You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

অক্টোবর ১৯৭১

ফলসিং কারবার। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় ঠ্যাটা মালেকার রাজত্বে হগ্গল কারবারেই কড়া কিসিমের ফলসিং চলতাছে। কী হইলাে ছক্কু মিয়া, এতাে চিল্লাইতছাে কীর লাইগ্যা?
ছক্ক আরও বেশি কইর‌্যা চিক্কর দিয়া উঠলাে। কইতাছি, ভাইসাব কইতাছি। দিনা কয়েক ইউ.জি. মানে কিনা Under Ground-এর মাইদ্দে যাইয়া মছুয়াগাে হগগল করবার দেইখ্যা আইছি। পাবলিকরে ভােগা মারনের লাইগ্য সেনাপতি ইয়াহিয়া খান অক্করে জব্বর টিরিক্স কইর‌্যা বইছে। বাইর থনে দেইখ্যা মনে হইতাছে ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা তাগাে দালাল- মীরজাফরগাে গদীর মাইদ্দে বহাইয়া কাম চালাইতাছে। আসলে এই দালাল- মীরজাফরগােও মওলবীসাবিরা বিশ্বাস করতে পারছে না। খাতা-কলমেই ঠ্যাটা মালেক্যা আর তার তেরােজন উজির রইছে। কামের বেলায় এক গাদা বােমা সাইজের মছুয়া পিছন থাইক্যা হাসতাছে। এইগুলার হিসাব দিতাছি। পয়লা হইতাছে পালের গােধা লেঃ জেনারেল পিয়াজী- বেড়ায় ঠেট্টা মালেকার উপর দিয়া বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার মেলেটারি শাসনকর্তা। এরপর দালাল মিনিষ্টারগাে মেরামত করণের লাইগ্যা রইছে, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আর মেজর জেনারেল রহিম খান। আবার এই দুইজন ঠ্যাং কাপুন্যা মেজর জেনারেলের লগে ব্রিগেডিয়ার আতা আর ব্রিগেডিয়ার ফকির মােহাম্মদ। আঃ হাঃ অস্থির হইয়েন না।। এইসব মছুয়ার ঘেটুগাে নামও কইতাছি। ঢাকা জেলার মেলেটারি এ্যাডমিনিস্ট্রের হইতাছে ব্রিগেডিয়ার বাশির। বেডায় তেজগাঁয়ে এম.পি.এ. হাউসে আস্তানা গাড়ছে। হের লগে পশ্চিম পাঞ্জাব থাইক্যা পুলিশের আই.জি. আর পুলিশের এস.পি. আমদানী করছে। খাইছে রে, খাইছে। আসল কথা কওয়াই হয় নাই। গেল সাড়ে ছয়মাস ধইরা পাইট করণের পর মছুয়ারা বুইজ্যা ফেলাইছে বিক্ষুগুলার যন্ত্রণায় রাস্তাঘাট আর রেললাইন দিয়া যাতায়াত সুবিধা হইবাে না। হেইর লাইগ্যা দরিয়া দিয়া যাতায়াত করণের টেরাই করতাছে। বাংলাদেশের বর্ষাকালে পাঁচ হাজার মাইল আর শীতের মাইদ্দে চাইর হাজার মাইল নদী পথের খবর পাইয়াই, ইসলামাবাদ থাইক্যা নতুন কিসিমের অর্ডার আইছে। ব্যাস্, লগে লগে ভােমা সাইজের মছুয়াগুলা পুকুরে মাইদ্দে সাঁতার শিখতে লাইগ্যা পড়লাে। একবারও চিন্তা কইর‌্যা দেখলাে না যে, বঙ্গাল মুলুকের পুকুর আর দরিয়ার মাইদ্দে আসমান-জমিন ফারাক রইছে। বিক্ষুগুলা এই চান্স না পাইয়া দেখে কী, কোনােমতে স্টীমার-লঞ্চ ফুডা করতে পারলেই কেল্লা ফতে। মছুয়াগুলা অক্করে হুড়মুড় কইর‌্যা দরিয়ার মাইদ্দে ফাল দিয়া মরণের লগে কোলাকুলি করণের লাইগ্যা Competition করতাছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া খান বঙ্গাল মুলুকের দরিয়ার মাইদ্দে পাইট করণের লাইগ্যা Flag Officer Commanding রিয়ার এ্যাডমিরাল শরিফরে ঢাকায় পাডাইলাে। বেড়ায় ঢাকা-কুর্মিটোলার মাইদ্দে বনানী উপ-শহরে তার Forcepএর আফিস বহাইলাে। এই আফিসের বগল দিয়া প্রাক্তন গবর্ণর মােনায়েম্যার বাড়ি। বুধবার সন্ধ্যার সময় দুইজন বিচ্ছু যাইয়া মােনায়েম্যার উপর কারবার কইরা বহাল তবিয়তে হাওয়া হইয়া গেছে। হেই গুলির আওয়াজ পাইয়া পাকিস্তান নেভীর মমাছুয়াগুলার কী কাঁপন! আচ্ছা দেখাইয়া দিমু। রাইতে তাে’ সার্চিং-এর অর্ডার নাইক্যাকাইল সকলে দেখাইয়া দিমু। এলায় কেমন বুঝতাছেন! রিয়ার এ্যাডমিরাল শরিফ সাবের কারবার সারবার। বেডার এ্যাসিসন্টান হইতাছে ক্যাপ্টেন জমির। ওঃ হােঃ এই বেডারে চিনলেন না? হেই যে একবার বিলাতে বিনা টিকিটে ট্রেনে যাওনের সময় ধরা। পড়ছিল। পরে পাকিস্তান হাই কমিশনের লােক যাইয়া বেডার জামিন আনছিল। আদি বাড়ি ভারতের ইউ.পি. হইলে কী হইবাে, জমির্যায় আসল কামে পাকা। মওলবীসাবে এক মেম মাতারীর লগে লটঘট কারবার কইরা বাইজ্যা পড়ছিল। হেষে হেই মেম সা’বরে হাংগা কইর‌্যা বিবি বানাইছে। অখন জঙ্গী সরকার এই ক্যাপ্টেন জমিররেই ঢাকায় পাড়াইছে। ছক্কু মিয়া হাতের বক ছিরেটটার মাইদ্দে শেষ সুখ টানা দিয়া কইলাে, ভাই সা’ব সেনাপতি ইয়াহিয়ার আরও তেলেসমাতী কারবার রইছে। একটু দম লইয়া কইতাছি।
আমি মেহামত মিয়ারে কইলাম, এই মিয়া ছকু কথা হুনতে হুনতে হা’ কইরা রইলি কীর লাইগ্যা? মুখ বন্ধ কর না হইলে মাছি হান্ধাইবাে কিন্তুক।
ছক্কু গলার মাইদ্দে একটা জোর খ্যাক্রানী মাইরা আবার শুরু করলাে। ইয়াহিয়া সাবে এর মাইদ্দে দালাল চিফ সেক্রেটারি শফিউল আজমরে বাদ দিয়া রাওয়ালপিন্ডির থনে মােজাফফর হােসেনরে আছে। আর এর মছুয়া হুমাউন ফয়েজ রসুলরে Information Secretary বানাইছে। ঢাকা ডিভিশনের বাঙালি কমিশনার আলাউদ্দীনরে ধাওইয়া হেই জিনিষ আছে। বেড়ার নাম আলমদার রাজা কাওয়াল। বেডায় কাওয়ালী গান খুবই লাইক করে বইল্যা হের নাম হইছে আলমদার রাজা কাওয়াল। মেম্বার প্ল্যানিং থনে সুলতানজ্জামানরে খেদাইয়া হাসান জহিররে আমদানী করছে। আর চিটাগাং পাের্টে বিচ্ছুগুলার তুফান কারবার শুরু হইছে দেইখ্যা, হেইখানে কমডাের হােসেনরে খালি চিটাগাং পাের্টের লাইগ্যা আলাদা কইর‌্যা মেলেটারি এ্যাডমিনিসট্রেটর বানাইছে। তলে তলে এইসব কইর‌্যা, বাইর দিয়া কী সােন্দর ঠ্যাটা। ম্যালেক্যারে গবর্ণর আর কাসেম্যা, ইউসুপ্যা, ইসাহিইক্যা, ছলু মিয়া এইগুলারে মিনিস্টার বানাইয়া বইস্যা আছে। হেরা কোন কথা কইতে গেলেই মছুয়া অফিসাররা কয় চাপ, তােমলােগ সব হারু পাট্টি হ্যায়, জো চীজ দেউঙ্গে উছিমে দস্তখত লাগাও।
হ-অ-অ-অ আংরেজী অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখে কি না জানি হইয়াছিল। আমাগাে মেরহামত মিয়া অক্করে ফাল্ পাইড়া উডলাে আইজ আমার দোস্ত ছক্ক অনেক টাইম লাইয়া ফেলাইছে, এলায় আমারে কিছু কইবার দেন। আমি ইশারা করণের লগে লগে মেরামত মিয়া শুরু কইরা দিলাে।
ভাইসাব অনেক Think কইরা দেখছি মরা পাকিস্তানের History টাই খালি মানুষ মার্ডারের History। পয়লা শিয়া মুছলমান মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ পুনজীরে- করাচীর থনে হাওয়া খাওয়াইবার লাইগ্যা জিয়ারতে লইয়া বিষ খাওয়াইয়া মারলাে। হিন্দুস্থানের ইউপির লােক লিয়াকত আলী খান তখন পাকিস্তানের পেরধান মন্ত্রী। বেডায় কী চোটপাট- পাকিস্তানের হগ্গল মানুস নেংটা থাকতে পারে সেটাও আমি দেখতে পারুমডট ডট ডট ডট আমি গদী ছাড়তে পারমু না। রিফিউজি পেরধান মন্ত্রী লিয়াকত আলী রাওয়ালপিন্ডিতে পাঞ্জাবিগাে পাবলিক মিটিং-এ লেকচার দেওনের চিরকিৎ হইলাে। ঘটাং- মন আড়াই ওজনের পেরধান মন্ত্রী লিয়াকত শ্যেষ। এরপর সীমান্ত প্রদেশের চরসাদ্দার থনে পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিটের জন্যি ডাঃ খান সাহেবের মুখ্য মন্ত্রীর গদীতে বহাইলাে। হেই পাঞ্জাবের লাহুরে এক বেডায় যাইয়া বুড়া খান সাহেবরে ছােরা মাইর্যা শেষ করলাে। এইদিকে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ পুঞ্জীর বইন ফাতেমা জিন্না একবার আইয়ুব খানের লগে Contest করছিল গতিকে বিষ খাওয়াইয়া মারা হইলাে। সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের ওস্তাদ খ্রিষ্টান কিলারের লাভার আইয়ুব খানের তিনডা পেয়ারা লােক আছিলাে। এক নম্বরে ইয়াহিয়া খান। আইয়ুব সা’ব এক হাজার কোটি টাকা খরচ কইর‌্যা যখন করাচীর থনে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে হরাইবার বুদ্ধি করলাে, তখন ইয়াহিয়া খানরে এই কারবারের চার্জে দিয়া মাল-পানি কামাইবার চান্স দিলাে। বেডাও ইচ্ছামতাে টেকা বানাইলাে। দুই নম্বরে পাঞ্জাবের কলাবাগের নবাব সা’ব। আইয়ুব খান এই নবাব সা’বরে পশ্চিম পাকিস্তান এক ইউনিটের গবর্ণর বানাইলাে। নবাব সা’বে গুণ্ডামী-বদমাইশী কারে কয় দেখাইয়া দিলাে। ঠাস্ ঠাস্। নবাব সাবের পােলায় নবাব সা’বরে রিভলবারের গুলিতে মার্ডার করলাে। তিন নম্বরে ময়মনিংহের নূরুল আমীন সাবের লাঠি বটতলার উকিল আব্দুল মােনেম খান। সাত বছর ধইরা বঙ্গাল মুলুকে ছদর আইয়ুবের হুকুমে নমরুদ-ফেরাউনের রাজ কায়েম করলাে। গুলি, লাঠি, চার্জ, টিয়ার গ্যাস, বেয়ােনেট চার্জের কত বাঙালিরে যে মারলাে তার হিসাব নাইক্যা। হেষে বনানীতে বাড়ি বানাইয়া আইজ-কাইল ঠেটা মালক্যার লগে ছিক্ৰেটে বাতচিত্ করতাছিল আর শয়তানী বুদ্ধি জোগাইতাছিল। ব্যাস্ বিক্ষুগুলা কারবার কইরা ফালাইলাে! এলায় বুঝছেন- আইয়ুবের তিনমালের দুইডা শ্যাষ বাকি আছে একটা হেইডাই হইতাছে পালের গােদা- ইয়াহিয়া খান। বেডায় দশ লাখ বাঙালি Murder কইর‌্যা তৈমুর লং, চেঙ্গিস খান, হিটলার, মুসােলিনী তােজোরে Defeat কইরা ফালাইছে।
এই দিককার কারবার হুনছেন নি? ঠ্যাটা ম্যালেক্যা পিয়াজীর অর্ডারে সিলেটে গেছে। বেডায় কী রাগ! মছুয়া সােলজার আর যুদ্ধের যন্ত্রপাতি ভরা লঞ্চ-স্টিমারগুলা বিচ্ছুরা দরিয়ার মাইদ্দে ডুবাইয়া দিছে। খবর পাইয়া পাবলিকগাে ভেগা মারণের লাইগ্যা কইছে- এই সব লঞ্চ স্টিমারের মাইদ্দে চাইল-ডাইল আছিলাে। আবার, বেডায় জীবনে নামাজ না পড়লে কী হইবোে, মেমসাব বিবিরে লইয়া হারা জীবন ঘর কইর‌্যা ফুলপ্যান্ট পিন্ধ্যা হযরত শাহ জালালের মাজার শরীফ জিয়ারত কইর‌্যা বুঝাইতে চাইতাছেন যে, হেতােন ইসলামের পায়েরবন্দ। হারা জীবন ধইর্যাই ঠ্যাটায় ফলসিং কারবার কইর‌্যা গেল। হের লাইগ্যাই কইছিলাম ফলসিং কারবার। বাংলাদেশের অখন ফলসিং কারবার চলতাছে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল