২৭ জুলাই ১৯৭১
কামডা সারছে। আবার এক আংরেজ রিপাের্টার হেগাে কামডা সারছে। ফসৎ কইর্যা বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা সম্পর্কে এমন একটা ছিক্রেট কথা কইয়্যা ফেলাইছেন যে ইসলামাবাদ, করাচী, লাহাের, পিন্ডি আর ঢাকায় জোর দৌড়াদৌড়ি শুরু হইছে। রয়টারের সংবাদদাতা ফ্রিড ব্রিজল্যান্ড বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা সফর কইর্যা অক্করে লন্ডন ফেরৎ যাওনের পর এক রিপাের্টে কইছেন, এইবার আর হাজারের কারবার নাইক্যা। ফরিদপুর, বরিশাল এলাকার থনে একবারে চাইরের থাইক্যা পাঁচ লাখ বাঙালি ইন্ডিয়ার দিকে রওনা হইছে। পর্বতের উপর থাইক্যা যেমূতে ধ্বস নামে হেই রকম একটা কারবার হইতাছে।
সেনাপতি ইয়াহিয়ার সরকার কেবল রক্তমাখা হাত রুমালের মুইছা দুনিয়ারে কইতে শুরু করছেন, আমরা বাঙালিগাে লগে খুবই হামদরদ আর মহব্বতের ব্যবস্থা করছি আর ছদ্র ইয়াহিয়া সা’বের কসম খাওয়া লাখ লাখ হ্যান্ডবিল ছাড়ছি, তখনই রয়টারের এই রিপাের্ট হগুগল কাগজের মাইদ্দে ছাপা হইছে। হ্যান্ডবিল পাওনের পর ছাপােষা আর নিরীহ মানুষগুলা ভাবতে শুরু করলাে, টিক্কা-নিয়াজীর দল মাস চারি আগে হ্যান্ডবিল না দিয়াই যহন দশ লাখ লােক মারছে, তহন এইবার হ্যান্ডবিল দেওনের পর না জানি কি অবস্থা করে? হের মাইদ্দে আবার বিচ্ছুগুলার ক্যাকা মাইরের চোটে আইজকাইল মছুয়ারা অক্করে ঘাউয়া হইয়া উঠছে।
লগে লগে জঙ্গী সরকারের সমস্ত প্রােপাগান্ডা বিশারদের দল একত্র হইয়্যা জব্বর প্ল্যান বাইর করলাে। বাংলদেশের সব কিছু Normal আর ইয়াহিয়া-টিক্কা-নিয়াজীর মহব্বতে দিল জারে-জার কইরা দলে দলে রিফিউজি ফেরৎ আইতাছে- এই রকম একটা পাবলিসিটি না করতে পারলে বিদেশ থনে মাল-পানি পাওনের কোনােই আশা নাইক্যা। তাই মওলবী সাবরা গবর্ণমেন্টের মাইনা করা এ.পি.পি.-রে কইলাে- ধ্যানা ধরণ Report ছড়াে রিফিউজি ফেরৎ আইতাছে।’ ব্যস্, বাংলাদেশের একটা ম্যাপ লইয়্যা এ.পি.পি.-র ব্যাডাগুলা রাওয়ালপিন্ডির অফিসের টেবিলের উপর হুমড়ি খাইয়া পড়লাে।
এমন সময় টেলিফোন আইলাে ‘পহেলা Report মে নব্বই হাজার রিফিউজি ওয়াপস্ লাও। আর যায় কোথায়? সা’বে কইছে বউ-এর ভাই, আহ্লাদের আর সীমা নাই। এ.পি.পি.-র একজন Staff কইলাে, যদুর রিপাের্ট পাইছি সিলেট-ময়মনসিংহের হেই মুড়া দিয়া বিদেশী মেহমান আর খবরের কাগজের রিপাের্টাররা ট্যুর করে নাইক্যা। তাই পহেলা Report-এ এই এলাকা দিয়াই নব্বই হাজার রিফিউজি ফেরৎ আনলে ভালাে হয়। আর একজন কইলাে, “আরে ধূর? কেউ এই রিপাের্ট বিশ্বাস করবাে না। ময়মনসিংহ-সিলেট এলাকার Reception counter গুলাতেই এই নব্বই হাজার রিফিউজির জায়গাই হইবাে না। বড়জোর আঠারাে হাজারের জায়গা হইতে পারে। আগের জন চেয়ার থনে লাফাইয়া উইড্যা কইলেন, ব্যস, আর চিন্তা নাইক্যা। রিফিউজিরা যহন হাডনের ব্যাপারে খুবই Expert তহন হাজার আঠারাে রিফিউজিরে সােজা বড় রাস্তা দিয়া দিনে দুপুরে Reception Counter-এ হাজির করাে আর বাকি আটাত্তর হাজাররে গায়েবি রাস্তা- মানে কিনা অদৃশ্য রাস্তা দিয়া দেশে ফেরৎ আনাে।
এরা সবাই কিন্তু নিজেগাে বাড়িঘর গাই বাছুর সব ঠিকঠাক দেখতে পাইবাে। ক্যামন। বুঝতাছেন?
‘যেমন প্ল্যান, হেই রকম কাজ। এ.পি.পি.-র টেলি-প্রিন্টারে খটাখট, খটাখট জব্বর খবর তৈরী হইলাে। নিজ কলের সূতােয় প্রস্তুত কাপড়। আর যায় কোথায়?
রেডিও গায়েবী আওয়াজ থাইক্যা সাইরেন বাজলাে। সকাল-দুপুর-রাইত তারস্বরে চিৎকার হইলাে নব্বই হাজার-নব্বই হাজার রিফিউজি ফেরৎ আইছে। যেখান এ.পি.পি.র বাপ রয়টার কইতাছে চাইরের থাইক্যা পাঁচ লাখের দল বরিশাল-ফরিদপুর থাইক্যা। ইন্ডিয়ার দিকে রওয়ানা হইছে। হেই খানে এ.পি.পি.রাওয়ালপিণ্ডির থনে রিপাের্ট দিলাে ‘আইছে, আইছে, ফেরৎ আইছে। নব্বই হাজার ফেরত আইছে।’- কেইসটা কেমন বুঝতাছেন? | জঙ্গী সরকার এক নাগাড়ে চাইর মাস ধইর্যা চিল্লাইতাছে, বঙ্গাল মুলুকমে সব কুছ Normal হ্যায়।’ হেইখানকার পরিস্থিতি এতােই Normal হইছে যে, করাচীতে ন্যাশনাল ইকনমিক কাউন্সিলের মিডিং-এ পাঁচজন গবর্ণরের একজন অনুপস্থিত। হেই একজন হইতাছেন ছ-এ-সূরা জেনারেল টিক্কা খান। বাংলাদেশের অবস্থা খুবই Normal কিনা তাই ব্যায় করাচীতে যাইতে পারলেন না। তবে উনি কোথায় গেছেন। তার একটা রিপাের্ট পাওয়া গ্যাছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলাগাে আচম্বিত মাইরের চোটে হানাদার বাহিনীর অবস্থা কেরাসিন হওনের গতিকে টিক্কা সা’বে হেগাে মনের মাইদ্দে জোশ আননের লাইগ্যা নিজেই সফরে বাইরাছেন। কুমিল্লার গুণবতীর এক ভাঙ্গা ব্রিজের ধারে সেনাপতি ইয়াহিয়ার পেয়ারা সেনাপতি টিক্কা খান একটুক ট্যুরে গেছেন। হেইখানে বিচ্চুগাে মাইরের চোটে হানাদার বাহিনীর অবস্থা অক্করে কুফা।
এর মাইদ্দে আবার জেনারেল টিক্কা একটা ফরমান জারী করছেন। হেতনে কইছেন ২৭শে জুলাই-এর মাইদ্দে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার হগুগল দোকান খুলতে হইবাে। ক্যামন ব্যাডা একখান। যেমন লাগে হের অর্ডার হইলেই স স কইর্যা হল দোকান খুইল্যা গেল আর কি? আর হের সােলজারগাে লুট করনের আর একবার Chance হউক আর কি?
আহহা এইদিকে চইত্ কারবার হইছে। রাও ফরমান আলীর ম্যাট্রিক পরীক্ষা লওনের চিরকিত হইছিল। হেগাে রেডিও মর্সিয়া গাইতে শুরু করলাে ছাত্র-ভাইরা যদি কোনােমতে পরীক্ষার হলে আইতে পারেন, তা হইলেই পাশ।’ কেমন সােন্দর এলান। কিন্তুক পরীক্ষার হলে ছাত্রের থনে মেলেটারির নম্বর বেশি হইয়া গেলােগা। ঢাকা টাউনে এগারাে হাজার candidate মাত্রক আটশ আইলাে। হের মাইদ্দে সাড়ে সাতশ’ হেই জিনিষ। আর মফস্বল এলাকায় টু-টু।
এই দিকে ঢাকার আসল খবর হুনছেন নি? মুক্তি বাহিনীর বিক্ষুগুলা হেগাে গ্যাস বাইর কইর্যা ছাড়ছে। এ.এফ.পি.-র এক খবরে কইছে গেরিলারা তিতাস গ্যাসের অনেকগুলা পাইপ উড়াইয়া ফেলাইছে। এর আগে কয়েকটা পাওয়ার সাব স্টেশনে গেরিলারা হাত বােমা মারছিল। এলায় বুঝছেন, ঢাকা টাউন আইজ-কাইল কি রকম Normal হইছে?
তাই হেরা অহন নীলামের কারবারে লাইগ্যা পড়ছে। কবে না জানি চিল্লাইয়া কইতে শুরু করে, এইবার আসল নীলাম ২০ হাজার আহত আর ৭০ হাজার তাজা কিন্তুক ডর খাওইন্যা সােলজার নীলাম হইবাে। হ-অ-অ-অ এই নীলাম কেননের লাইগ্যা আমেরিকা আর চীনের মাইদ্দে কি দরাদরি? একজনে পাঁচ কইলে আরেক জন দশ কয়। হের লাইগ্যাই কইছিলাম হেগাে কামডা সারছে।
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল