You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

অক্টোরব ১৯৭১

হাসবা না কাঁদবাম। খুনী মাওলানা মাওদুদীর জামাতে ইসলামীর মাইনা করা বরিশাল্যা মওলানা আখতার ফারুক ৩১ নম্বর র্যাংকিন স্ট্রিট থনে সংগ্রাম’ নামে ২৪২০টা ছাকুলেশনওয়ালা যে পরচা মানে কিনা খবরের কাগজটা পেরত্যাগ দিন সুবেহ সাদেকের টাইমে পয়দা করতাছে, আর মােহাম্মদ সাখি মিয়া যেইডারে ছাপাইয়া দিতাছে এতাে কইর‌্যা কইলাম এই পরচার মাইদ্দে একটুক হিসাব কইর‌্যা লিখি। বাংলা ভাষাটা যখন তােমাগাে কাছে ফরিন ল্যাংগুয়েজ, তখন লাহুর থনে পাঠানাে মালগুলা তর্জমা করণের টাইমে খেয়াল কইর‌্যা তর্জমা করলেই তাে হয়। না, রাইতের বেলায় বিক্ষুগুলার ডরে তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরনের লাইগ্যা এইডা কী লিইখ্যা থুইছাে? কেউ যদি তােমাগাে জামাতে ইসলামীর ওয়ার্কিং কমিটি থুক্ক-মজলিসে সুরুয়ারে এইসব দেখাইয়া দেয়, তখন তােমাগাে চাকরিটা নট হইলে পােলাপানগাে খাওয়াইবাে কেডা? একমাত্র মাদ্রাসায় মাস্টারি করা ছাড়া তাে’ হে ফারুকা, তােমার আর কোনাে গতিই দেকতাছি না। কিন্তুক বঙ্গাল মুলুকের দখলীকৃত এলাকার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার অবস্থা কীরকম হইছে, তােমার সংগ্রাম কাগজে ১১ই অক্টোবার জামাতে ইসলামীর মজলিসে সুরুয়ার যে প্রস্তাব ছাপাইছাে, হেইডার মাইদ্দেই তাে রইছে। ও-অ-অ খেয়ালই আছিলাে না যে,তুমি আবার মছুয়াগাে নেক্ নজরে আহনের লাইগ্যা বহুত কোশেশ কইর‌্যা বাংলা ভাষা ভুলতে শুরু করছাে। তােমাগাে মজলিসে সুরুয়ার প্রস্তাবে কইছে, “গত ৬/৭ মাস পরেও স্কুলকলেজে-মাদ্রাসায় ক্লাস হচ্ছে না এবং তহবিল নিঃশেষ হয়ে গেছে। গত কয়েক মাস থেকে সকল সূত্র থেকে আয় বন্ধ থাকার ফলে দরিদ্র মাদ্রাসা শিক্ষকরা অনাহারের সম্মুখীন হয়েছেন। মসলিস এই মর্মে অভিমত পােষণ করে যে, দরিদ্র এবং বঞ্চিত মাদ্রাসা শিক্ষদের সরকার পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা না করলে দ্বীন প্রতিষ্ঠানগুলাে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।”
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তাই জামাতে ইসলামীর মজলিসে সুরুয়ার প্রস্তাবে কী। সােন্দর কইয়া কইছে- বঙ্গাল মুলুকের দখলীকৃত এলাকার কোথাও আইজ পর্যন্ত স্কুলকলেজ-মক্তব-মাদ্রাসা ঠ্যাটা মালেকায় চালু করতে পারে নাইক্যা। এই কথাডা কী। জামাতে ইসলাম টিরিক্স কইর‌্যা কইলাে, নাকি অর্থ না বুইঝ্যা কইলাে, ঠিক আন্তাজ করতে পারলাম না। আমাগাে ছক্কু মিয়া অঙ্কা ফাল পাইড়া উডলাে, ভাইসাব, ফারুকার সংগ্রাম পরচামে কেয়া লিখখিস্ হেইডা কওন লাগবাে।’
কইতাছি, কইতাছি, হাউকাউ কইরেইন না। এই খবরের কাগজের মাইদ্দে লিখছে সাতই অক্টোবর ঢাকার বকশী বাজারের মেডিকেল হােস্টেলের গেটে বিচ্ছুগুলা স্টেনগান দিয়া তিনজন রাজাকারকে Clear কইর‌্যা কাইট্যা পড়ছে। রাস্তার পাবলিকরা বিক্ষুগুলারে ধরনের কোশেশ করে নাই দেইখ্যা সংগ্রাম কাগজে কী কান্দন? মনে হয় মওলানা আখতার ফারুকা হেইখানে থাকলে বিচ্চুগাে ধরতে পারতাে আর কী? সংগ্রামে কইছে, আরও যেসব তথ্য জানা গেছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দুষ্কৃতিকারীদের অবস্থান অকুস্থল থেকে বিশেষ দূরে নয় বরং অতি নিকটেই তারা অবস্থান করে। মওলবী সাবরা এদ্দিনে বুঝতে পারছে যে, বিক্ষুগুলা বঙ্গাল মুলুকেই থাকে, আশে পাশেই রইছে। বাইর থনে আহনের কথাবার্তা অক্করে ভােগা। তয় কইয়া দিতাছি, বিচ্চুগাে ধরা মছুয়াগাে কাম না- খামুখা নিরীহ পাবলিকের উপর অত্যাচার কইরেইন না- ভালাে হইবাে না।
কাউট্টা মাওলানা ফারুকার সংগ্রাম কাগজে আরও লিখছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হােস্টেলের গেটে যেসব রাজাকার পড়ল তুললাে এবং আগেও যারা পড়ল তুলছে আর ভবিষ্যতে যেসব রাজাকার পডল তুলবাে, তাগাে ওয়াইপ-পােলাপানগাে মাল-পানি দেওয়া দরকার। কিন্তু ঠ্যাটা মালেকার তহবিল শূন্য। যেইটুকু মাল-পানি আইতাছে সবই মছুয়াগুলার জন্যি রিজার্ভ হইয়া রইছে। জাতিসংঘের সাহায্যে পর্যন্ত ঠ্যাটা মালেকার হাত দেওনের ক্ষেমতা নাইক্যা। জেনারেল পিয়াজী সব মাল-পানি বগলদাবা কইর‌্যা বইছে। হ-অ-অ-অ আর এক খবর হুনছেন নি? বাংলাদশের ইস্যুটারে ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানের মাইদ্দে গেনজাম বইল্যা চালু করণের লাইগ্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া লাড়াইয়ের হুমকী দিতাছে। হেইর লাইগ্যা পাকিস্তানের বর্ডার বরাবর মছুয়া সােলজার খাড়া করণের লগে লগে লাহুর-শিয়ালকোটে হেই কাম Begin হইয়া গেছে। মানে কিনা তুফান ভাগােয়াট কারবার শুরু হইছে। এর মাইদ্দে আবার ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা লাহুররাওয়ালপিন্ডিতে বেলেক আউটের মহড়া দিতাছে। ব্যাস, লেজ তুইল্যা ভােমা ভােমা সাইজের বেড়াগুলা মাতারীগুলারে পিছনে ফালাইয়া সব ভাগতাছে। তেরাে ডিভিশন মছুয়া সােলজারের পাঁচ ডিভিশনের মতাে বঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে বিচ্চুগাে কোবানীর চোটে হেই জিনিষ টাইট হইয়া চিক্কুর পাড়তাছে। আর এইদিকে পাকিস্তান থাইক্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া কপালের ভ্রু কোঁচকাইয়া লাড়াইয়ের হুকী দিতাছে। আবার তেহরানে যাইয়া বিদেশী রাষ্ট্রের প্রধানদের কাছে নানা ধরনের কথাবার্তা কইছুইন।
কারে কইতাছেন? আমারে? কই না তাে? না, না না, আমার এই রকম কোনাে চিরকিৎ নাইক্যা। কিন্তুক সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের ঘেটু প্রাক্তন এয়ার মার্শাল নূর খান, তামাম কাথা কইয়া বইছেন। হেতােনে কইছুইন, পয়লা আক্রমণেই লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি হয়ে যাবে। আরব-ইসরাইলের লাড়াইয়ের সময় এইডাই হইছে। এইদিকে সােভিয়েট রাশিয়ার প্রাভদা কাগজে কইছে, ইসলামাবাদের সামরিক জান্তাই ইন্ডিয়ার লগে লাড়াইয়ের উছিলা খুঁজতাছে। বাংলাদেশের গেরিলাদের কায়কারবার বাইড়া যাওনের গতিকেই সেনাপতি ইয়াহিয়ার এই অবস্থা হইছে। ইউ পি আই এক খবরে কইছে, ঢাকার থেকে মাত্র পাঁচিশ মাইল দূরে হানাদার মছুয়ারা টেরেন চালানাের কোশেশ করছিল। উঁই-ই-ই-ই। কী হইলাে! কী হইলাে! বিক্ষুগুলা মাইন বহাইয়া আর গ্রেনেড চার্জ কইর‌্যা ঝিনারদিতে হানাদার সােলজারভরা একটা টেরেনরে উড়াইয়া দিছে। এতে কইর‌্যা কইলাম ঠ্যাটা মালেকা-পিয়াজী তােমরা হাজার কোশেশ করলেও মছুয়া সােলজারগাে যাতায়াত করার সুবিধার জন্য দখলীকৃত এলাকায় টেরেন ব্যবহার করতে পারবা না। কিন্তু না; আমার কথা হুনলাে না। ঘুইরা ফিইরাই এই টেরেন। চালানাের টেরাই করতাছে আর দলে দলে মছুয়ারা গাবুরমাইরের চোটে আখেরী দমডা ছাড়তাছে। ইউ.পি.আই. খবরের মাইদ্দে আরও কইছে ঝিনারাদিতে তিনডা বগী অক্করে ছেরাবেরা হইয়া গেছে। আর ঢাকা চিটাগাং-এর মাইদ্দে রেল-যােগাযােগ মেরামত হওনের কোনাে চান্স নাইক্যা। মছুয়ারা অখন রেললাইন, রেলস্টেশন আর ব্রিজ গার্ড দেওনের চার্জ লইছে। কিন্তু সেই গুড়ে বালি। দখলীকৃত এলাকার যেইখান দিয়া রেল লাইন-ব্রিজ মেরামত কইর‌্যা টেরেন চালানাের কোশেশ করতাছে, হেইখান দিয়াই বিচ্ছুগুলা একটা না একটা কুফা কারবার কইরা দিতাছে।
মরনে Call করণের গতিকে হেইদিন রাজশাহী-আমনুরায় মছুয়া সােলজারগাে একটা স্পিশিল টেরেন যাইতাছিল- আহারে বিক্ষুগুলা মনের সুখে কারবার করছে। ব্যাস, জনা তিরিশ মছুয়া মাল অক্করে কেদোর মাইদ্দে হুইত্যা বাচ্চা মুরগির মতাে দাপাদাপি কইর‌্যা আখেরী দমডা ছাড়লাে। তবুও নাকি শিক্ষা হয়? ঠ্যাটা মালেকার জেলা কুষ্টিয়ার উথলীতে আবার মছুয়ারা ব্রিজ মেরামত কইর‌্যা কী খুশি। কিন্তু যেই মাত্র সােলজার ভর্তি টেরেনডা একটু স্পিড লইছে লগে লগে দুম-দুমা-দু-দুম্। বিক্ষুগুলা ডিনামাইট দিয়া টেরেনডারে ডাবিশ করছে। এরপর বুঝতেই পারছেন। বিচ্ছুগুলা জংগল থনে বাইরাইয়া অক্করে ছেরাবেরা কারবার কইর‌্যা ফেলাইলাে। আমেরিকান নিউজ এজেন্সি ইউ. পি. আই-এর রিপাের্টে আরও কইছে, বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার মােট ছয়শ’ ফেরির মাইদ্দে চার ফেরি বিচ্ছুরা গায়েব কইর‌্যা ফেলাইছে। বাকিগুলার মাইদ্দে পরায়ই ফাটাফাটি কারবার চলতাছে। দরিয়া দিয়া যাতায়াত খুবই খতনরাক হইয়া পড়ছে।
এ্যাঃ এ্যাঃ। ঠ্যাটা মালেকায় ছিলেট সফর করণের খবর পাইয়া বিচ্ছুগুলা ছাতক এলাকায় বাংলাদেশের ফ্লাগ উড়াইয়া দিছে। সুরমা নদীর উত্তর মুড়া থনে মছুয়া সােলজার অক্করে সাফ হইয়া গেছে। ছাতক এলাকার লগে তখন বাইর দুনিয়ার হগ্গল Connection কাডিং হইয়া গেছে। এইদিকে জেনারেল পিয়াজী পাগলা হইয়া কুমিল্লায় ঘুরতাছে। মাঝে মাঝে বর্ডারে হেইমুড়া কামানের গােলা ছাড়তাছে। এইদিকে হুনছেন নি? সেনাপতি ইয়াহিয়ার ধামাধরা কাগজ পাকিস্তান অবজারভারের মাইদ্দে লেখছে, ‘বঙ্গাল মুলুকের চা বাগানগুলাতে স্বভাবিক জীবন-যাত্রার কোনাে নাম-নিশানা নাইক্যা। এ অবস্থার এতােই থ ক হইছে, যে পাকিস্তান এক সময় বিদেশে চা Export করতাে, হেই পাকিস্তানের অখন বৈদেশিক মুদ্রা খরচ কইর‌্যা ৫০ কোটি টাকার চা Import করতে হইবাে। অবজারভার কাগজের মালিক পাকিস্তানের প্রাক্তন ফরিন মিনিস্টার হরিবল হক চৌধুরীর একটা চা-বাগান রইছে বইল্যাই এই রকম কাঁন্দাকাটি শুরু হইছে। হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম, হসবাম্ না কাঁদবা-বিচচুগুলা আপনাগাে আশেপাশেই রইছে। যেকোনাে টাইমে কারবার হইতে পারে। আপনাগাে মউতের খবরে কান্দাকাটি করণের লাইগ্যা কাক-পক্ষীও পাইবেন না। খালি পাইবেন গতরের মাইদ্দে থু। কিসে নাই চা, ঠ্যাটা মালেকা নাম।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল