You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.03 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

৩ আগষ্ট ১৯৭১

মাদারীর খেইল শুরু হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানে আইজ-কাইল মাদারীর খেইল শুরু হয়েছে। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার এক অদ্ভুত ধরনের পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে নিজেদের গা বাঁচাবার শেষ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলাের কাছে সেনাপতি ইয়াহিয়ার নােমায়েন্দরা মানে কিনা প্রতিনিধিরা চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইসলামিক রাষ্ট্র আইজ শেষ হওনের পথে, আপনাদের কি কিছুই করণের নাই? অন্তত আমাগাে কিছু মাল-পানি দিয়া সাহায্য করুন। ক্যামন ঠাওর করতাছেন? কালে কালে হইলাে কি?- পশ্চিম পাকিস্তানে ইসলাম। হেইখানকার সাবরা সন্ধ্যার সময় বিয়ার খাইয়া রােজা ভাঙ্গে। করাচীর নাইট ক্লাব লা-গুরমে, মেট্টোপােল, প্যালেস, তাজ আর একসেলশিয়রের ন্যাংটা নাচ আর লাহাের, পিন্ডি, মুলতান, শিয়ালকোটের বাইজীগাে খেমটা নাচের মধ্যে হেরা বেয়াদবের মতাে ইসলাম, ইসলাম করছে।
হেইখানে সরাব পিনে দো গল্লিমে বেঠকে, নেহী তাে এইসি জাগাহ্ বাতা দে জাহা পর ইয়াহিয়া-ভুট্টো নেহী হ্যায়’- এইসব কারবার চলতাছে। সুদ, শরাব আর কবির চল যেখানে সবচেয়ে বেশি, তারাই আজ ইসলাম-ইসলাম বলে তারস্বরে চিৎকার করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলাের সক্রিয় সাহায্য চাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই রকমই একটা কুফা অবস্থায় জর্দানের বাদশাহ ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারকে যে সাহায্য দিয়েছে তা উশুল করবার জন্য সেনাপতি ইয়াহিয়ার একজন মেজর জেনারেলকে আম্মানে পাঠিয়ে প্যালেস্টাইনের গেরিলাদের হত্যার Blue-print মানে কিনা মানুষ মারণের নয়া Tactics বলে দিয়েছেন। প্যালেস্টাইনের গেরিলা নেতা ইয়াসির আরাফাত এই ছিক্রেট কতাডা Disclose করেছেন।
এর মাইদ্দে আবার ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার গণচীনরে বুঝিয়েছেন, আমরাই হচ্ছি চীনের আসল দোস্ত। সবচেয়ে ভালাে প্রতিবেশী। আপনারা আমাগাে কাছে যা চাইবেন তাই-ই পাইবেন। সিল্ক রুট বানাইয়া আপনারা আমাগাে জব্বর মহব্বতের দড়ি দিয়া বাঁধছেন। এর উপর আবার তক্ষশীলায় আর জয়দেবপুরে আপনারা গােলাগুলি বানাইবার কারখানা কইরা দিছেন। বিক্ষুগুলা জয়দেবপুরের ফ্যাক্টরিটা নষ্ট কইর‌্যা দিলেও তক্ষশীলারডা ভালােই মাল বানাইতাছে।
এর লগে লগে আপনারা আবার আমাগাে সবচেয়ে দুর্দিনে তৈরী মাল পাডাইয়া সাহায্য করেছেন। তাই ওয়াদা করলাম, বাংলাদেশের গ্যানজাম মিটালেই পাট, চা আপনাগাে পাডামু। কিন্তু এখন যে বিচ্ছুগুলার মাইরের চোটে আন্ধার দেখতাছি- এর কি কোনােই দাওয়াই নাইক্যা? গেরিলা যুদ্ধ তাে আপনারাই আবিষ্কার করছেন?- তা এই গেরিলা যুদ্ধের মােকাবিলা করার কি কোনাে বুদ্ধিই আপনাগাে কাছে নাই? চীন থনে গেরিলা ট্রেনিং লইয়্যা যে কম্যান্ডাে বাহিনী তৈরী করছিলাম বাংলাদেশে যুদ্ধ লাগনের পর তাগাে কোনাে খবর পাইতাছি না। আর বাকি সােলজাররা তাে বিচ্চুগাের মাইরের চোটে এই চাইর মাসই ছেরাবেরা হইয়া গেছেগা।
এদিকে মার্কিনীগাে লগে তাে ইসলামাবাদের সাত-জেনারেলের সামরিক জান্তা তেলেসমাতি কারবার করছে। ওয়াশিংটনে আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের প্রতিনিধি আগা হিলালী সাফ কইছে, ‘আমার ছদর ইয়াহিয়া হইতাছেন, চিয়াং কাইশেক দিয়েমসিগম্যান বী’র অক্করে এক রক্তের ভাই। এছাড়া সেনাপতি ইয়াহিয়া হইতাছেন নাদির শাহের বংশধর। এশিয়ায় ক্যাপিটালিজমরে বাঁচাইবার জন্যি ইসলামাবাদের জঙ্গী। সরকার ওয়াদা করছে।
আমরা এর মাইদ্দেই আওয়ামী লীগারদের লগে লগে বাংলাদেশে আনি-দুয়ানি গাে যে সামান্য বিছন আছে, সেগুলাও শেষ করতাছি। বাংলাদেশের কেইস কিন্তুক হাতের বাইরে চইল্যা যাইতাছে। হেইখান আজ-কাইল বিক্ষুগুলা খুবই উৎপাত শুরু করেছে। আমাগাে অস্ত্রপাতি আর মাল-পানি দিয়া সাহায্য না করলে আমরা কিন্তু নতুন মামুগাে কোলে যাইয়া বইমু। ক্যামন আন্দাজ করতাছেন!- ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের পররাষ্ট্র নীতি কোন্ স্টেজে যাইয়া হাজির হইছে! হেগাে স্টেজ একটাই- বাংলাদেশের গাড়ার মাইদ্দে আটকা পইড়া গায়ের চামড়া বাচানাের জন্যি ইয়াহিয়া-টিক্কা-পীরজাদার দল অহন যে কোনাে দাসখত লেখনের লাইগ্যা এক ঠ্যাং-এ খাড়া হইছে।
কিন্তুক কারবারটার মাইদ্দে কেমন জানি এথি-উথি মনে হইতাছে। মধ্য প্রাচ্যের আরব দেশগুলাে বাংলাদেশের আসল ব্যাপার জানতে পেরে অহন বেশ খানিকটা দোমনা হইয়া পড়ছে। কায়রাে, বৈরুত-দামাস্কাসের খবরের কাগজে বাংলাদেশের রিপাের্ট বাইরানের গতিকেই এই অবস্থা হইছে। এই দিকে আবার গণচীনের কম্যুনিস্টদের মাইদ্দেও কেমন জানি একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে বইল্যা খবর পাওয়া যাইতাছে।
আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তুফান ফাটাফাটি কারবার চলতাছে। সিনেটর এডওয়ার্ড | কেনেডী, সিনেটর গ্যালাঘার মিল্লা নিকসন সরকাররে অক্করে হােতাইয়া ফেলাইছে। হেগাে এই কমিটি ১৪-৭ ভােটে ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকাররে সাহায্য দেয়া বন্ধ করছে। আমেরিকার খবরের কাগজ, রেডিও আর টেলিভিশন বাংলাদেশের ব্যাপারে দিনের পর দিন ধইর্যা Publicity দিতাছে। World ব্যাংকের রিপাের্টের ধূনকররা যেমতে তুলা ধােনে হেই রকমভাবে জঙ্গী সরকারকে ধূনছে। এক রিপাের্টের ঠ্যালায়। Aid Pakistan consortiom-এর হগ্গল সাহায্যই বন্ধ হইয়া গেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, সুইডেন, ইটালি, জাপান, পশ্চিম জার্মানির সব্বাই সেনাপতি ইয়াহিয়ারে ‘ঘাউয়া কইয়া টাকা-পয়সা দেওন বন্ধ করছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবর্ণমেন্টের মধ্যে এখন মারপিট শুরু হইছে। ওয়াশিংটন স্টার কাগজে কইছে ঢাকা আর ইসলামাবাদের আমেরিকান দূতাবাসের অফিসারগাে মাইদ্দে কথা কওন পরায় বন্ধ। আইজ-কাইল হেইখানে বাঙালি আমেরিকান আর পাঞ্জাবি-আমেরিকান বইল্যা দুই রকমের আমেরিকান তৈরী হইছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের স্টাফ গণহত্যা দ্যাখনের পর এর মাইদ্দে ওয়াশিংটনে এক দরখাস্ত পাড়াইয়া ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের সমস্ত রকমের সাহায্য বন্ধের কথা কইছে। মার্কিন কনসাল জেনারেল মিঃ ব্লাড এই দরখাস্তের কোণায় দস্তখত করছেন। এইডা টের পাইয়াই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড সাব ইসলামাবাদ থনে তার নম্বর ‘টু’ সিডনী সা’বরে ঢাকায় পাডাইছেন। সিডনী সা’ব ঢাকায় আইস্যাই কসনাল জেনারেল আর্থার ব্লাডরে জেনারেল টিক্কার লগে মােলাকাতের কথা কইলাে। কিন্তুক মিঃ ব্লাড ঢাকায় ভয়াবহ গণহত্যা দেখনের পর খুনী টিক্কার লগে দেখা করতে অস্বীকার করলাে। হেতনে কইলাে, চাকরির লাইগ্যা পরওয়া করি না। কিন্তু নরঘাতক টিক্কার চোহরা দেখুমনা।’ ব্যস্ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফ্যারল্যান্ড সাব অক্করে রাইগ্যা টং- চব্বিশ ঘণ্টার লােটিশে ব্লাড সা’ব ওয়াশিংটনে ফেরৎ গেলেন।
রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড সাবের আবার একটুক পুরানা ইতিহাস আছে। ইনি যখন জাকার্তায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আছিলেন, তখন হেইখানে পনেরাে লাখ ইন্দোনেশীয় লােককে হত্যা করা হইছিল, আবার ব্যাড়ায় যহন ইসলামাবাদে আইছে, তখন বাংলাদেশে দশ লাখ নিরীহ মানুষরে খুন করা হইলাে। তয় কি বাংলাদেশ আর ইন্দোনেশিয়া এই দুইডা জায়গার গণহত্যার প্ল্যান এই ফারল্যান্ড সা’বই দিছে? ব্যাডার নাম আবার সি.আই.এর লিস্টির মাইদ্দে রইছে। কিন্তু এইবার যেমন বাঙালিগাে গাবুর মাইরের চোটে হের বুদ্ধিতেও আর কুলাইতাছে না। ওয়াশিংটনের থনে তুফান গাইল খাইতাছেবাংলাদেশেও কন্ট্রোল হইলাে না, আবার সাত-সেনাপতির জান্তা নতুন মামুর কোলে বহনের ডর দেখাইতাছে। কেইসটা কি? Mango-Gunny Bag মানে কিনা আম-ছালা দুইডাই যাইবাে নাকি?
হেইর জন্যই কইছিলাম- মাদারীর খেইল শুরু হইছে। পশ্চিম পাকিস্তানের আইজকাইল মাদারীর খেইল শুরু হইছে।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল