২৪ জুলাই ১৯৭১
চাইর মাস। আইজ লইয়া বাংলাদেশের লড়াই চাইর মাস পুরা হইলাে। লড়াই-এর শুরুতে হেগাে আরে চাপা রে চাপা। World-এর Best সােলজারগাে কাছে তাে এই রকম লড়াই অক্করে পানি পানি। দুশমন গাে হাতে কোনাে অস্ত্রপাতি নাইক্যা। নিয়াজী টিক্কা-মিঠার দল ঘন ঘন সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে মেসেজ পাডাইলাে বাহাত্তর ঘণ্টার মাইদ্দে সব কুচ ঠিক কজা কর লেঙ্গে। হেরপর বুড়িগঙ্গা দিয়া কত পানি গেলােগা আর কত যে বাহাত্তর ঘণ্টা শ্যাষ হইলাে তার ইয়ত্তা নাই। কিন্তুক বাংলাদেশ কন্ট্রোল হওয়া তাে দূরের কথা অহন ডি-কন্ট্রোল হইতে চলছে। পশ্চিম পাকিস্তান থনে মােট পাঁচ ডিভিশন সােলজার আইছিল- হের মইদ্দে আড়াই ডিভিশন লাপাত্তা। পনেরাে হাজার পুলিশ আনছে টাঙ্গাইলে আতকা মাইর খাওনের পর মুক্তি বাহিনীর নাম হুনলেই হেগাে খালি ঠ্যাং কাঁপে। নর্দান রেঞ্জার্স, গিলগিট স্কাউট আর লাহাের রেঞ্জর্সের ব্যাডাগুলা কেন জানি না বাংলাদেশের দেড়হাতের মাইদ্দে যাইতেই চায় না। রাইত হইলেই খালি কান্দে। এই চাইর মাস ধইর্যা পিআই এর প্লেনগুলা পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ দিয়া ঢাকা ভােমা ভােমা লাশগুলারে ঢওয়াইতে ঢওয়াইতে World Record কইর্যা বইছে। আর হাসপাতালগুলাতে No vacancy, গতরে ব্যান্ডেজ বাধা ব্যাডাগুলা খালি হুইত্যা হুইত্যা চিল্লাইতাছে, “আরে এ ইয়াহিয়া, তুমনে ইয়ে কেয়া কিয়া?’
এই চাইর মাসে হেরা নিজেগাে টাকা নিজেরাই বেআইনী ঘােষণা করছে। নিজেরাই ব্যাংক লুট করছে। এক্সপাের্টের বদলে সিংহল থাইক্যা চা আর চীন থাইক্যা নিউজ প্রিন্ট আমদানীর ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় পাট বােননের প্রােপাগাণ্ডা কইর্যা আবার ক্ষেতের পাট বাত্তি হওনের আগেই বিচ্চুগাে ডরে কাড়তাছে। টাউনগুলা কামান-ট্যাঙ্ক দিয়া নষ্ট করণের পর বিদেশী মেহমানগাে দেখান লাগবাে বইল্যা মেরামত করতাছে। সতুর লাখ বাঙালি খেদাইয়া আবার ইংল্যান্ড-আমেরিকার জাতির চোটে Reception Counter খুইল্যা ভাই মুসলমান’ বইল্যা চিল্লাইতাছে। হেইখানে পাঁচটা ঘেঁকী কুত্তা যাইয়া হাজির হইছে। আমি কই কি? হেগাে চিনলাে ক্যামনে?
সেনাপতি ইয়াহিয়া পয়লা দিন কয়েক Internal Affiar বইল্যা গলাবাজী করছিল। পরে জাতিসংঘরে ডাইক্যা আইন্যা ঢাকায় অফিস বানাইয়া দিছে। World Bank রে দাওয়াত কইর্যা জুতার বাড়ি খাইছে। আর ইন্ডিয়ারে যুদ্ধের ডর দেখাইয়া কইছে ‘হেগাে লগে মামু আছে। এই চাইর মাসে ইয়াহিয়া সা’ব এম.এম. আহম্মকরে প্যারিস, মােহর আলী-দীন মােহাম্মদরে লন্ডন, ভূট্টো রহিমরে তেহরান আর একজন প্রাক্তন ফরিন মিনিস্টাররে নিউইয়র্ক- অটোয়াতে পাঠাইছে। কিন্তু রেজাল্ট শূন্য। আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান পহেলা হারু পার্টির লীডারগাে দিয়া কাম চালাইতে চাইছিল, তারপর। আওয়ামী লীগের দুই-চাইরজন হেই জিনিষ বাইর কইর্যা Publicity করতে চাইছিল। আর হগুগলের শ্যাষে আটাশে জুন তারিখের ফর্মুলা। এইগুলা সব অহন চাঙ্গে উড়ছে। | কারণ? বিচ্ছু। এই চাইর মাসে লাখ লাখ বিক্ষুরা যে গেরিলা ট্রেনিং লইতে শুরু করছে তার মাইদ্দে মাত্র কয়েকটা দল ময়দানে নামছে। লগে লগে খেইল খুবই জইম্যা উডছে। ঢাকা টাউনের মাইদ্দেই অহন এইসব গেরিলারা হাতের নিশানা ঠিক করতাছে।
মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়াতে, গেরিলারা হানাদার সােলজারগাে অক্করে ছ্যাচ্ছেড়া কইর্যা ফেলাইছে। পাগলা হাতি যেমতে কইর্যা কলাগাছ খাইতে যাইয়্যা হাতি-ধরা। খেদার মাইদ্দে পড়ে, ইয়াহিয়া সাবের সােলজার ঠিক তেমতে কইর্যা ফাদের মাইদ্দে পড়ছে। আর গেরিলারা হেগাে মাইর্যা সুখ করতাছে। তিন দিক দিয়া বাড়ির চোটে হেরা খালি ইয়া নফসি, ইয়া নফসি করতাছে।
যশাের এলাকায় গেরিলাগাে চোরাগােপ্তা মাইর শুরু হইছে। সাতক্ষীরা খুলনায় দালাল আর রাজাকাররা রােজই দুই চাইর জন কইর্যা আজরাইল ফেরেশতার লগে Hand-shake করতাছে। রাজশাহীতে অহন খালি পজিশন দ্যাহা দেহি চলতাছে।। দিনাজপুর-রংপুর এলাকায় সমানে চুপচাপ কারবার চলতাছে। সিলেটে হানাদাররা Second Line of Defence করণের লাইগ্যা খালি ভাগতাছে। কুমিল্লা টাউনে মুক্তি বাহিনী কামান দিয়া গােলা মারতাছে। এইখানে আবার টিক্কা-নিয়াজীর চিরকিৎ হইছিল। ফেনী-কুমিল্লা বড় রাস্তাডা গায়েব হওনের পর হেগাে ট্রেনে কইর্যা সােলজার পাড়ানাের খায়েশ হইছিল। লগে লগে কয়েকটা বড় ব্রিজ হাওয়া হইয়া গেল। আর নােয়াখালীহেইখানে One way traffic.ফেনীর থনে যে মেলেটারির দলই চরের দিকে যায় তারা আর ফির্যা আহে না। পাবলিকেই হেগাে তামুক বাইর করতাছে। হেইখানে খালি আচম্বিত কারবার চলতাছে।
এই রকম কারবার দেইখ্যা পালের গােদা জেনারেল আবদুল হামিদ খান দুই দুই বার বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা সফর করছেন। আর নৌবাহিনীর চিপ্ ভাইসএ্যাডমিরাল হাছন সা’ব অহন ঘুইরা ঘুইর্যা ভানুমতীর খেইল দেখতাছেন। টিক্কানিয়াজী আরাে দুই ডিভিশন সােলজার চাইয়্যা পাডাইছেন দেইখ্যা হাছন সা’বে অহন। Enquiry করতে আইছেন। এই না দেইক্যা আমেরিকার এক কাগজের মাইদ্দে লিখছে। বাংলাদেশ আর ভিয়েতনামের ব্যারামের মাইদ্দে কোনােই ফারাক নাইক্যা। ভিয়েতনামেও এমতেই কারবার শুরু হইছিল এইখানকার মাডি ভিয়েতনামের থাইক্যাও পিছলা । সতেরাে বচ্ছর ধইরা আমেরিকান টাকায় পশ্চিম পাকিস্তানে যে আর্মি বানানাে হইছিল, বাংলাদেশে মাত্র চাইর মাসের যুদ্ধেই হেরা অক্করে ছেদা-বেদা হইয়া গ্যাছে গা। ভিয়েতনামেও যেতে পয়লা দিয়েম সরকার ফরাসিরা ভাগােয়াট হওনের পর আমেরিকার কাছে পুলিশ এক্সপার্ট চাইছিল, সেনাপতি ইয়াহিয়া সরকার হেইরকম একটা কারবার করছে। | ওয়াশিংটনে সিনেটর এডােয়ার্ড কেনেডী এই ছিক্ৰেট কথাডা ফাঁস কইরা কইছেন, ‘যেমন লাগে আমেরিকা ভিয়েতনামের মতােই বাংলাদেশের ক্যাদোর মাইদ্দে হান্দাইতে শুরু করতাছে।’ US Aid Director ডঃ হাওয়ার্ড রীস্ স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন পুলিশ এক্সপার্ট রবার্ট জ্যাকসন শিগগিরই ঢাকায় যাইতাছেন। কেইসটা কি? এর মানে বুঝতাছেন? ইয়াহিয়া সাবের সােলজারগাে খতম-তারাবী হওনের টাইম হইছে। কিন্তুক ভিয়েতনামে আমেরিকানরা পাঁচ লাখ সৈন্য নামাইয়া গেরিলাগাে গাবুর মাইরের চোটে চুল ছিড়তাছেন আর মান-সম্মান লইয়্যা কাডনের চান্স খুঁজতাছে। হইখানে বাংলাদেশের ব্যাপারে অহন হেগাে নিজেগাে মাইদ্দেই ফাটাফাটি শুরু হইছে। একদল ‘ইয়েচ’ কয় তাে আরেকদল ‘নাে’ কইতাছে। আমেরিকান গবর্ণমেন্টের মাইদ্দে আগে কিন্তুক এই রকম হয় নাইক্যা। আর রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজগুলা তাে রােজই সেনাপতি ইয়াহিয়ার নাঙ্গা তসৃবির ছাপাইতাছে। ইংলন্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ইটালি, ডেনমার্ক-এই সব দেশ আগে থাইক্যাই কইতাছে, আমরা কিন্তুক আর বেলতলায় যামু না। বাংলাদেশের লােকসংখ্যাই হইতাছে সাড়ে সাত কোটি। হেইখানে এক রকম ধরতে গেলে খালি হাতেই মুক্তি বাহিনীর বিষ্টুগুলা খান সেনাগাে চিত্তর কইর্যা ফ্যালাইছে। এর মাইদ্দে আবার লাখ লাখ গেরিলা ট্রেনিং লইতাছে।।
হেইগুলা ময়দানে আইলে যে কি অবস্থা হইবাে হেই কথা চিন্তা কইর্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া অহনই ইন্ডিয়া, ব্রিটেন, ইসরাইলি হগলরেই গাইলাইতে শুরু করছে। হের লাইগ্যাই ব্যাডারে এতাে কইর্যা কইলাম এক মাঘে কিন্তুক শীত যায় না। হবায় তাে খেইল শুরু হইছে- অহন কান্দলে চলবাে কেতে?
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল