১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
হাতি ঘােড়া গেল তল, মালেক্যা বলে কত জল?’ ছক্ক অক্করে ফাল পইড়া উঠলাে। আঃ হাঃ কাউলা, তাের Brain যেমন লাগে আইজ-কাইল খুইল্যা গেছেগা। এটা কাথা যা’ কইছস না? অক্করে লাখ টাকা দামের কাথা কইছাে। কাউল্যায় একটা গুয়ামুরী হাসি দিয়া কইলাে, মালেকায় মিছা কথা কওনের ব্যাপারে আমাগাে মেরহামত মিয়ারে। Defeat দিয়া দিছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া বহুত খোজ খবর কইরা এই ঠেটা মালেক্যারে বাইর করছে।’
ছক্কু কইলাে, কী হইলাে? কী হইলাে? এই বেডারে আবার ‘ঠেটা’ কইলি কীর লাইগ্যা?
‘বুঝলি ছকু, আমাগাে ঢাকার মাইদ্দে তাে বহুত মালেক রইচে- এর মাইদ্দে আবার একটা বাড়লাে। তাই ঠিক মতন ঠাওর করণের লাইগ্যা এইডার নাম থুইছি ঠ্যাটা মালেকা- এলায় বুঝছাে!’
ছক্কু গলার মাইদ্দে একটা খ্যাকরানী মাইরা কইলাে, “ঠিকই কইছাে এই বেড়া ঠ্যাটা মালেকা বিসমিল্লাহর থনেই মিছা কাথা কইয়া বউনী করছে। চব্বিশ বছরের মাইদ্দে দুইডাই তাে ইলেকশন হইলাে। একটা গেল বছর আর একটা চুয়ান্ন সালে । এইবার তাে’ মুছলিম লীগ পাইছে গােল্লা। আর চুয়ান্ন ছালে ৩০৯ জন মেম্বারের মাইদ্দে মুছলিম লীগের যে নয়জন কোন্ পাইড়া জিছিলাে, হের মধ্যে তাে ঠ্যাটা মালেকার নাম পাতি পাতি কইরা খুঁজাও বাইর করতে পারলাম না। বেডায় কড়া কিছিমের ভােগা মারছে। আবার কইছে, আমি জানি হগুগলে আমারে দালাল কয়। কিন্তু আমি ছদর ইয়াহিয়ার দালাল না। আরে হুনছাে নি কারবারটা? | কাউল্যায় হাতের আংগুল দিয়া দেখাইয়া কইলাে, যার হেননের, হে ঠিকই হুনছে। ওই-ই দেখ সেরকটু মােহাম্মদের চামওঠা ঘােড়াটা পর্যন্ত হাতাসে। আমি কই, ইয়াহিয়া সা’বে এই বেডাডারে চিনলাে কেতে? দিব্বি ঠ্যাটা মহারাজ কইয়া দিলাে, আওয়ামী লীগওয়ালারা টিক্কা সা’বরেই গবর্ণর চাইছিলেন। বেডায় নিজের দাম বাড়াইবার জন্যি অক্করে চোখ-মুখে মিছাকাথা কইতে শুরু করছে। আবার কইছে, শীঘি। আওয়ামী লীগের লগে হেতােনের দেখা হইবাে। অবশ্যি হেই টাইম এখনও আহে নাইক্যা।
ছক্ক কইলাে, ঠ্যাটা মালেকা এই কাথাডা একেবারে খরাপ কয় নাই। ঠিকই তাে’ খুলনা-যশাের, কুষ্টিয়া-রাজশাহী, রংপুর-দিনাজপুর, সিলেট-চিটাগাং আর কুমিল্লানােয়াখালীর কারবার শেষ হওনের লগে লগেই বিচ্ছুগুলা মালেকার লগে মােলাকাতের ব্যবস্থা করতাছে। শ্যাষ্যের সেদিন কি ভয়ংকর ভাইসব- শ্যাষ্যের সেদিন কি ভয়ংকর!
হ-অ-অ-অ এই দিককার কারবার হুনছেননি? ‘তােমারে বধিবে যে, গােকুলে বাড়িছে সে।’ রয়টারের খবরে বলা হয়েছে, খােদ চিটাগাং টাউনের মাইদ্দেই আবার বিচ্ছুগুলার কারবার হইছে। চিটাগাং-এর কোর্ট বিল্ডিং-এ টাইম বােম ফাটনের গতিকে দুইজন মছুয়া সােলজারের হেই কাম হইয়া গেছে আর ১৭ জন গতরের মাইদ্দে ব্যান্ডেজ বাঁধছে। এরই মাইদ্দে আবার টাংগাইলের বল্লভবাড়ির ভাটিতে ধলেশ্বরী নদীতে বিচ্ছুগুলা একটা ডেইনগারাস্ কাম করছে। জনা চল্লিশেক মছুয়া মিইল্যা এক স্টিমার বােঝাই মেসিনগান, কামান, গােলা, মাইন আর ডিনামাইট লইয়া ফুলছড়ি ঘাটের দিকে রওয়ানা হইছিলাে। বল্লভবাড়ির কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর এলাকায় আইতেই বিচ্ছুগুলার একটা মর্টারের আওয়াজ হইলাে উঁই-ইই। নদীর মাইদ্দে লগে লগে কয়েকটা স্পিড বােটের আরে কী দৌড়। মনে লয় অলিম্পিকে পাডাইলে এই বেডারা অক্করে ফাস্ট হইয়া যাইতাে। এরপর বুঝতেই পারছেন, সতেরােটা গয়না নৌকা ভইরা বিচ্ছুগুলা মেশিনগান, গােলাগুলি, মাইন, ডিনামাইট লইয়া অক্করে গায়েব। সবই মার্কিন আর চীন দেশের তৈরী সমরাস্ত্র। হেরপর জাহাজে খাতির জমা কইরা আগুন লাগাইলাে। এখনও যদি কেউ বল্লভবাড়ির ভাটিতে যান, তয় দেখতে পাইবেন একটা ভােমা সাইজের স্টীমারের খালি মাথাটা পানির উপর জাইগ্যা রইছে।
আরে এইডা আবার কী? এইডা হইতাছে, সিরাজগঞ্জের চোরা মতিনের সােহাগপুর ট্রান্সপাের্টের একটা লঞ্চ। পাট লইয়া রওয়ানা হইছিলাে। কিন্তুক বিচ্ছুগুলা কারবার কইর্যা ফেলাইলাে। বেডা চোরা মতিন অখন ভাগছে। কিন্তু বগুড়ার চান্দাইকোনাশেরপুরে প্রাক্তন গবর্ণর মােনেম খাঁর সাগরেদ সালাম রব্বানীরে কারা জানি ধাওয়াইয়া বেড়াইতাছে। এইদিকে চাপাই নবাবগঞ্জ-রাজশাহী এলাকায় বিক্ষুগুলার ডবল-আপ কারবারে মছুয়াগুলা ভাগতাছে আর চিল্লাইতাছে, ‘হামি ক্যা নানীর বাড়ীত আচ্ছিনুরে, হামি ক্যা নানীর বাড়ীত আছি।
ওঃ হােঃ বেশি হাউকাউ কইরেইন না; হাউকাউ কইরেইন না। পাকিস্তানে অখন কীরকম কারবার চলতাছে, তা’ কইতাছি- একটুক দম লইতে দেন। হেইদিন লন্ডন থাইক্যা বাঙালি পােলাপানরা কইছে যে, চান্স পাইলেই পি.আই.এ. বিমানে কী জানি কারবার হইবাে। ব্যাস্ আর যায় কোথায়? পাকিস্তানে আইজ-কাইল সাজ সাজ রব। পইড়া গেছে। পেরতেকটা পি.আই.এ. বিমানে মেলেটারি গার্ড বইবার ব্যবস্থা হইতাছে। এলায় কেমন বুঝতাছেন? মছুয়াগুলার গুর্দার মাইদ্দে কী রকম ডর লাগছে।
এইদিকে আবার নয়া বায়েস্কোপের শুটিং শুরু হইছে। হিরু হইতাছে ইয়াহিয়া সা’ব আর হিরুয়িন? হেইডাও পােলা- নাম জুলফিকার আলী ভুট্টো। হিসাব কইরা দেখছি এর মাইদ্দে নয় দফায় দুই বেডার মাইদ্দে বত্রিশ ঘণ্টা ধইর্যা গুফতাগু হইছে। কিন্তু অখন? ছাগা ডরায় বাঘারে, আর বঘা ডরায় ছাগারে। ভুট্টো সা’বে শরীলডা ম্যাজ ম্যাজ করতাছে কইয়া দশ নম্বর বেঠকে যায় নাইক্যা। আর ইয়াহিয়া সা’বে ভুট্টো-টিক্কার ডরে রাওয়ালপিন্ডির থনে কোনাে ট্যুরে যাইতে সাহস পাইতাছে না। এইডারেই কয় তেলেসমাতী কারবার। হেইর লাইগ্যা ডক্টর কিসিংগারের পর US ASSTT, SECY. মিঃ এ্যাবলায়ার ঢাকা-ইসলামাবাদ সফর করছে। হেরা ছাফ কইছে, যেভাবে পারাে বাংলাদেশে অন্ততঃ দখলীকৃত এলাকা বেসামরিক শাসনে শান্ত ও ঠাণ্ডা রইছে বইল্যা প্রমাণ করতে হইবে। না হইলে কিন্তুক আর মাল-পানি দেওয়া মুস্কিল হইবাে। হেই জাতির চোটেই বিচ্ছুগুলার ছেরাবেরা কারবার চলা সত্ত্বেও ছদর আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান চাপাবাজি চালাইয়া যাইতাছে। আমি হগুগলে মাফ কইরা দিছি, টিকারে সরাইয়া মালেকারে বহাইছি। বঙ্গাল মুলুকে আমি মন্ত্রীসভা বানামু- কত কিছু। কিন্তু খাড়া বড়ি থােড়, থােড় বড়ি খাড়া। কেন্দ্র আর প্রদেশ মিইল্যা ৪৫৫ জন আওয়ামী মেম্বারের মাইদ্দে ১২ জনের সমর্থনও জোগাইতে পারে নাইক্যা? ব্রিটেনের খবরের কাগজের মাইদ্দে কইছে, কী রকম তাজ্জব কারবার? ইয়াহিয়া খান লাখ লাখ মানুষ মার্ডার করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ মেম্বারগুলা কীভাবে সব মুক্ত এলাকায় হাজির হইয়া গবর্নমেন্ট বানাইছে? আর কেমতেই বা একটার পর একটা এলাকা মুক্তিবহিনীর কন্ট্রোলের মাইদ্দে চইল্যা যাইতাছে। এইসব মুক্ত এলাকায় আবার বাংলাদেশ সরকার নিজেদের অফিসারও বহাইতাছে।
কিন্তু বাচ্চা পােলাপান যেতে কইর্যা আগুনের গরম না বুইঝাই হাত দিয়া বহে, আমাগাে ঠ্যাটা মালেকা হেই রকম কিছু আন্তাজ না কইরাই গবর্ণর হইছুইন। বেড়া একখান! দালালীর Compitition-এ ফকা-ফরিদ আর হরিবল হকরে হারাইয়া ঠ্যাটা মালেক্যা ফাল পাড়তাছে। একবারও চিন্তা কইর্যা দেখে নাই, যেখানে টিক্কার মতাে জেনারেল হাজারে হাজার মছুয়ারে আজরাইল ফেরেশতার দরবার আর ১৮ হাজার মছুয়ারে হাসপাতালে পাঠাইয়া ভাগছে, সেখানে কুষ্ঠের ঠ্যাটা মালেকায় ময়দানে আইছে। হেইদিন হেলিকপ্টারে চইড়া বেড়ায় ফরিদপুর ঘুইরা আইস্যা কী খুশি! হেরই লাইগ্যাই কইছিলাম, হাতি ঘােড়া গেল তল, মালেকা বলে কত জল?
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল