You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.06 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

ঠ্যালার নাম জশমত আলী মােল্লা। সেনাপতি আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান বিচ্চুগাে গাবুর মাইর আর ঠ্যালার চোটে হাতে শরাবন তহুরার গিলাস লইয়া সমানে আল্লাহ্বিল্লাহ্ আর নারা-এ তকবির আল্লাহু-আকবর’ কইতে শুরু করছে। হারাজীবন ধইরা খাড়াইয়া পেসাব আর বাইশ হাজার গ্যালন Born in 1820 খাওনের পর বঙ্গাল মুলুকের হাজার হাজার মসজিদ না পাকের অর্ডার দিয়া মওলবী সা’বে অখন আরবীতে কাঁদতে শুরু করছে। শয়তানে আজম ছদর ইয়াহিয়া জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজ না পইড়া দশ। লাখ বাঙালি মার্ডার কইর‌্যা অখন কি সােন্দর মুছল্লীর ভ্যাশ ধরছে।
আবার লারকানার লাড়কা জুলফিকার আলী ভুট্টোরে কইতাছে, হে আমার গিলাসের দোস্ত ভুট্টো, আর লাল পানি খাইওনা ভুট্টো- তােমারে আমি ঝাপসা দেখতাছি।’ সেনাপতি ইয়াহিয়া অখন কোদালিয়া মাইর খাইয়্যা তামাম দুনিয়ারে ঝাপসা দেখতাছে।
আমাগাে বকশি বাজারের ছক্কু মিয়া আঙ্কা ফাল্ পাইড়া উঠলাে, ভাইসব আইজ একটা কড়া কিসিমের মেছালের কথা মনে পড়ছে। আমাগাে কাউলাগাে গেরামে দাড়ি নাই মাওলানা ডা. হাসান জামানের মতাে একজন মহা তঁাদোড় আদমি আছিলাে। মাইনষে বেডারে ঘাউয়া জামান কইয়া ডাকতাে। বিধবার জমি গ্যাড়া মারা, গৃহস্থের গল্প চুরি, সুন্দরী মাইয়ারে নিকাহ্, ডাকাতি মামলার মিথ্যা সাক্ষী, এইসব কারবারের মাই ঘাউয়া জামান Expert আছিলাে। কিন্তু বেডায় সব সময় তসৃবি টিপতাে। এই ঘাউয়া জামান বুড়া বয়সে শূলের ব্যারাম আর বাতের বিষে বিছানায় কাইত হইয়া পড়লাে। তখন একদিন পােলাগগা ডাইক্যা কইলাে, “দ্যাখ, হারা জীবন আমি মাইনিষের ক্ষেতি করছি। দুনিয়ার এমন খারাপ কাম নাই, যা করি নাইক্যা। এলায় আমি তওবা কইরা কাফফারা দিতে চাই।’ পােলারা একজনে আরেকজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলাে। কেইসডা কি? তয় কি আব্বাজান ভুল বুঝতে পারছে? গলার মাইদ্দে একটা জোর খাকরানি মাইরা হামান দিস্তা দিয়া থ্যালা করুন্যা একটা পান ঘাউয়া জামানের মুখের মাইদ্দে ফালাইয়া কইলাে, দ্যাখ আমি যখন মইরা যামু তখন আমার পিছন মুড়ায় জায়গামতাে একটা বাঁশ দিয়া চৌরাস্তায় খাড়া কইর‌্যা থুইব্যা । মাইনষে বুঝবাে জীবনভর খারাপ কা করলে এইরকমই নতিজা হয়।’
দিন কয়েক বাদ ঘাউয়া জামান আখেরী দম ছাড়লে হের পােলাগুলা আব্বাজানের কথামতাে কান্ কইর‌্যা বইলাে। গেরামের রাস্তার চৌমাথায় আব্বার লাশ খাড়া কইর‌্যা থুইলাে। খালি পিছন মুড়া কয়েকটা তল্লা বাঁশের ঠ্যাকা রইছে। হেরপর এই খবর যখন থানায় গেল দারােগা পুলিশ আইস্যা হগ্গল কিছু হুইন্যাও ঘাউয়া জামানের পােলাগুলারে কোমরে দড়ি লাগাইয়া বাইন্ধ্যা লইয়া গেল। গেরামের লােকজন অক্করে থ’ । খালি ঘাউয়া জামানের বড় পােলায় চিল্লায়া কইলাে, ভাইসব, আমার আব্বা হইলে কি হইবাে, হারা জীবন মাইনষের সর্বনাশ কইর‌্যা অখন পটল তােলনের পর পােলাগাে সর্বনাশ কইর্য থুইলাে। এলায় বুঝছেন, সেনাপতি ইয়াহিয়া খান হেই ঘাউয়া জামান হইছে। ব্যাডারে মরণে Call করলে কি হইবাে, জেনারেল হামিদ-ভুট্টো-কাইউম-মওদুদী, নুরুল আমীনঠ্যাটা মালেকা-পিয়াজীর কোমরে দড়ি লাগাইবার ব্যবস্থা কইর‌্যা থুইয়া যাইতাছে।
হ-অ-অ-অ এই দিককার কারবার হুনছেন নি? সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের হানাদার সােলজাররা বঙ্গাল মুলুকের প্যাক আর ক্যাদোর মাইদ্দে গাইড়া যাওনের গতিকে শ্যাম চাচা, নতুন মামু আর চাচাতাে-ফুফাতাে ভাই বেরাদরের দল, মওলবী সা’বরে টিরিসের পর টিরিক্স হিকাইতাছে। কিন্তু কিছুই আর কামে আইতাছে না। খুটির জোরে মেড়া কোঁদে। তবুও খুনী ইয়াহিয়া তার কথামতাে তিরা ডিসেম্বর যা আছে ডুঙ্গির কপালে কইয়া ভীমরুলের চাকে হাত দিয়া বইছে- মানে কিনা India Attack কইরা বইছে।
আবার রেডিও গায়েবী আওয়াজ থনে সেনাপতি আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান গলার মাইদ্দে হলকুম লাগাইয়া ডাইনের মুড়া দিয়া লেখইন্যা জবানে লেকচার দিছে। হেতনে কইছুন, ‘ইয়ে হামারা আখেরী লাড়াই হ্যায়।’ বেড়া একখান। কিসে নাই চাম্ রাধা কৃষ্ণ নাম ।
পচ্চৎ কইর‌্যা একগাদা পানের পিক ফালাইয়া মেরহামত মিয়া আঙ্কা চিল্লাইয়া উঠলাে, বুঝছি, বুঝছি সেনাপতি ইয়াহিয়া কড়া কিসিমের ট্রিক্স করছে। সারেন্ডার যখন করতেই হইবাে, তখন বঙ্গাল মুলুকের পােলাপান বিচ্ছগাে কাছে সারেন্ডার করতে কি লজ্জা, কি লজ্জা! India Attack কইর‌্যা হেগাে কাছে সারেন্ডার করলে Prestige ঢিলা হওনের হাত থাইক্যা কিছুটা রক্ষা পাওন যাইবাে।
ব্যাস, যেমন চিন্তা হেইরকম কাম। মওলবী সা’বে অজু না কইরাই নারা-এতকবির আল্লাহু-আকবর’ কইয়া নয়া কিসিমের ধােকা দেওনের লাইগ্যা India Attack করছে। আর হুড়মুড় কইর‌্যা জাতিসংঘের Security council- এর হাটু চাইপ্যা ধরছে। Help, Help, শ্যামচাচা, নতুন মামু, খুনী ইয়াহিয়ারে কান্ধে কইর‌্যা Security কাউন্সিলে হুলাহু ড্যাসিং শুরু করছে। ঠাস্ কইর‌্যা একটা আওয়াজ হইলাে। কি হইলাে? কি হইলাে? এই রকম আওয়াজ হইলাে কির লাইগ্যা?
ও-অ-অ-অ- সােভিয়েত রাশিয়া হগ্গল কয়টারে এক লগে তাপড়া মারছে। ফাইজলামি করার আর জায়গা পাও না, না? নয় মাস ধইর্যা বঙ্গাল মুলুকে বহুত গেঞ্জাম করছাে। ইলেকশনে জেতইন্যা শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগরে ক্ষ্যামতা দেও নাই, বেসুমার মানুষ Murder করছাে, মাইয়া মাইনষের ইজ্জত নষ্ট করছে, ঘর-বাড়ি সম্পত্তি গুড়া করছাে, এক কোটি বাঙালিরে ঘরছাড়া কইর‌্যা অহন India Attack কইরা ভ্যাশ ধরছাে। আমি Warning দিতাছি, কেউ যেনাে হেইখানে তেড়ি-বেড়ি করতে না যায়। হগলরেই কইয়া দিতাছি, যদি শান্তি চাও, তয় স্বাধীন বাংলাদেশ স্বীকার কইর‌্যা পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির ব্যবস্থা করাে।
এঃ হেঃ! এইদিকে বঙ্গাল মুলুকের বিচ্ছুরা ধনাধন কারবার কইর‌্যা যাইতাছে। ঠাকুরগাঁও দখল কইর‌্যা মুক্তি বাহিনী সৈয়দপুরের দিকে আগগুয়াইয়া যাইতাছে। ফরিদপুর, বরিশাল, পট্টাখালি থনে বিচ্চুগাে কোদালিয়া মাইরের মুখে হানাদার মছুয়ারা। Competition কইর‌্যা আজরাইল ফেরেশতার লগে হাত ধইর্যা ‘মােহসাবা’ করতাছে।
আরে এইডা কি? এইডা কি? টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ- এইসব জায়গায় মছুয়া পাওয়া যাইতাছে না কিসের লাইগ্যা? ও-অ-অ হগুগলেই বুঝি How to Surrender আর How to ভাগােয়াটের কারবার করছে না? সাছে রে সারূছে। সােনারের ঠুঠা কামারের এক ঘা। টাই-ই-ই।
বঙ্গাল মুলুকের আসমানে India আর মছুয়া Airfoce-এর পাইট হইছিল ব্যস্, খেইল খতম পয়সা হজম। মছুয়া Air পাের্সের আর কোনাে আওয়াজ পাওয়া যাইতাছে না।
এতাে কইর‌্যা কইলাম, যাই না যাই না। হে সাদা চামড়ার মালেরা Situation Normal কইয়্যা ঠ্যাটা মালেকা-পিঁয়াজী যতই চাপাবাজি করুক, তােমরা ঢাকায় প্যাচ মারবার বুদ্ধিতে যাইও না যাইও না। বিচ্ছুরা অক্করে পাগলা হইয়া রইছে। নাঃ আমার কাথা হুনলাে না। অখন কেমন লাগে? টেরেঞ্জের মাইদ্দে হান্দাইয়্যা খালি যিশু খ্রিস্টের নাম লইতাছাে ক্যান? বুঝছি, বুঝছি, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্ট সাবের ঘুম ভাঙ্গছে। বেডায় অখন ভেউ ভেউ কইর‌্যা কাইন্দা কইতাছে, মাত্র দুই ঘণ্টার টাইম। দাও। আমার সাদা মালগুলারে ব্যাংককে ভাগােয়াট হওনের চান্স দাও।
এই দিককার কারবার হুনছেন নি? হাতি যেমতে কইর‌্যা খেদার মাইদ্দে আটকা। পড়ে, হেইরকম ভােমা ভােমা সাইজের হানাদার মছুয়াগুলা অখন বঙ্গাল মুলুকে কেদোর মাইদ্দে আটকা পড়ছে। কেইসটা কি?
হগুগল এয়ারপাের্ট ডাবিশ হইছে, চালনা বন্দর বিচ্চুগাে দখলে, চিটাগাং পাের্ট-এ হেই কারবার চলতাছে। এই রকম একটা অবস্থায় পােলাপানে চিনি ছিটাইয়া যেতে কইর‌্যা চিউটি মানে কিনা পিপড়া হাত দিয়া ডইল্যা মারে, হেই রকম মছুয়া ডইল্যা মারছে। হাঁই-ই রে ইডা কিরে? বিচ্ছুরা মছুয়া কোবাইয়্যা সুখ করলাে রে, বিচ্ছুরা মছুয়া কোবাইয়্যা সুখ করলাে! খুকা বদলা খুনের কারবার চলতাছে।
হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম ঠ্যালার নাম জশমত আলী মােল্লা। বিচ্ গলেমে আটকি হ্যায় দম, নাই ইধারূকা রহে, না উধারুকা রহে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল