ্ট আর মসজিদ নাপাক করলে মসল্লী হওন যায়? কেইস কী?
তমঘা পাউয়াইন্যা মওলবী সা’বগাে পহেলা লম্বরে রইছে বঙ্গাল মুলুক থাকা ভাগােয়া জেনারেল টিক্কা খান। হেতেনে পাইছুইন শয়তানে পাকিস্তান’। দুশরা লম্বরে জেনারেল পিয়াজী। বেডার কপালে জুটছে ‘লেডুলেড়া-এ পাকিস্তান’। তিসরা লম্বরে জেনারেল মিঠঠা। মওলবী সাবের বুকে ঝুলছে ‘ঘাউয়ায়ে পাকিস্তান’।
এইডা কী? এইডা কি? গাইবান্ধার এইমুড়া এই লুকগুলা প্যান্ট আর গেঞ্জি পিন্ধ্যা দৌড়াইতেছেন ক্যান? এইগুলার সাইজ তাে বাঙালি না? এইগুলা তাে উল্ট-পাল্ডা সাইজ বইল্যা মনে হইতাছে। কী খবর বাল্যবন্ধু? কই যাও? এইতাে আমরা বইস্যা রইছি। আইস্যো, তােমাগাে উপর ঘষাঘষি কারবার করণের লাইগ্যাই তাে’ আমরা Wait করতাছি। তােমাগাে অন্যান্য দোস্তরা কী সােন্দর, এ্যার আগেই ‘হ্যালাে, আজরাইল’ কইয়া আসল কারবার কইর‌্যা বইছে। রাওয়ালপিন্ডি হনুস্ দুর আস্থ। বঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাক বহুত নজদিগ।
এ্যাঃ এ্যাঃ। সামরিক জান্তার ৯১ নম্বর ট্রিকস্ ধরা খাইছে। আটটা জাহাজ কী সােন্দর জাতিসংঘের উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী এই সাইন বাের্ড লাগাইয়া বঙ্গোপসাগর থনে দুই ভাগ হইয়া চিটাগাং আর চালনার দিকে আগুয়াইতাছিল। কিন্তুক হেই জাহাজগুলার মাইদ্দে রইছে অস্ত্রপাতি। আবার ফেরত যাইবার টাইম-এ বলে ভাগােয়াট মছুয়া সােলজারগাে লইয়া যাইবাে। ব্যাস্, হিন্দুস্থানের নৌ বাহিনী হেইগুলার ঘেটি ধইর্যা কইলকাত্তায় লইয়া গেল।
দম্ মওলা-কাদের মওলা। ঢাকার রেডিও গায়েবী আওয়াজ গায়েব হইয়া গেছে গা। বােমার ঠেলায় দড়ি নাই মওলানা ডঃ হাসান জামান, হরলিকস-এর বােতল আজাদ সম্পাদক ছৈয়দ ছাহাদত হােসেন, সংগ্রামের মওলানা আখতার ফারুকা, মর্নিং নিউজের এস.জি.এম. বদরুদ্দন-ছালাউদ্দিন মাহমুদ আর বিলেক মেইলের আজিজুর রহমান বিহহারীর চাপাবাজী বন্ধ হইছে।
এতাে কইর‌্যা না করলাম, হে মছুয়া মালেরা তােমরা বঙ্গাল মুলুকের গাংয়ের পাড়ে যাইয়াে না। হেইখানে আজরাইল ফেরেশতা Short Hand-এর খাতা আর পিন্সিল লইয়া বইয়া আছে। নাহ, আমার কথা হুনলাে না! ঘুইর্যা ফিইর্যা হেই চুবানী খাওনের লাইগ্যা। খুনীর দল কী সােন্দর পদ্মা-মেঘনা, যমুনা-ধলেশ্বরী, বুড়ীগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার গাঙ-এর পাড় ধইর্যা দৌড়াইতাছে। আর বিচ্ছুরা আরামসে দে বাড়ি, দে বাড়ি। বহুত গেঞ্জাম করছিলা। এলায় বিচ্চুগাে চুবানী আর কোবানী কারে কয় হেইডা বুইঝা লও।
History-তে লেখা থাকবাে বঙ্গাল মুলুকের পােলাপান বিক্ষুরা ১৯৭১ সালের নয় মাসে World-এর Best পাইটিং পাের্স-এর হাজার হাজার মছুয়ারে কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে হাড়ি কইর‌্যা থুইছে। অবশ্যি হাড্ডি করনের আগে মওলবী বাজারে কসাইরা যেমূতে কইর‌্যা খাসীর গােসের কিমা বানায়, ভােমা ভােমা সাইজের মছুয়াগুলারে হেইরকম কিমা বানাইছে।
হেইর লাইগ্যা কইছিলাম, ছেরাবেরা। অক্করে ছেরাবেরা। বঙ্গাল মুলুকে হানাদার সােলজারগগা অবস্থা অক্করে ছেরাবেরা হয়া গ্যাছে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল