৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
খুলেছেন। সেনাপতি ইয়াহিয়া আবার খুলেছেন। সেনাপতি ইয়াহিয়ার আবার মুখ খুলেছেন। প্যারিসের দৈনিক ‘লা ফিগারাে’র এক সংবাদদাতার কছে ইয়াহিয়া সা’বে। বলেছেন যে, তার সৈন্য বাহিনী বাংলাদেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা একেবারে কন্ট্রোলের মধ্যে এনেছেন, তবে….। আঃ হাঃ আমাগাে ছক্কু মিয়া ইয়াহিয়া সাবের লেকচার শেষ হওনের আগেই চিল্লাইয়া উঠলাে, বুছছি, বুছছি। পাকিস্তানের পয়লা জামানায় নুরুল আমীন। সা’বও এইরকম একটা কারবার করছিল। ছক্কুর আক্যা চিল্লানীতে ঠাটারী বাজারের কাউল্যা একটু ডরাইয়া গেছিলাে। গলাটার মাইদ্দে দুইতিন বার জোর খ্যাকরানি মাইরা ধমক দিয়া কইলাে, আবে এই ছক্কু, কেইসটা ঠিকমতাে বুঝতে দে। আগেই চিল্লাইলে বুঝমু কেমতে?’ ছক্ক একটা বাইশ হাজার টাকা দামের হাসি দিয়া কইলাে, তয় কইতাছি হােন। আমরা যেমন পাকিস্তানের পয়লা জামানায় ঢাকার মাইদ্দে রােজার টাইমে বিড়ি মুখে দিয়া রাস্তাঘাটে বেরােজদারগাে ধাওয়াইয়া বেড়াইয়া ইসলাম রক্ষা করতাম, হেইরকম আমাগাে শরাব খাওইন্য অফিসারগুলা হেই সময় ইসলামের ইজ্জত রক্ষার জন্যি নূরুল আমীন সা’বরে দিয়া একটা আইন বানাইছিল। হেই আইনের যে কেতাব হেই কেতাবের পয়লা পাতায় লেখা আছিলে সমস্ত বঙ্গাল মুলুকে মদ খাওয়া হারাম ও বেআইনী। তবে দুই নাম্বার পাতার মাইদ্দে কয়েকটা কিন্তুক’ রইছিল। মানে কিনা এইসব অবস্থায় রঙীন পানি খাওয়া যাইবাে। পচ্চৎ কইর্যা একগাদা পানের পিক ফেলাইয়া ছক্ক একটুক কাউলার দিকে Angle কইর্যা নজর মাইরা আবার বাইতে শুরু করলাে। বুঝলি কাউল্যা, ‘এই কিন্তুকের পয়লাডা হইতাছে, আগের থাইক্যা অভ্যাস থাকলে, হেই ব্যাডায় মাল টানতে পারবাে। দুই নম্বরে হইতাছে, ডাক্তারে যদি লিইখ্যা দেয়, তয় যে কোনাে ব্যাডায় মদ খাইতে পারবাে। আর তিন নম্বরে রইছে, যারা। মুসলমান না, তাগাে মদ খাওনের ব্যাপারে কোনােই নিষেধ নাইক্যা। মানে তুমি যদি কোনাে হিন্দু দোস্তরে লইয়া বারে যাও, তয় কেউই তােমারে না করতে পারবাে না, আর পারমিটেরও দরকার হইবাে না। ক্যামন বুঝতাছস্।।
কাউলা কইলাে, ভালােই বুঝতাছি। এলায় ক’ এইডার লগে ইয়াহিয়া সাবের কথাবার্তার মিলডা কোনহানে পাইলি? তয় তুমি বুঝছে না। দুইডা কারবারের মিল হইতাছে কিন্তুকের মাইদ্দে’। বুঝলি। মদ বেআইনী করণের আইনডার মাইদ্দে যেমন কিন্তুক দিয়া মাতালগাে সব মুস্কিল আসান কইর্যা দিছে। হেই রকম ইয়াহিয়া ছাবের “কিন্তুকের মাইদ্দে হগুগল কিছুই রইছে। মওলবী সা’বে কি সােন্দর কইছেন, সব কন্ট্রোলের মাইদ্দে- কিন্তু….। বুঝলি কাউল্যা এই কিন্তুকের মাইদ্দে কি রইছে জান? এই কিন্তুকের মাইদ্দে রইছে, মুক্তি বাহিনীর বিক্ষুগুলা চিটাগাং-চলনায় দেশী-বিদেশী জাহাজ ডুবাইছে, সিলেটে লাইন কইর্যা লঞ্চ গাধাবােট দখল করছে, কুমিল্লা নােয়াখালীতে বাড়ির চোটে মছুয়াগুলারে তক্তা বানাইছে, খুলনার দক্ষিণ মুড়া মুক্ত করছে, কুষ্টিয়া যশাের, রাজশাহী চাপাইনওয়াবগঞ্জ, রংপুর-দিনাজপুর ডট ডট ডট কারবার করছে। এর লগে লগে শুরু হইছে খালি নাইক্যার কারবার। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার রেল-লাইন- নাইক্যা, রাস্তাঘাট-নাইক্যা, ব্রিজ-কালভার্ট- নাইক্যা, গবর্ণমন্টের শাসন- নাইক্যা, স্কুল-কলেজ- নাইক্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য- নাইক্যা, কলকারখানার কাম- নাইক্যা, খাবার-দাবার- নাইক্যা। চারদিকে যহন খালি গুম গুম কইর নাইক্যার আওয়াজ উঠতাছে তখন সেনাপতি আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান খালি একটা কিন্তুক জুইড়া দিয়া চোপাবাজি করতাছে সব কিছু কন্ট্রোলের মাইদ্দে। কিন্তুক…।’
‘আবে এই কাউল্যা, এলায় বুঝছস্ এই কিন্তুকের মজমাডা। এর মাইদ্দে আবার ইয়াহিয়া খান সা’বে একটু কইর্যা বইলাে, টিক্কা চা’বের কাছে হিসাব চাইলাে। তাই বইল্যা ভাববেন না যে গরু-মমাষের হিসাব। মছুয়া মানে কিনা সােলজারের হিসাব চাইলাে। জেনারেল পীরজাদা জমা-খরচের খাতা দেইখ্যা ছদর ইয়াহিয়াকে বলেছে, ছ্যার টিক্কার নামে পাঁচ ডিভিশন সােলজার আছে। কিন্তুক ব্যাড়ায় খরচের হিসাব। দিতাছে না। তবে জেনারেল পিঁয়াজীর টেলিগ্রামে ডেইনগারাস খবর রইছে। পাঁচ মাসের লাড়াইয়ে পুরা এক ডিভিশন গায়েব, হাসপাতালে আর Missing লিস্টিতে আরও এক ডিভিশন রইছে। এইগুলা স-ব ‘কিন্তুকের কারবার। খান সা’বে Think কইর্যা দেখলাে ঠিকই তাে ব্যাটা টিক্কা তাে খালি চাপাবাজি কইরাই চলতাছে। আর এই দিকে World-এর বেস্ট সােলজারগুলা অক্করে শ্যাষ হওনের পথে, কেইস কি?
পাঁচ মাসের মাইদ্দে এতবার টেরাই নিলাম বাংলাদেশ ট্যুর করতে পারলাম না। ব্যাডায় খালি কয় সব ঠিক আছে কিন্তুক আপ বঙ্গাল মুলুকমে মত্ আইয়ে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার হানাদার বাহিনীর সমস্ত সেক্টর কম্যণ্ডারগাে হাতের মাইদ্দে আইন্যা ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার টিক্কা খানের টিকি ধইরা টান দিছে। খেইল খতম, পয়সা হজম। ১৪৭ দিন বাদ টিক্কা খানের গবর্ণরগিরি গেছেগা। ফ, কা, ফরিদ-হরিবল-খাজাআজম-সবুরগাে মতাে এই ব্যাড়াও একজন হারু মিয়া হইলাে। রক্ত দিয়া গােছল কইর্যাও টিক্কা মিয়া হাইরা গেছে।
গােয়েরিং, আইখম্যানের লগে টিক্কার নামও খুনী হিসাবে History-তে লেখা থাকবাে। কিন্তু কেইসটা কি? টিক্কা খানের ডিসমিস্ আর দাঁতের ডাক্তার আব্দুল মােত্তালেব মালেকারে নয়া গবর্ণর করণের কোথাও কোনাে আলােচনা পর্যন্ত হুনতাছি না কেন? ও বুঝছি, এইডারেই কয় নতুন বােতলে পুরনাে মদ। এইডা হইতাছে ছদর ইয়হিয়ার Internal ব্যাপার। ব্যাডায় টিক্কারে নতুন হ্যাংগা করলাে কি করলাে না, তাতে মাইনষের কি আসে যায়? খালি জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে মিডাই-এর দোকানের সামনে চাম-উঠা মালগুলার মতাে ঘেউ ঘেউ কইরা উঠছে ‘ঠকাইছে, ঠকাইছে। ছদর ইয়াহিয়া ঠকাইছে। মালেকারে নয়া গবর্ণর করার মানে কিন্তুক জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষেমতা দেওন না। ইয়াহিয়া সা’বে হারু পাটিগুলারে দিয়া নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। ইয়াহিয়া সা’বে তিন মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, জামাতরে ঘেড়ি ধইর্যা মহাজাতীয় সংস্থা- গ্রাণ্ড ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন- মানে কিনা মহা গ্যানজাম পাটি তৈরী কইর্যা ভুট্টো সাবের পিপলস পার্টিরে ল্যাং মারণের তাল তুলছে।
এই দিকে অক্করে ফাতাফাতা কারবার। হেইদিন বিক্ষুগুলার গাবুর বাড়ির চোটে United Nations Children Emergency Fund-এর সিল মারা এক গাদা গাড়ি মছুয়াগুলার কাছ থনে লইয়া আইছে। তারপর ভােমা ভােমা লাশগুলার কোমরের মাইদ্দে দ্যাখে কি- জাতিসংঘ থাইক্যা ভূখা বাঙালি পােলাপানগাে লাইগ্যা টিনের মাইদ্দে কইরা যেসব খাবার পাডাইতাছে, হেইসব খাবার রইছে। এই প্রমাণ পাইয়া অহন জাতিসংঘের অফিসগুলা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতাছে। ইউরােপের তিনডা দেশ নাকি এই ব্যাপারে উথান্ট সাবের লগে ফাটাফাটি করণের লাইগ্যা তৈরী হইতাছে। হেইর লাইগ্যা ছকু মিয়া কইছে, হেগাে সব ব্যাপারের মাইদ্দেই কিন্তুক রইছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল