You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

সেপ্টেম্বর ১৯৭১

যা ভাবছিলাম তাই-ই হইছে। পাকিস্তান আর তার দোস্ত ইরানের মাইদ্দে যাতায়াত করণের লাইগ্যা অখন আবার ভিসার দরকার হইবাে। কেইসটা কি? এই দুইডা দ্যাশের মাইদ্দে তাে খুবই দোস্তালী। পরানের পরাণ, জানের জান, শাহেন শাহ-এর লগে ইয়াহিয়া খান।
আমাগাে বকশি বাজারের ছক্কু মিয়া আর পাতলা খানের গল্লির মেরহামত মিয়া হেইদিন আমারে পাকিস্তান ইরানের মাইদ্দে আবার ভিসা চালু হওনের কেইসটা জিগাইছিল। আমি দিনা দুই-এর টাইম লইছিলাম। কেইসটা Think কইর‌্যা দেখন লাগবাে। আমিও পয়লা একটু ভিন্রি খাইছিলাম। হ্যাশে ল্যাজ তুইল্যা দেখি কী? এইটা বকরি ঠিকই আছে- মানে কিনা দুই জনার মাইদ্দে কড়া মহব্বতের কোনােই গড়বড় হয় নাইক্যা। এই মহব্বতের লাইগ্যাই তাে আইজ মরা পাকিস্তানের মীরজাফর সেকেন্দার মির্জার কবর তেহরানের মাইদ্দেই রইছে। সেনাপতি ইয়াহিয়ার দাদাও বলে এই ইরান। থাইক্যাই পাকিস্তানের হিজরত করছিল। আর ইয়াহিয়ার ওস্তাদ বুড়া আইয়ুব খান যখন ক্ষেমতায় আছিলাে, তখন শ্যাম চাচার দোয়াখায়ের লইয়া পাকিস্তান, ইরান আর তুরস্করে এক দড়িতে গাইথ্যা ফালাইছিল- হেইডার নাম আরসিডি। আর মহব্বতের পেরমাণ দিবার লাইগ্যা ভিসার System উড়াইয়া ফেলাইছিল। এছাড়া ইরান থাইক্যা যেসব মাতারী নার্স লাহাের-রাওয়ালপিন্ডি আইছিলাে, হেই বেবাকগুলারে পাকিস্তানীরা হাংগা কইরা থুইয়া দিছে। এই রকম যেখানে মহব্বত, হেইখানে আকা ইরান আর পাকিস্তানের মাইদ্দে আবার ভিসা System টা চালু হওনে হগৃগরেই ভিন্রি খাইছে । তাই-না? কিন্তুক এর মাইদ্দে সেনাপতি ইয়াহিয়া বহুত টিরিক্স করছে। একদিনের। লাইগ্যা বাপের বাড়ি তেহরানের যাইয়া এই ব্যবস্থা কইরা আইছে- কারণ? মাল-পানি!
আঃ হাঃ! খোঁচা মাইরেইন না, খোঁচা মাইরেইন না। কইতাছি, কইতাছি। মওলবী সা’বে তেহরান যাইয়া দেখে কী! পাকিস্তানী ব্যবসায়ী আর শিল্পপতির দল অক্করে গিজ গিজ করতাছে-কেইসডা কী? বঙ্গাল মুলুকের বিচ্ছুগুলার গাবুর বাইড়ানের চোটে আর। ছয় মাস ধইরা পাইট কইরা কোনাে হেস্তনেস্ত না হওনের গতিকে ডাহিনা মুড়া দিয়া লেখুইন্যা ব্যবসায়ী-শিল্পপতির দল অক্করে ভাগােয়াট। যে যেমতে পারতাছে, কাইটা পড়তাছে। চিটাগাং থাইক্যা আগা খানের দল, বগুড়া থাইক্যা জামিল উদ্দিনের পরিবার, ঢাকার দোসানী, খুলনার রেঙ্গুন স্টোর্স হগুগলরেই ভাগােয়াটের বিমারে ধরছে। কিন্তু ব্যাডারা পাকিস্তানের যাইয়া দ্যাখে হেইখানেও কেইস খুবই খারাপ। মিল ফ্যাক্টরি সব বন্ধ হইয়া বইস্যা আছে। মালিক আর ম্যানেজাররা লাপাত্তা হইয়া গেছে। এ্যার মাইদ্দে আবার ভুট্টো-ইয়াহিয়ার ফাটাফাটি কারবার শুরু হইছে। চাইর দিকে খালি বেকার আর। বেকার। ব্যাস্ মাল-পানিওয়ালা ব্যাডারা হেইখান থাইক্যাও ভাগােয়াট হইতে শুরু করছে। হেরা ঠিকই আন্তাজ করতে পারছে, বঙ্গাল মুলুকে প্যাক আর ক্যাদোর মাইদ্দে সেনাপতি ইয়াহিয়ার যে ঠ্যাং হান্দাইছে, হেই ঠ্যাং আর বাইর করণ লাগবাে না। তােমারে বধিবে যে গােকুলে বাড়িছে সে।’ এলায় ক্যামন বুঝতাছেন?
হেইর লাইগ্য কেউ গ্যাছে পূর্ব আফ্রিকা, কেউ পাড়ি জমাইছে বাহরায়েন, কুয়েত; কেউ গ্যাছে কুয়ালালামপুর আর বেশির ভাগ ভাগােয়াট হইছে ভিসা লাগে না হেই ইরানে। হেইর লাইগ্যাই লাগছে মহা গেনজাম। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার এই মালপানিওয়ালা ব্যাডাগুলারে পাকিস্তানের মাইন্দে আটকায়ে রাখতে চায়। আস্তে কইর‌্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া তার দোস্ত ইরানের শাহেন শাহরে কইয়া দিলে, “দোস্ত, হে-ই-কাম Begin। ব্যাস, আবার ভিসা চালু হইয়া গেল। এলায় বুঝছেন? মহব্বতের কারবার কেমন কড়া ডােজের হইছে? ওই ছক্কু মিয়া। ইয়াহিয়া সা’বের টিরিসের কথা হুইন্যা যে অক্করে হঁ কইর‌্যা রইল্যা। মুখ বন্ধ করাে- না হইলে কিন্তুক মাছি হান্দাইবাে।
বাঘইর! কি হইলাে? কি হইলাে? ছক্কু মিয়া আওয়াজ দিলাে কীর লইগ্যা? ও-ও-ও বুঝছি। বিক্ষুগুলার কারবার কওয়া হয় নাই-তাই না? তয় কইতাছি হােনাে। হেইদিন। একদল মছুয়া আর রাজাকার মিইল্যা ঠ্যাটা মালেকার অর্ডারে ময়মনসিংহে পাবলিকগাে। ধন-সম্পত্তি লুটপাট করতাছিল, আর ডর দেখাইয়া মাল-পানি কামাইতাছিল । একবার ঘুণাক্ষরেও চিন্তা কইর‌্যা দেখলাে না যে বিচ্ছুগুলা আশেপাশেই রইছে। ব্যাস, যা হওনের তা হইলাে। আহারে! আলাদা না পাইয়া পালের গােদাগুলারে হেই কারবার কইর‌্যা দিলাে। আর বাকিগুলারে কান কাইটা ছাইড়া দিলাে। ময়মনসিংহ হাসপাতালে হেইগুলা অহন খালি গােঙ্গাইতাছে।
এইদিক্কার কারবার হুনছেন নি? টাঙ্গাইল-মির্জাপুরের নূরুল হুদার চিরকিৎ হইছিল। বেডায় মােনাইম্যা গবর্ণরের আমলে মেম্বর আছিলাে। আইজ-কাইল ঠ্যাটা মালেকার লগে Connection কইর‌্যা লুটপাট সমিতির সভাপতি হইয়াছিল। ঘটাংকি হইলাে, আওয়াজ কিসের লাইগ্যা? মির্জাপুরের নূরুল হুদা এই দুনিয়ার থনে সাফ হইয়া গেল। রেডিও গায়েবী আওয়াজ থাইক্যা কি কান্দন! আমাগাে মির্জাপুরে নূরুল হুদারে কে বা কাহারা হেইকাম করিয়া দিয়াছে।
এইদিকে আমাগাে ঢাকার মাইদ্দে মুসলিম লীগের মার্কসিস্ট Fraction-এর ছলাহ উদ্দিন বিহারী, আনােয়ার জাহিদ বাঙালি আর দৈনিক পাকিস্তানের হাসান আহমদ অশক সাবের খুবই বাড় বাড়ছে। আক সা’ব বাঙালি হইলে কি হইবাে, হেতেনে উর্দুতে শায়ের মানে কিনা কবিতা লিখতাছেন। আইয়ুব খানর টাইমে ব্যাডায় টেলিভিশনে একটা কবিতা পড়ছিলাে, মুঝে শরম মালুম হােতা হ্যায়, মুঝে শরম মালুম হােতা হ্যায়, ম্যায় বাঙালি হােকে উর্দুমে শায়ের লিখ রাহি হ্যায়।’ ক্যামন বুঝতাছেন?
এই মাল বাঙালি কবিগাে পক্ষ থাইক্যা বচ্ছর দুই আগে মস্কো সফরে গেছিলেন। তারপর বুঝতেই পারতাছেন? রাশিয়ানরা অক্করে থ’-বাংলায় ‘ক’ অক্ষর গােমাংস এই আশক সা’ব কেমতে কইর‌্যা বাঙালি কবি হিসাবে মস্কো আইলাে? একটু খোঁজ-খবর করতেই হেরা বুঝতে পারলাে ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার কবি, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকগাে দিয়া নতুন কিসিমের গােয়েন্দা বিভাগ খুলছে- হেইডার অনেক নাম। রাইটার্স গিল্ড, ন্যাশনাল ব্যুরাে অব Reconstruction, আর্টস কাউন্সিল, নজরুল একাডেমী, বাফা, ফিচার সিন্ডিকেট, পাকিস্তান কাউন্সিল- কতগুলা। হগুগল জায়গার মাতব্বরগাে আসল কাম গােয়েন্দাগিরি। অস্থির হইয়েন না, আস্তে আস্তে হগল নাম কইয়া দিমু। ঠ্যাটা মালেকা-পিঁয়াজীর পাল্লায় পইড়া কেডা-কেডা ফাল পাড়তাছে হেইগুলি একটু ঠাহর করতে দেন। এই দিকে তাে, বিচ্ছুগুলা যেকোনাে টাইমে যে কোনাে জায়গায় কারবার করতে পারতাছে। দেখলেন না হেইদিন মালেকার নয়া মন্ত্রী কাউঠা মওলানা ইসহাকরে কেমতে মেরামত করছে?
এর মাইদ্দে বিক্ষুগুলার Air Force আর Navy তৈরী হইতাছে। অখনও টাইম আছে। শ্যাষের সেদিন কি ভয়ংকর, ভাইসব- শ্যাষের সেদিন কি ভয়ংকর! হাজার হইলেও ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। হের আগেই আন্তাজ কইর‌্যা ভাগতে শুরু করছে। এইডারে কয় রাম ভাগােয়া। এই মুড়া থাইক্যা হেই মুড়া আর হেই মুড়া থাইক্যা যেইদিকে দুই চোখ যায়। হেইর লাইগ্যা কইছিলাম, যা ভাবছিলাম তাই-ই-হইছে। সেনপতি ইয়াহিয়া অখন মাল-পানিওয়ালা বেডাগুলারে লােহার শিকল দিয়া পাকিস্তানের মাইদ্দে বাইন্দ্যা থােওনের লাইগ্যা ইরানের লগে আবার ভিসা System চালু করছে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল