You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.27 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

২৭ আগস্ট ১৯৭১

দিন কয়েক আছিলাম না। এ্যার মাইদ্দেই ঢাকার রেডিও গায়েবী আওয়াজ কি খুশি। মিছা কথা কইতে কইতে মাইক্রোফোনগুলা অক্করে থুথু দিয়া ভরাইয়া ফেলাইছে। ওহ্ হােঃ কেন আছিলাম না হেই কথাডা তাে কই নাই, না! আমি বিক্ষুগুলার কারবার দেখতে গেছিলাম। হেরা আমারে ড্যাং দোলা কইর‌্যা লইয়া গেল। কোন কোন জায়গায় গেছিলাম হেইগুলা কমু কিনা ভাবতাছি। থাউক- এই কামড়া রেডিও গায়েবী আওয়াজ হাইদ্যা লইছে। কি হইলাে? কি হইলাে? বুঝলেন না? তয় কইতাছি- যখনই হুনবেন যে রেডিও গায়েবী আওয়াজ কইতাছে অমুক অমুক জায়গার থনে হেগাে মছুয়া সালজাররা ভাসুরদের একেবারে হটিয়ে দিয়েছে, তখনই বুঝবেন সেই সব জায়গা আর আশেপাশের বিরাট এলাকায় বিক্ষুগুলার তুফান কারবার হইছে আর ভােমা ভােমা জিনিষগুলা লেজ তুইল্যা দৌড়াইতাছে।
ওঃ হােঃ বুঝছি, বুঝছি, বুঝছি- মুখটা তারা কইরেইন না, মুখটা তারা কইরেইন । আপনারা যে রেডিও গায়েবী আওয়াজ শােনা একেবারে বাদ দিয়েছেন সেটা আমার খেয়াল ছিল না। আমারে মাফ কইর‌্যা দিয়েন। কেইসটা আমি খুইল্যাই কইতাছি।
ক্যারে হা-করা, ক্যারে আউয়্যাল? আও করিছু না ক্যা? আ’লু, আ’লু, আ’লুক্যাচার লিয়া আ’লু। বছর কয়েক আগের কথা- আমি ট্রেনে বােনার পাড়া থেকে বগুড়া যাচ্ছিলাম। কমপার্টমেন্টে একদল কলেজের ছেলে W.T. মানে কিনা Without Ticketএ যাচ্ছিল। এদের মধ্যে একটা ছেলে নিষেধ করা সত্ত্বেও পেরতেকটা স্টেশনে নাইম্যা প্ল্যাট ফরমে ঘুইরা ঘুইর্যা চেকার লক্ষ্য কইরা Running টেরেনে উঠতাছিল । সােনাতলা থাইক্যা টেরেনডা ছাড়নের পর হেই পােলাডা দৌড়াইয়া উড়লাে। কিন্তু হের পিছনে লগে লগে সাদা পােষাক পরা আর একটা ব্যাডায় অইলাে। পােলায় কিন্তুক বুঝতেই পারলাে না যে হেতনে কি জিনিষ লগে আনছে। খালি কমপার্টমেন্টের হেই মুরা থাইক্যা হের এক দোস্ত চিল্লাইয়া উডলাে, ক্যারে হা-করা ক্যারে আউয়্যাল! আও করিছু না ক্যা! আ’লু আ’লু, আলু- ক্যাচাল লিয়া আ’লু। মানে কিনা সেইতাে এলি খালি সঙ্গে করে মুর্তিমান ঝগড়া’ নিয়ে এলি আর কি? এর পর বুঝতেই পারতাছেন চেকার আর পােলাগুলার মাইদ্দে কি রকম একটা গ্যানজম কারবার শুরু হইলাে।
হেইদিন খুলনা জেলার বসন্তপুর, কালীগঞ্জ, শ্যামপুর, মওতলা, ঈশ্বরপুর, পাইকগাছা এলাকায় এইরকম গ্যানজাম কারবার দেখছি। বিগুলা দিন কয়েক আগে। World-এর বেষ্ট পাইটিং পাের্সের কাছ থনে যে সব হামান দিস্তা আর চেঁকির মতাে যন্ত্রপাতি দখল করছিল, হেইগুলা লইয়া রওয়ানা হইলাে। যাইতে যাইতে এঃ হেঃ পাখি, মানে কিনা রাজাকার পাইলাে। এইগুলারে ধরা আর মারা তাে অক্করে পানি পানি। বিক্ষুগুলা করলাে কি ধাওয়াইয়া সবগুলারে Clear কইর‌্যা ফেলাইলাে। কিন্তু দুইডারে পলাইতে দিয়া বাইনাকুলার ফিটিং কইর‌্যা দেখলাে কোন মুহি যায়? আর মানে বুঝছেন?
ভােমা ভােমা মছুয়াগুলা কোন জায়গায় বইস্যা চা পার্টি-শিক কাবাব খাইতাছে, হেইডা আন্দাজ করণ আর কি? এর মাইদ্দে গেরামের মাইনষে কইল মালগুলা হেইমুহি আছে। এর পরের কারবার আর কইতে পারমুনা- আহা রে মচুয়াগুলার দুঃখে আমার বুকটা ফাইট্যা যাইতাছে। বিক্ষুগুলা দুই তিন ভাগে যাইয়া হেই কারবার কইরা দিলাে। এলায় বুঝছেন- আল্লাহ্র দুনিয়ায় কেমন সুন্দর কারবার চলতাছে। জঙ্গলের মাইদ্দে যেই রকম ফেউ-এর চিৎকার শুনলে শিকারি বুঝতে পারে যে মানুষ খেকো জিনিষটা কোনদিকে আছে- হেইরকম ধাওয়া খাইলে, রাজাকারগুলা যেইদিকে দৌড়ায় হেইদিকেই ধচা-মারা মাল রইছে।’
এইদিকে বিচ্ছুগুলার কারবার হওনের পর দেহি কি-একটা মছুয়া ব্যাডায় খালি চিল্লাইতাছে, ইয়ে রাজাকার লােগ দুশমনকো রাস্তা দেয়া। ইতনা ট্রেনিং দিয়া কে হামলােকা তরফ দৌড়াে মত্ দু তরফ দৌড়াে, তবৃভি ইয়ে লােগ হামারা তরফ মুসিবত লেকে আ গিয়া। লগে লগে আমার মনে পইড়া গেল হেই বগুড়ার সােনাতলার কথা ক্যারে হা-করা, ক্যারে আউয়্যাল, আলু, আ’লু, আ’লু- ক্যাচাল লিয়া আ’লু।।
হ-অ-অ-অ। এইদিককার কারবার হুনছেন নি? অক্করে তেলেসমাতি ব্যাপার। বাংলাদেশের বাহাদুরাবাদ ঘাট দিয়া যারা যাতায়াত করছুইন তাগাে মনে থাকনের কথা। ঢাকার থনে ট্রেনডা ঘাটে যাইয়া হাজির হওনের লগে লগে খালি হৈচৈ আর চিৎকার। হের মাইদ্দে সবচেয়ে বড় আওয়াজটা হইতাছে জাহাজ ছাড়নের বহু দেরী আছে, এই যে কলিমুদ্দিনের হােটেল- খাবেন ভালাে পাকা পায়খানা আছে। প্যাসেঞ্জার যাইয়া খাইতে বইয়া খালি বিসমিল্লাহ কইর‌্যা লােকমা মুখে দেওনের লগে লগে মালিকের লােকজন চিল্লাইয়া উঠলাে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করেন ফুলছড়ির জাহাজে সিটি মারছে। এরপর বুঝতেই পারতাছেন- প্যাসেঞ্জারগাে মাইদ্দে কি রকম একটা ক্যাডাভেরাস অবস্থা হইলাে। হেরা কলিমুদ্দিনের পাল্লায় পড়ছিল।
আইজ-কাইল নয়া কলিমুদ্দিন বাইরাইছে। হের হাতে, মুখে, গতরে খালি রক্তের দাগ। এই নয়া কলিমুদ্দিনের নাম হইতাছে আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। ব্যাডার Advisor রা কইছে হপনের মাইদ্দেই যখন খাইতাছেন, তখন ছ্যার রসগােল্লা খাইতে দোষটা কি?” তাই হাতের কাছে নাই জাইন্যাও মওলবীসা’বে আওয়ামী লীগ মেম্বারগাে মাইদ্দে ভাগাভাগি করণের লাইগ্যা কেমন সােন্দর ট্রিক্স কইর‌্যা ৮৮ জনকে বেআইনী ৭৯ জনরে আইনী কইয়া ফাল পাড়তাছে। আর কলিম উদ্দিনের মতাে চিল্লাইতাছে ‘আ যাও, আ যাও, সব কই আ যাও। সব Normal হাে গিয়া।
ঢং… কি হইলাে? কি হইলাে? ঢাকা টাউনে আবার বােম ফুটছে। ঘেটাঘ্যাট, ঘেটাঘ্যাট, ঘেটাঘ্যাট। কি হইলাে? কি হইলাে? চালনা আর চট্টগ্রাম বন্দরে মার্কিনি, চীনা, জাপানি আর পশ্চিম পাকিস্তানী জাহাজ বিক্ষুগুলার গাবুর বাড়ির চোটে ফাতা-ফাতা হইয়া গেছে। ইয়াহিয়া সা’বে ফুচি মাইরা দ্যাহে কি? খুলনার দক্ষিণমুরা বাংলাদেশের ফ্লাগ পত্ পত্ কইর‌্যা উড়তাছে।
রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, কুষ্টিয়াতেও একই কারবার। এই রকম একটা অবস্থায় লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফের রিপাের্টার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার অবস্থা যে রকম দাড়িয়েছে তাতে ইয়াহিয়া সা’বরে আর উপ-নির্বাচন করতে হবে না। আইজ-কাইল Candidate পাওনই মুস্কিল। দালালরাও কেইসটা বুঝতে পারছে। হের মাইদ্দে আবার বিচ্ছুগুলা তুফান হেইকাম করতাছে। তবুও যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। আমাগাে কলিমউদ্দিন থুরি ইয়াহিয়া খান এখনও আওয়াজ করতাছে, আইস্যা পড়েন, আইস্যা পড়েন। ব্যাডা একখান!
হেইর লাইগ্যা কইছিলাম, দিন কয়েক আছিলাম না। এর মাইদ্দে নয়া কলিমউদ্দিন ইয়াহিয়া খান সাব চান্সিং করছুইন- কিন্তু হেই গুড়ে বালি।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল