You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.10 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

১০ আগস্ট ১৯৭১

কুড়িজন। আইজ-কাইল ২০ জনের বেশি পাঠান আর বালুচ সৈন্য কুর্মিটোলার থেকে বাইরাতে দিতাছে না। আরে নাঃ নাঃ এইডা তাে’….
আঃ হাঃ, এইডা কি শুনলাম? কেলেংকারিয়াস ব্যাপার। ইসলমাবাদের জঙ্গী সরকারের সাতজন সেনাপতি এতােদিন ধইর্যা যে সামরিক জান্তা চালাইতাছিল, হেগাে মাইদ্দে এক কেলেংকারিয়াস ব্যাপার হইয়া গেছে। হেইখনে অহন ফাটাফাটি কারবার চলতাছে। এই ব্যাপারটা আমার আগেই আন্তাজ করা উচিত ছিল। যখনই রেডিও গায়েবী আওয়াজ থাইক্যা নতুন Propaganda লাইনে বাঙালিগাে মাইদ্দে Division হইছে বইলা চঁাচাইতে আরম্ভ করলাে, তখনই বােঝা উচিত ছিল যে, হেগাে নিজেগাে মাইদ্দেই এই রকম একটা দলাদলি হইছে। জুলাই মাসে করাচীতে গভর্ণর সম্মেলনে যহন পাঁচজন গভর্ণরের চাইর জন হাজির হইলাে আর বাংলাদেশের হানাদার দখলীকৃত এলাকার গভর্ণর টিকিয়া খান গরহাজির রইলেন, তখনই খেয়াল করা উচিত ছিল যে হেগাে মাইদ্দে হেই কাম Begin হইয়া গেছে। সেনাপতি টিকিয়া খান একদিকে মুক্তি বাহিনীর বিক্ষুগুলার গাবুর মাইর আর অন্য দিকে গভর্ণরের গদী হারাইবার ডরে ঢাকার থনে নড়তে সাহস পাইলাে না।-যদি ফিইর্যা আইস্য গদী ফেরৎ না পায়?
কী হইলাে? কী হইলাে? পুরা কারবারডাই হুনবার চান নাকি? তয় গােড়ার থনে কইতাছি হােনেন- অক্করে ডেইনগারাস কারবার। এইডা তাে’আর কওন লাগবাে না যে সেনাপতি ইয়াহিয়া হইতাছেন ‘ধাউড় ম্রাট। হেতােনে করলাে কি বাঙালি মার্ডার করণের ষড়যন্ত্র Complete কইরা মার্চ মাসে আকা ভদ্রলােক গবর্ণর আহসান সাবের জায়গায় জেনারেল টিক্কারে নয়া গবর্ণর বানাইলাে । লগে লগে দুনিয়ার মাইদ্দে একটা নতুন History হইলাে। ঢাকা হাইকোর্টের একজন জজ সাহেবও টিক্কাকে নয়া গবর্ণর হিসেবে শপথ নিতে দিলাে না। কেইসটা কি? ব্যাডারে চিনলাে কেমতে? তামাম দুনিয়ায় অক্করে হাসাহাসি পইড়া গেল। হেগাে আব্বাজান ইয়াহিয়া তখন Prestige ঢিলা হওনের গতিকে টিকিয়া খানরে কেবলমাত্র মার্শাল ল’ Administrator বানাইলাে । পঁচিশে মার্চ থাইক্যা দশ লাখ নিরীহ বাঙালি মাইর্যা টিকিয়া খান যখন রক্ত দিয়া গােছল। করলাে, তখন জঙ্গী সরকার তারে দখলীকৃত এলাকার গবর্ণর বানাইলাে। কিন্তুক মওলবী। সা’বরা একটু ট্রিক্স করলাে। টিকিয়া খানের জানী-দুশমন লেঃ জেনারেল নিয়াজীরে। ঢাকায় ইস্টার্ন কম্যান্ডের এক নম্বর কইর‌্যা পাডাইলাে আর রাও ফরমান আলীরে Civil Administrator বানাইলাে- এইডারেই কয় Balancing এলায় বুঝছেন, কারবার কোনহান থনে শুরু হইছে?
এইদিকে ঘাউয়া গবর্ণর টিক্কা খান যখন বুঝলাে যে, বেশুমার বাঙালি মার্ডার করা সত্ত্বেও বাহাতুর ঘণ্টায় কেন বাহাত্ত্বর দিনেও বাংলাদেশ কন্ট্রোল হইলাে না- বরং দিন কা দিন বিক্ষুগুলা তুফান জোরদার হইয়া উডনের গতিকে হানাদার সােলজারগাে অবস্থা অক্করে কেরাসিন হইয়া গেছে, তখন ব্যাড়ায় খালি চিল্লাইতে শুরু করলাে, বাংলাদেশ কন্ট্রোলের মাইদ্দে আইস্যা গেছে- সব কিছু Normal আর হাজারে হাজারে বাঙালি রিফিউজি পাকিস্তান পা-পা-পায়েন্দাবাদ কইতে কইতে ফেরৎ আইতাছে।’ এইসব কথা না শুইন্যা ইসলামাবাদে সেনাপতি ইয়াহিয়া পক পক্ কইর‌্যা বগল বাজাইয়া বিদেশী সাংবাদিক, World Bank-এর মেম্বার আর নানান দেশের পার্লামেন্টের সদস্যদের। দাওয়াত দিয়া বইলাে। আপনারা যে কেউই আইস্যা বাংলাদেশের অবস্থা দেইখ্যা যাইতে পারেন। মওলবী সাব বুঝতেই পারলাে না যে, হেতােনে টিক্কার বােগাচ কথাবার্তায় খাল কাইট্যা কুমির আনলাে। অস্ট্রেলিয়ার সিড়ী থাইক্যা শুরু কইরা কানাডার অটোয়া পর্যন্ত তামাম দুনিয়ার খবরের কাগজ, রেডিও আর টেলিভিশনে দিনের পর দিন ধইর্যা খালি বাংলাদেশের খবরে ভইর্যা গেল। ইয়াহিয়া-টিক্কার নতুন নতুন উপাধি হইলাে।
কেউ তারে দ্বিতীয় হিটলার কইলাে- কেউ কইলাে তৈমুর লং, নাদির শাহ, চেঙ্গিস খান এগাে কাছে শিশু। আমেরিকার CBS টেলিভিশনে কয়েক কোটি লােক। বাংলাদেশের ছবি দেখলাে। কানাডা, ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, সুইডেন, হল্যান্ডের। পার্লামেন্ট বাংলাদেশের ব্যাপারে ছ্যা-ছ্যা কইর‌্যা জঙ্গী সরকারের গতরে থুক দিলাে। World ব্যাংকের মেম্বররা তাগাে রিপাের্টে সেনাপতি ইয়াহিয়ার গবর্ণমেন্টরে অক্করে হােতাইয়া ফেলাইলাে। Aid Pakistan Consortium-এর সমস্ত সাহায্য বন্ধ হয়ে গেল। খােদ আমেরিকায় New York Times, ওয়াশিংটন পােস্ট, সাপ্তাহিক Times, News Week কাগজে এর লগে লগে মুক্তি বাহিনীর বিক্ষুগুলার কার্য কারবারের রিপাের্ট ছাপাইতে শুরু করলাে। লন্ডন শহরে একটার পর একটা বিক্ষোভ আরম্ভ হইলাে। এইসব খবর ইসলামাবাদের ছদ্র ইয়াহিয়ার কাছে আইতেই ঠাস কইরা একটা আওয়াজ হইলাে- ব্যাডায় চিত্তর হইয়া শানের মধ্যে পইড়া গেছিলাে। মাথায় কলসি কলসি পানি ঢাইল্যা ঠিক হওনের লগে লগে মওলবীসা’ব চিল্লাইয়া কইলাে, তামাম দুনিয়া ঝুট হ্যায়। ব্যাস আইয়ুব খানের চ্যালা বুট মহারাজ আলতাফ গহওর ময়দানে নামলাে। পয়লা শ্বেতপত্র ছাপাইলাে। আমরা কিছু কওনের আগেই BBC আর New York Times হেই শ্বেতপত্র অক্করে ছেরাবো কইর‌্যা ফেলাইলাে।
এই দিকে ছদর ইয়াহিয়া একটু ট্রিক্স করলাে- জেনারেল হামিদ, এয়ার মার্শাল এ. রহিম খান আর ভাইস এ্যাডমিরাল হাছন সা’বরে আসল রিপোের্ট আননের লাইগ্যা বাংলাদেশে পাডাইলাে। হেগাে রিপাের্ট না পাইয়া গেরাম দেশে যেতে কইরা পােলাপানে চো পাতা ঘষা খাইলে লাফায় সেনাপতি ইয়াহিয়া হেই রকম ফাল পাড়তে শুরু করলাে আর খালি চিল্লাইয়া কইলাে, ‘এলায় করি কী, ও হামিদ এলায় করি কী? জেনারেল হামিদ ফু কইর‌্যা হাইস্যা দিয়া কইলাে, ‘আমি নিরপেক্ষ। ক্যামন বুঝছেন? হেগাে খেইলডা কি রকম জিওট বাঁধছে।
এইবার ইয়াহিয়া সা’ব তার ভেড়ুয়া সেনাপতি জেনারেল পীরজাদারে ঢাকায় পাডাইলাে। কানে কানে কইলাে, বদমাইশ টিক্কারে সরাইতে পারলে তুমি কিন্তু হেইখানকার গভর্ণর। সেনাপতি পীরজাদা জবাব দিলাে, হায় আল্লাহ্, চঁায় ইকো অন্দর নেহী হু। তব আপকা Order পে ম্যায় ঢাকা যাউঙ্গা। পীরজাদা হেই যে আইস্যা কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ঢুকলাে আর তাে বাইরাইনের নাম করে না। ব্যাডায় হানাদার সােলজারগাে কুফা অবস্থা দেইখ্যা অক্করে থ’ মাইরা গেছে। ‘World-এর Best সােলজারগগা এইডা কি অবস্থা? হাজার তিরিশেকের উপর খুন-জখমি হইয়া গেছে? যারেই জিগায় এক জবাব, বংগালী বিচ্চুলােগ, হামলােগকা ইয়ে হাল কিয়া। এইরকম একটা ক্যাডাবেরাস অবস্থায় সেনাপতি ইয়াহিয়া লেঃ জেনারেল আজররে হানাদার দখলীকৃত এলাকায় নয়া গবর্ণর কইরা পাঠাইলেন। তিন দিন তিন রাইত ধইর্যা আজর সা’ব পাওয়ার লওনের লাইগ্যা বইয়া থাকলাে কিন্তু দুধ কলা দিয়ে যে কাল সাপ পুষছিলাে, হেতােনে ‘না’ কইরা দিছে।
জেনারেল টিক্কা ছদর ইয়াহিয়ার চিঠি ছিইড়া ফেলাইছে- ব্যাডায় গবর্ণরের পােস্ট ছাড়বাে না। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের সাত-সেনাপতির তিনজন টিক্কার পিছনে আছে। হেই খুঁটির জোরে টিক্কা সা’ব ‘কোৎ পাড়তাছে। এই খবর না পাইয়া সেনাপতি ইয়াহিয়া পুরা ব্যাপারডারে চাপি করনের লাইগ্যা অক্করে পাগলা হইয়া গেছে। চাচা আর মামুরা এইডা টের পাইলে যদি আবার ডট ডট ডট কারবার হইয়া যায়।
এরপর ছদর ইয়াহিয়া ১০ই আগস্ট বঙ্গাল মুলুক Tour করণের প্রােগ্রাম কেনচেল করছেন। হেইখানকার কারবার কিছুই বােঝা যাইতাছে না। হের মাইদ্দে আবার মুক্তি বাহিনীর বিক্ষুগুলা আইজ-কাইল খােদ ঢাকা টাউনেই ইচ্ছামতাে কারবার শুরু করছে। আর মফস্বল এলাকায় মাইর-রে মাইর। ইয়াহিয়া সা’ব অহন নিজের জালে নিজেই জড়াইয়া পড়ছেন। হেইর লাইগ্যাই কইছিলাম কেলেংকারিয়াস ব্যাপার। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের মাইদ্দে অহন কেলেংকারিয়াস ব্যাপার হইছে।
হেইখানে আইজ-কাইল ফাটাফাটি কারবার শুরু হইছে। ছাগা ডরায় বাঘারে, বাঘা ডরায় ছাগারে…।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল