You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

ডিসেম্বর ১৯৭১

মেজিক কারবার। ঢাকায় অখন মেজিক কারবার চলতাছে। চাইরাে মুড়ার থনে গাবুর বাড়ি আর কেচুকা ম্যাইর খাইয়া ভােমা ভােমা সাইজের মছুয়া সােলজারগুলা তেজগাকুর্মিটোলায় আইস্যা- আ-আ-আ দম ফালাইতাছে। আর সমানে হিসাবপত্র তৈরী হইতাছে। তােমরা কেডা? ও-অ-অ টাঙ্গাইল থাইক্যা আইছাে বুঝি? কতজন ফেরত আইছাে? অ্যাঃ ৭২ জন। কেতাবের মাইদে তাে দেখতাছি লেখা রইছে টাঙ্গাইলে দেড় হাজার পােস্টিং আছিলাে। ব্যাস্ ব্যাস্ আর কইতে হইবাে না- বুইজ্যা ফালাইছি। কাদেরিয়া বাহিনী বুঝি বাকীগুলার হেই কারবার কইর‌্যা ফালাইছে। এইডা কি? তােমরা মাত্র ১১০ জন কীর লাইগ্যা? তােমরা কতজন আছলা? খাড়াও খাড়াও- এই যে পাইছি। ভৈরব- ১২৫০ জন। তা হইলে ১১৪০ জনের ইন্না লিল্লাহে ডট ডট ডট রাজেউন হইয়া গেছে। হউক কোনাে ক্ষেতি নাই। কামানের খােরাকের লাইগ্যাই এইগুলারে বঙ্গাল মুলুকে আনা হইছিল। রংপুর-দিনাজপুর, বগড়া-পাবনা মানে কিনা বড় গাং-এর উত্তর মুড়ার মছুয়া মহারাজগাে কোনাে খবর নাইক্যা। হেই সব এলাকায় একশােতে একশাের কারবার হইছে। আজরাইল ফেরেশতা খালি কোম্পানির হিসাবে নাম লিখ্যা থুইছে।
আরে এইগুলা কারা? যশুরা কই মাছের মতাে চেহারা হইছে কীর লাইগ্যা? ও-অঅ তােমরা বুঝি যশাের থাইক্যা ১৫৬ মাইল দৌড়াইয়া ভাগােয়াট হওনের গতিকে এই রকম লেড়-লেড়া হইয়া গেছে।
আহ হাঃ! তুমি একা খাড়াইয়া আছাে কীর লাইগ্যা? কী কইল্যা? তুমি বুঝি মীরকাদিমের মাল? ও-অ-অ-অ বাকি হগ্গলগুলারে বুঝি বিক্ষুরা মেরামত করছে? গ্যাংএর পাড়ে আলাদা না পাইয়া, আরামসে বুঝি চুবানী মারছে।
কেইস কী? আমাগাে বকশি বাজারের ছক্কু মিয়া কান্দে কীর লাইগ্যা? ছক্ক-উ, ও ছক্ক! কান্দিস না ছক্ক, কান্দি না! কইছিলাম না, বঙ্গাল মুলুকের কোদো আর প্যাকের মাইদ্দে মছুয়াগাে মউত তেরা পুকর তা হ্যায়’।
নাঃ- তখন কী চোটপাট! হ্যান করেংগা, ত্যান করেংগা। আর অহন? অহন তো মওলবী সাবরা কপিকলের মাইদ্দে পড়ছে। সামনে বিচ্চু, পিছনে বিক্ষু, ডাইনে বিধু, বায়ে বিক্ষু। অখন খালি মছুয়ারা চিল্লাইতাছে, ‘ইডা আমি কী করছুনুরে! হামি ক্যা নানীর বাড়িত আচ্ছিন্ন রে! হামি ইয়া কী করনু রে!
আতকা আমাগাে ছক্কু মিয়া কইলাে, ভাইসাব আমার বুকটা ফাইট্যা খালি কান্দন আইতাছে। ডাইনা মুড়া চাইয়া দেহেন। ওইগুলা কী খাড়াইয়া রইছে। কী লজ্জা! কী লজ্জা! মাথাডা এ্যাংগেল কইরা তেরছী নজর মারতে দেহীকী, শও কয়েক মছুয়া অক্করে চাউয়ার বাপ- মানে কিনা দিগম্বর সাধু হইয়া খাড়াইয়া রইছে। ব্রিগেডিয়া শশী জিগাইলাে, ‘তুম লােকো কাপড়া কিধার গিয়া?’ জবাব আইলাে-যশােরে সাট, মায়া। গেঞ্জী, গােয়ালন্দে ফুলপ্যান্ট আর আরিচায় আন্ডার ওয়ার থুইয়া রাস্তা খালি চিল্লাইতে চিল্লাইতে আইছি- ‘হায় ইয়াহিয়া, ইয়ে তুমনে কেয়া কিয়া?- হামলােগ তাে আভি নাংগা মছুয়া বন গিয়া।
আকা ঠাস্ ঠাস্ কইরা আওয়াজ হইলাে। ডরাইয়েন না, ডরাইয়েন না! মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী চুলে ভর্তি সিনা চাবৃড়াইতে শুরু করছে। পদ্মা নদীর কূলে আমার নানা মরেছে, পদ্মা নদীর কূলে আমার নানী মরেছে- গাবুর বাড়ির চোটে আমার কাম সেরেছে। ব্যাস, মওলবী রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্টের কাছে খবর পাডাইলাে, হে প্রভু, তােমার দিলে যদি আমাগাে লাইগ্যা কোনাে রকম মহব্বৎ থাইক্যা থাকে, তা হইলে তুর আমাগাে কইয়া দাও; কিভাবে বিচ্ছু আর হিন্দুস্তানী ফোর্সের পা জাপটাইয়া ধরলে আমার লেডুলেড়া আর ধ্বজভংগ মার্কা বাকী সােলজারগাে জান বাঁচানাে সম্ভব হইবাে।
এই খবর না পাইয়া একদিকে জেনারেল পিয়াজী আর একদিকে সেনাপতি ইয়াহিয়া কী রাগ? সেনাপতি ইয়াহিয়া লগে লগে উথান্টের কাছে টেলিগ্রাম করালাে, ভাই উথান্ট, ফরমাইন্যার মাথা খারাপ হওনের গতিকেই এই রকম কারবার করছে। হের টেলিগ্রামটা চাপিশ কইর‌্যা ফালাও।’ এইদিকে আমি ছ্যার শাহ নেওয়াজ ভুট্টোর ‘ডাউটফুল’ পােলা, পােংটা সরদার জুলফিকার আলী ভুট্টোরে মিছা কথা কওনের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করণের লাইগ্যা জাতিসংঘে পাডাইতাছি। পােলডারে একটু নজরে রাখবা। বেডার আবার সাদা চামড়ার কসবীগাে লগে এথি-ওথি কারবার করনের খুবই খায়েশ রইছে।
সাবে কইছে কীসের ভাই, আহ্লাদের আর সীমা নাই। সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের হবু ফরিন মিনিস্টার জুলফিকার আলী ভুট্টো ব্রাকেটে শপথ লওনের টাইম হয় নাইক্যা-ব্রাকেট শেষ। জাতিসংঘে যাইয়া পয়লা রিপাের্টারগাে লগে বেশ কায়দা কইর‌্যা লুকোচুরি খেলতে শুরু করলাে। তারপর। জাতিসংঘের ডায়াসে আঙ্কা কয়েক দফায় কান ধইরা উঠবস’, ‘উঠ-বস্ কইর‌্যা ভুট্টো সা’বে ছিল্লাইয়া কইলাে, “আর লাইফের এই রকম কাম করুম না। বঙ্গাল মুলুকে আমরা গেন্জাম কইর‌্যা খুবই ভুল করছি। আমরা মাফ চাইতাছি, তােওবা করতাছি, কান ডলা খাইতাছি। আমাগাে এইবারের মতাে ক্ষেমা কইর‌্যা দেন।
কিন্তু ভুট্টো সা’ব। বহু লেইট কইর‌্যা ফালাইছেন। এইসব ভােগা কথাবার্তায় আর কাম হইবাে না। আকা ঠাস ঠাস্ কইর‌্যা আওয়াজ হইল। কী হইলাে? কী হইলাে? জাতিসংঘে ভেটো মাইর্যা সােভিয়েত রাশিয়া হগ্গল মিল্কী শয়তানরে চীৎ কইর‌্যা ফালাইছে। কইছে, ফাইজলামীর আর জায়গা পাও না? বাঙালি পােলাপান বিচ্ছুরা যহন লাড়াইতে ধনাধন্ জিত্তাছে, তহন বুঝি লাড়াই বন্ধ করণের নানা কিসিমের ট্রিক্স হইতাছে-না?
এইদিকে সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের পরানের পরাণ জানের জান চাচা নিক্সন, কড়া কিসিমের ট্রিক্স করণের লাইগ্যা সপ্তম নৌ-বহররে সিংগাপুরে আনছে। লগে লগে ক্রেমলিন থাইক্যা হােয়াইট হাউসরে এ্যাডভাইসিং করছে- একটুক হিসাব কইর‌্যা কাজকারবার কইরেন। প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগনী কইছে, ভারত উপমহাদেশে বাইরের কেউ নাক না গলালেই ভালাে হয়। ব্যা-স্স, আমেরিকার সপ্তম নৌবহর সিংগাপুরে আইস্যা নিল-ডাউন হইয়া রইলাে। এ্যা এ্যাঃ! এই দিক্কার কারবার হুনছেন নি? হারাধনের একটা ছেলে কান্দে ভেউ ভেউ, হেইডা গেল গাথার মাইদ্দে রইলাে না আর কেউ। জেনারেল পিয়াজী সাবে সরাবন তহুরা দিয়া গােসল কইর‌্যা ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হােটেলের মাইদ্দে হান্দাইয়া এখনও চা চঁা করতাছে- ‘আমার ফোর্স ছেরাবেরা হইলে কী হইবাে, আমি পাইট করুম- আমি পাইট করুম।
আমাগাে মেরহামত মিয়া আতকা চিল্লাইয়া উঠলাে। এইডা কী? এইডা কী? জেনারেল পিঁয়াজী সাবের ফুল প্যান্টের দুইরকম রং দেখতাছি কীর লাইগ্য? সামনের দিকে খাকী রং, পিছনের মুড়া বাসন্তী রং- কেইস কী? অনেক দেমাক লাগাইলে এর মাজমাড়া বোেঝন যায়।
হেইর লাইগ্যা কইছিলাম। মেজিক কারবার। ঢাকায় অহন মেজিক কারবার চলতাছে। চাইরাে মুড়ার থনে গাবুর বাড়ি আর কেকা মাইর খাইয়া ভােমা ভােমা সাইজের মছুয়া সােলজারগুলা তেজগাঁ-কুর্মিটোলায় আইস্যা- আঁ-আঁ-আঁ, দম ফালাইতাছে।।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল