৫ আগস্ট ১৯৭১
এঃ হেঃ হেইদিকে বিসমিল্লাহ হয়ে গেছে। সিলেট থনেই কারবার শুরু হইলাে। পরায় সাড়ে চাইর মাস লড়াই হওনের পর মুক্তিবাহিনীর বিষ্টুগুলা এই পয়লা সিলেটের গােরস্তানে একটা C-131 প্লেন ফালইছে। বহু মালপানি খরচ কইর্যা ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার তার চাচা মানে কিনা মার্কিনীদের কাছ থেকে সৈন্য আর রসদ বহনের জন্য যেক’টা C-131 পরিবহন বিমান আনছিল, তার পয়লা কতল হইলাে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার রাস্তাঘাট আর রেললাইন গায়েব হওনের গতিকে জাতির চোটে বিমান বাহিনীর পেরধান এ. রহিম খান ট্যুর কইর্যা এই c-131 পেলেন হানাদার সােলজারগাে ঢওয়াইবার জন্য দিছিলাে। ব্যস্, বিচ্ছুগুলা অহন থাইক্যা প্লেন ফ্যালনের নতুন Tactics হিক্ক্যা গেলগা। ক্যামন বুঝতছেন? বাংলাদেশের খাল-খন্দক, গাড়া-গর্ত, ঝােপ-জঙ্গল আর ক্যাদো-প্যাকের মাইদ্দে ছ্যাল কুত কুত্ খেইলটা কেমন জিওট বাঁধছে। C-131 পেলেন চিনছুইন? ভিয়েতনাম থাইক্যা চাচাগাে লাশ ঢওয়ায় অহন ভাইসত্যাগাে লাশ ঢওয়াইবার লাইগ্যা বাংলাদেশে আনছে।
এদিকে হেরা চিটাগাং কক্সবাজারে বম্বিং করছে। কেন হেইখানে আবার কি হইলাে? এইসব এলাকা তাে আপনাগাে বগলের তলায় কন্ট্রোলের মাইদ্দে রইছে। ওঅ-অ-অ বুঝছি ‘হাে গিয়া ভাই। আহহা এইটা বুঝলেন না? তয় তাে কেইসটা খুইলা কইতে হইবাে। আমাগাে মিটফোর্ড হাসাপাতালে বছর দুই আগে একবার এক ভোেমা সাইজের কাবুলীওয়ালা পেসেন্ট আইলাে। কিন্তু ব্যাড়ায় অক্করে ল্যাড় ল্যাড় করতাছে। একদিনে একত্রিশবার ছােট ঘরে যাতায়াত করণের পর যহন খান সাহেব দেখলাে যে, হারাদিনের মাইদ্দে বেশির ভাগ সময়ই ছােট ঘরেই থাকতে হয়। আর মাঝে-সাঝে বিছানার মাইদ্দে Rest লওনের লাইগ্যা আইতে পারে- তহন ব্যাড়ায় হাসপাতালে আইলাে।
রাইত তখন একটা। একজন মাত্র ব্রাদার নার্স আশীজন রুগীরে সামলাইতাছে। এমন সময় কাবলীওয়ালার ছােট ঘরে যাওনের তাগিদ আইলাে। কিন্তু হেরে কেউ ধইর্যা না। লইয়া গেলে হের পক্ষে ছােট ঘরে যাওন সম্ভব না। তাই খান সাহেব সুর কইর্যা ডাকতে শুরু করলাে, ব্রাদার, ব্রাদার- এই ব্রাদার কা বাচ্চা। মিনিট পাঁচেক ধইর্যা হেই জিনিষ চাইপ্যা থুইয়া খু-উ-ব ডাকাডাকি করলাে। ব্রাদার তহন ওয়ার্ডের আর এক কোণায় রুগীগাে ইঞ্জিশন-ফিঞ্জিশন দিতাছে। হাতের কাম শ্যাষ হওনের পর ব্রাদার কাবলীওয়ালার কাছে আইস্যা জিগাইলাে, ‘কেয়া খান সাহেব চিল্লাচিল্লি কেঁও করতা হ্যায়?’ খান সাহেব তার সাদা-পাতা খাওইন্যা হলদে-কালাে দাতগুলা বাইর কইর্যা কইলাে, ‘হাে গিয়া ভাই, কাম হাে গিয়া। হেই কারবার হইয়া গেছেগা। চিটাগাং-কক্সবাজারে হানাদার সােলজারগাে অহন ‘হাে গিয়া ভাই’ কারবার চলতাছে। না-হইলে নিজেগাে কন্ট্রোলের এলাকায় বম্বিং চলতাছে কেন? আর জাহাজ থাইক্যাই বা গােলা মারতাছে ক্যান?
তেহরানের কায়হান কাগজের রিপাের্টার মিঃ আমীর তেহারীর কাছে লেঃ জেনারেল টিক্কা খান বলেছেন, বাংলাদেশে আইন ও শৃংখলার পরিস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। বহু জায়গা থেকে এখন পাল্টা মার আসছে আর ধ্বংসাত্মক কাজের সংখ্যা অসম্ভব বেড়ে গেছে। ক্যামন, কইছিলাম না? অহন জাতির চোটে ছােট ভাইয়ের ওয়াইপ ভাসুরের নাম লইতে শুরু করছে। এ্যারেই কয় ঠ্যালার নাম জশমত আলী মােল্লা।
এইদিকে আরেক খবর হুনছেন নি? ওয়াশিংটন পােস্টে কইছে, জাতিসংঘের UNICEF-এর যে চাইরশ’ডা মােটর গাড়ি বাংলাদেশে আছিলাে হেইগুলার কোনাে খবর পাওয়া যাইতাছে না। যাইবাে কেমতে? হেইগুলাতে কইরা হানাদাররা Attack করতে আইলে বিক্ষুগুলার বাড়ির চোটে আমেরিকান মর্টার, চাইনিজ মেসিনগান আর জাতিসংঘের গাড়ি- সবকিছু একাকার হইয়া গেছেগা। দান-খয়রাত, রিলিফ-সাহায্য এই সবের নামে যত কিছু পাঠাইবা হানাদাররা Use করবাে- আর বিচ্ছুগুলা দখল করবাে। তা না হইলে বিক্ষুগুলা হাতিয়ার পাইবাে কোনহান থনে? মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা এর মাইদ্দেই তাে সব অস্ত্রপাতি দখল করছে যে, হেইগুলা স্টক কইর্যা রাখনের লাইগ্যা নতুন গুদাম বানাইতে হইতাছে। মাছের তেল দিয়াই মাছ ভাজতে হইবাে। লন্ডনের অবজার্ভার কাগজে কইছে যে বাংলাদেশের হচুপচু মার্কা রাস্তার মাইদ্দে ইয়াহিয়ার সােলজাররা যাতায়াতের ব্যাপারে মহা-মুছিবতে পড়ছে। যে কয়ডা ধ্বচা-মারা হেলিকপ্টার আছে হেইগুলাও বিশেষ কামে আইতছে না। সিলেট-চিটাগাং, কুমিল্লানােয়াখালী, রংপুর-দিনাজপুর আর যশাের-কুষ্টিয়ার বিরাট এলাকা অহন বিচ্চুগাে কন্ট্রোলের মাইদ্দে আইছে। আর খােদ ঢাকা শহরের মতিঝিলে পর্যন্ত দালাল হত্যা শুরু হইছে। রাস্তার পােলাপানে পর্যন্ত দালালগাে কয়, “ঠিক মতন খাওয়া-দাওয়া কইরা লন, কবে না কারবার হইয়া যায়? কি হইলাে হরলিসের বােতল? মানে কিনা ছহি আজাদ কাগজের সম্পাদক ছৈয়দ ছাহাদৎ হােছেন সা’ব- আর কত দালালী করবেন? জামাতে ইসলামীর কাগজ সগ্রাম-সম্পাদক বরিশাল নিবাসী আখতার ফারুক ফর ফর কইরা বেশি উড়াল দিয়েন না- হ্যাষে কিন্তুক পংখী হইয়া যাইবেন। আপনার ওস্তাদ গােলাম আজম কি হিসাব দিছে হােনছেন তাে- নাকি হেইটুক্ বুঝবারও জ্ঞান নাইক্যা। ইসলামের যম গােলাম আজম কইছুইন- সাতাশ এর মধ্যেই জামাতে ইসলামীর সাতশ’ রাজাকার ব্র্যাকেটে গুণ্ডা অহন আজরাইল ফেরেশতার লগে দোস্তালী করতাছে। ফারুক সা’ব ডক্টর হাছান জামান আপনারে বাঁচাইবাে কেমতে? হের ভাই ডক্টর মুনিরুজ্জামানরে মারছে মেলেটারিরা কিন্তুক হেরে ধওয়াইতাছে আজরাইলে।
দেখছেন নি কারবারডা- আপনাগাে লগে একটু কথাবার্তা কইতাছি আর ফাঁকের মাইদ্দে সেনাপতি ইয়াহিয়ার জব্বর কথা কইছে। ক্যারে কি কচ্ছ? হামি কচ্ছি আওয়ামী লীগ না হিন্দুর ভােটে জিতছে। হেগুলার তাে ভােট দেওয়ার কতা ছিল না। রায়ট’ লাগালেই হলাে। হামাগাের মুসলমানরা একশ’ জুনের মধ্যে মাত্র বিশজন আওয়ামী লীগকা ভােট দিছে। তাও শেখ মুজিব ভয় দেখায়্যা ভােট লিছেরে! হামি কইল অনেক চিন্তা কইরা ইডা বার করছি।’
ক্যামন বুঝতাছেন? স্ক্রিনিং অফিসার আলতাফ গহর আবার ময়দানে নামছে। এই আলতাফ্যাইরে চিনলেন না? লন্ডনে কমনওয়েলথ Prime Minister’s সম্মেলনে আইয়ুব খান একদিন Rest পাইছিল। হেইদিন এই আলতাইফা আটান্ন-ষাট বছরের বুড়া ইয়াহিয়ার ওস্তাদ আইয়ুব খানরে পুষ্করিনীর মাইদ্দে গােসল করাইতে লইয়া গেল। এইডারে তেলেসমাতি গােসল কয়। হেই পুষ্করিনীতে বিশ বছরের মেমসাহেব কবি ক্রিশ্চিয়ান কিলার খালি নেংটি পিন্দ্যা কেলী করতাছিল। এই না দেইখ্যা আইয়ুব সাবে ‘ই চিসৃতি উ নাখুরি বুদাম’ কইয়া কিলারের ঠ্যাং ধইর্যা টান দিছিলাে। তারপর বুঝতেই পারতাছেন- আংরেজী খবরের কাগজের মাইদ্দে- কি লজ্জা! কি লজ্জা! আলতাফ গহর সা’ব দৌড়াইয়া আইস্যা করাচী, লাহাের, পিন্ডি, ঢাকার কাগজগুলারে কইলাে, “খবরদার ইসলামী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সম্পর্কে এর একটা কথা যেন বের না হয়।’
সেই আলতাফ গহর আবার ময়দানে নামছে। হের বুদ্ধিতেই সেনাপতি ইয়াহিয়া লেজ তুইল্যা পর্যন্ত দেখলাে না ‘এইডা খাসী না পাড়া। ভড় ভড় কইরা তেহরানের কায়হান কাগজে Statement দিলাে। কিন্তু ব্যাডায় একবারও চিন্তা করলাে না যে গেল ডিসেম্বরে হের মেলেটারিই Election-এ ভােট হওনের টাইমে খাড়াইয়া আছিলাে। এরপর ব্যাডায় তার মেলেটারির জোয়ান গাে Congratulate করছে। আর Result বাইরাইনের পর দেখলাে প্রতি একশ’ জনের ৮৫টা ভােট আওয়ামী লীগে পাইছে। মাইদ্দে ১২ডা ভােট হিন্দুর, বাকি ৭৩ ডা সব বাঙালি মুসলমানের। অন্যদিকে যে ১৫ডা ভােট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গেছে, তার মাইদ্দে Independent তিনডা, দুই ন্যাপে পাঁচডা আর তিন মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি, জামাত, নেজাম আর ওলামা মিল্ল্যা সাতড়া পাইছে। তবুও আলতাফ গহরের Advising-এর ঠ্যালায় সেনাপতি ইয়াহিয়া কইলাে, ‘আওয়ামী লীগ হিন্দুর ভােটে আর ডর দেকাইয়া জিছে।
ক্যামন বুঝতাছেন? হেগাে চান্দি কি রকম গরম হইছে! | হের লাইগ্যাই কইছিলাম, ‘এঃ হেঃ, হেইদিকে বিসমিল্লাহ হইয়া গেছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া অহন খালি কাবুলিওয়ালার মতাে কইতাছে, ‘হাে গিয়া ভাই- হাে গিয়া। আপনারাই আন্তাজ করতে পারেন কি হইয়া গেছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল