১৯ জুলাই ১৯৭১
আছে। মাল আছে। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার বহুত্ পুরানা ফাইলপত্র ঘাইট্যা আইয়ুব খানের টাইমের একটা Original মালের খবর পাইছে। এম.এম. আহম্মক আর দরবার আলী শাহ মিল্যা পকেটের রুমাল দিয়া পুরানা ফাইলটা মুইচ্ছা ভিতরে ফুচি মাইরা দ্যাহে কি, এক আংরেজ প্রফেসারের নাম লেখা রইছে। কোণার মাইদ্দে নােট রইছে ফরিন পাবলিসিটি করণের টাইমে কোনাে রকম গ্যানজাম কারবার করণের দরকার হইলে এই মাল খুবই কামে লাগবাে। তয় খালি হাত তাে আর মুখে ওঠে না। হেই জন্যি এই মালেরে কামে লাগাইতে হইলে ফরিন একচেঞ্জে মাল-পানি দেওন লাগে।
লাহােরের মঞ্জুর কাদেররে চেনেন? হেই মঞ্জুর কাদের এই আংরেজ মালের পহেলা খরিদ্দার। তহন সেনাপতি ইয়াহিয়ার ওস্তাদ আইয়ুব খান সা’ব তার ‘বেছিক ডেমােক্রেসি’র প্রােপাগাণ্ডা শুরু করছিল। ইংল্যান্ড-আমেরিকার জাতির চোটে আইয়ুব খান দুনিয়াটারে ভােগা মারণের লাইগ্যা তহন বেছিক ডেমােক্রেসির ‘আদিও অকৃত্রিম ডেমােক্রেসি’ বইল্যা চালু করণের কোশেশ করতাছিল। মঞ্জুর কাদের সা’ব বেছিক ডেমােক্রেসির ফ্লাগ লইয়্যা ঢাকা ইউনিভ্যর্সিটিতে লেকচার দিতে আইস্যা পােলাপানের ধাওয়া খাইয়্যা অক্করে লন্ডন যাইয়্যা হাজির। হেই সময় কাদের সা’ব এই আংরেজ মালের খোঁজ পাইলাে। দাম-দর ঠিক হওনের পর এই আংরেজ সা’বে ইংলন্ডের কাগজগুলার মাইদ্দে বেছিক ডেমােক্রেসির প্রশংসায় অক্করে গুলগুল্যা হইয়া পড়লাে। এলায় বুঝছেন? এই মালডা কি রকম জিনিষ? এর নাম প্রফেসর রাব্রুক উইলিয়াস। ব্যাডা একখান?
লন্ডনের পশ্চিম পাকিস্তান হাইকমিশন অফিস থাইক্যা মাল-পানি বুইঝ্যা পাওনের পর আর তােতা পাখির মতন কথাবার্তা মুখস্ত কইর্যা এই আংরেজের বাচ্চা করাচীতে আইস্যা সব ওগলাইয়া ফ্যালাইছেন। লন্ডনের হাইকমিশনার সাব একটুক ভুল কইরা সমস্ত কারবরডা গড়বড় করছেন। হেতনে প্রফেসর সা’বরে কয় নাইক্যা যেসব কথা হিকাইয়া দিলাম, হেইগুলা বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকা Tour করণের পর কওন লাগবাে। আগে কইলে কোনােই কামে আইবাে না।
ধর্মের কল বাতাসে লড়ে। তাই প্রফেসর উইলিয়ামস সা’বে বাংলাদেশ সফরের আগেই লন্ডন থাইক্যা করাচী আহনের লগে লগে সাংবাদিকগাে কাছে কইয়্যা। ফেলাইছেন, বাংলাদেশ অক্করে Normal আর হেইখানে ইয়াহিয়া সাবের সােলজাররা এমন কিছুই করে নাইক্যা যার জন্যিই হৈ চৈ করণ লাগবাে। ক্যামন বুঝতাছেন? লন্ডনেও দুই চারটা হেই জিনিষ পাওয়া যায়। আর কি রকম মাল-পানি খাইলে একজন আংরেজ প্রফেসর এইরকম কথা কইতে পারে? | আর এই দিকে গেইট-কিপারের খবর হুনছেন নি? আহ্হা এতােকিছু খুইল্যা কইতে গেলে তাে মহামুসিবত্! তবুও কইতে হইবাে। খুবই খেয়াল কইর্যা হুইনেইন। আমাগাে মেহামত মিয়া হেইদিন হােসেনী দালানের বগলে বইয়্যা ছক্কর লগে রাজা-উজীর মারতাছিল। আঙ্কা মেহামত মিয়া কয় কি? ‘আবে এই ছকু হুনছােসনি? আমাগাে কালুর পােলা কাউলা একটা জব্বর চারি পাইছে। ছক্কু লাফাইয়্যা উইড্যা কইলাে, ‘তয় তাে এইডা খুবই Good News. কাউলা কি কামে লাগছে?’ মেরহামত মিয়া ফচ্চত কইর্যা পানের পিক ফ্যালাইয়া কইলাে, কাম? কি কস্ ছকু?- জব্বর কাম পাইছে। কাউলা এমন সােন্দর একটা চাকরি পাইছে যে, আইজ-কাইল রােজই রাইতে হের দোস্তগাে পিকচার দেখাইতাছে।’
‘কি কইলি? এতাে বড়াে চাকরি পাইছে? পােলাডার কপাল আছে। তা দোস্ত কাউলায় কি চাকরি পাইছে রে? ঃ অঁঃ কমু-কমু। এতাে ঘাটের পানি খাইয়্যা ছক্কু তুমি ধরতে পারলা না?’ ফলসিং-এর মাইদ্দে পড়লা। ছক্কু চিল্লাইয়া উডলাে, ‘খামুখা কেইসটারে মােচড়াইতাছােস ক্যান?’ মেহামত মিয়া কালা দাঁতগুলি বাইর কইর্যা কইলাে, চেতিস্ না- চেতিস্ না, আমাগাে কাউলা সিনেমা হলের গেইট-কিপারের চাকরি পাইছে! |
আমাগাে সেনাপতি ইয়াহিয়া অহন কাউলার মতাে গেইট-কিপারের চাকরি পাইছে। হেই গেইট দিয়া ডক্টর কিসিঞ্জার চীনে সিনেমা দেখতে গেছিলাে। আর নিকসন সাবে পিকচার দেহনের লাইগ্যা তাওয়াইতাছেন। কিন্তুক গেইট-কিপার ইয়াহিয়া সাবে জব্বর খুশ হইছেন। বরির তিন বাচ্চা দুইডা দুধ খায় আর একটা কিছু না খাইয়া খুশিতে ফাল পাড়ে।
হ-অ-অ-অ। এই দিকে কারবার হয়ে গেছে। আইজ থনে ষােল বচ্ছর আগে এক ব্যাডায় রাওয়ালপিণ্ডি সরকারের ফরিন মিনিস্টার আছিলাে। হেই ব্যাডায় অহন সেনাপতি ইয়াহিয়া সাবের এক জোড়া পুরানা জুতা হাতে World Tour-এ বাইরাইছেন। কিন্তুক নিউইয়র্ক ওয়াশিংটনে আমাগে বঙ্গভাষী Student রা হােটেলে হেই ফরিন মিনস্টার হামিদুল হক চৌধুরী আর তার ঘেটু চোস্ পাজামারে ঘেরাও করছিল। হেই দুঃখে ব্যাড়ায় কানাডার অটোয়ায় যাইয়া সাংবাদিক সম্মেলনে ‘খুলছেন’- মানে কিনা মুখ খুলছেন। লগে লগে গন্ধ-অ-অ। সাংবাদিকরা নাকে রুমাল লাগাইয়া নােট বইয়ে লিখলাে, বাংলাদেশ গণহত্যা হয় নাইক্যা’- বলেছেন হামিদুল হক চৌধুরী। ক্যামন বুঝতাছেন? চৌধুরী সা’ব এই কাথাটা একটা সাংবাদিক সম্মেলনে কওনের লাইগ্যা অটোয়া গেছেন। অবশ্য তার পাবলিক মিটিংডা আফ্রিকার বেচুয়ানা ল্যাণ্ডে হইবাে বইল্যা ইসলামাবাদ থাইক্যা Order পাইছে।
এই দিকে “গ্যাছে গ্যাছে” কারবার। মানে কিনা কুষ্টিয়ার অবস্থা অহন কি তহন? হেইখানে আখেরি লড়াই শুরু হইছে। World-এর বেষ্ট সেলজাররা হেইখানে ক্যাদোর মাইদ্দে হােতনের লাইগ্যা অহন খালি কুলবুল করতাছে। হেরা টের পাইছে যে মুক্তিবাহিনীর বিক্ষুর লহাল পােলাগুলা কুমারখালি, খােকশা, চিত্রা ও আলমডাঙ্গা এলাকায় সব কিছু ছেদা-বেদা কইর্যা খুঁটি গাইড়া বইস্যা আছে। আর আজরাইল ফেরেশতা এলায় নতুন খাতা-কলম লইয়্যা তৈরী হইছেন। এর লগে লগে আবার চুয়াডাঙ্গার উপর গাবুর মাইর চলতাছে। আর মেহেরপুরের পাওয়ার স্টেশন বাড়ির চোটে। গুড়া হইছে। | এছাড়া ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, রংপুর এলাকায় অহন ধাওয়াইয়া কারবার চলতাছে। আর রাজশাহীতে? খাইছে রে খাইছে। মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা পদ্মা নদী পার হইয়্যা হেইদিন রাজশাহী টাউনের আশেপাশে ঘুইর্যা হেগাে Position দেখছে। ক্যানাে জানি না আইজ-কাইল রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট থাইক্যা খালি কানের আওয়াজ আইতাছে।
এই রকম একটা অবস্থায় হেরা আনছে। মানে কিনা মাল আনছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া সরকারের সাফাই গাওনের জন্যি লন্ডন থাইক্যা প্রফেসর রাব্রুক উইলিয়ামসরে আনছে। কিন্তুক আংরেজের বাচ্চায় বাংলাদেশ Tour-করণের আগেই করাচী Airport-এ হগ্গল কিছু কইয়্যা ফ্যালাইছেন। অথচ এইগুলা বাংলদেশ Tour করণের পর কওনের কথা আছিলাে। কিন্তু মাল-পানি খাইয়া করাচী শহররে ঢাকা টাউন মনে কইর্যা ব্যাডায় পাকিস্তান অবজার্ভারের Editorial মুখস্ত কইছে। কারবারটা অহন কোন স্টেজে বুঝছেন?
সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল