You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.29 | চরমপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

২৯ জুন ১৯৭১

কুফা। অহন সেনাপতি ইয়াহিয়ার অক্করে কুফা অবস্থা। যাঁরা ভেবেছিলেন ইয়াহিয়া সা’বে তাঁর বেতার বক্তৃতায় বাঙালিগাে লাইগ্যা দিল জারে জার কইর‌্যা না জানি কিএকটা হেকিমী সরবৎ দিবাে, তারা অহন চিত্তর হইয়া পড়ছেন। আইয়ুব খান দিয়েছিলেন ‘বেসিক ডেমােক্রেসি আর ইয়াহিয়া সা’বে দিয়েছেন মেলেটারি ডেমােক্রেসি। বাহান্ন মিনিট সাড়ে বাইশ সেকেন্ড ধরে এক বেতার ভাষণে সেনাপতি ইয়াহিয়া পয়লা মিছা কথা কইলেন, তারপর ধমকাইলেন, তারপর নিজেই নিজের প্রশংসা করলেন, তারপর ‘পাকিস্তান’ ‘পাকিস্তান’ কইর‌্যা বুক থাপড়াইলেন, তারপর মেলেটারি ডেমােক্রেসির ফমূলা দিলেন আর হগুগলের লাষ্টে কাইন্দ্যা ফেলাইলেন।
কি কইলেন! মেলেটারি ডেমেক্রেসির কথা বুঝতে পারেন না। তয় কই হুনেন। ১৯৭০ ইলেকশনডা যহন ইয়াহিয়া সা’বের জোয়ানরা খাড়া থাইক্যা করছিল তহন। ইলেকশনডা তাে আর ভণ্ডুল করা যায় না। কিন্তু মাত্র ১৬৭টা বাই ইলেকশন হইবাে। ১৬৯-এর মাইদ্দে ১৬৭টা সিট আওয়ামী লীগে পাইছিল কিনা। কি হইলাে- এহনও Clear হইলাে না। জেনারেল টিক্কা, রাও ফরমান আলী আর জামাতে ইসলামী, মুসলিম লীগ আর পিডিপির হারু পার্টির নেতারা মিল্যা একটা কমিটি করবাে। যেমন ধরেন। খুনের আসামী নিজইে যাইয়া জজ সাবের গদীতে বইলাে আর কি! হেই কমিটি যদি কয় মীরপুর আর মােহাম্মদ পুরের থনে দালাল সম্রাট গােলাম আজমরে Elect করতে অইবাে। ব্যস্ তা হইলেই আলহাজ্ব জহির উদ্দিন সা’ব ‘গণ-ফট। হাজার দালালী করলেও এইডারে আর কেউ ঠেকাইতে পারবাে না। কেননা হেরা আর সামান্যতম Risk লইতে চায় না। বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকায় ইসলাম-পছন্দওয়ালাগাে ১৬৭ নেতা বাইর করন খুব একটা অসুবিধা অইবাে না। এইবার হেরা দুনিয়ারে দেহাইবাে Election কারে কয়।।
এরপর পাকিস্তান আর বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকার সদস্যরা যখন পার্লামেন্টে আসন গ্রহণ করবেন, তখন তাদের আসল কাম- মানে কিনা শাসনতন্ত্র তৈরী করার জন্য কোনাে কিছুই করতে দেয়া হবে না। কেননা সেনাপতি ইয়াহিয়া অনেক দিন থেকে লক্ষ্য করে দেখেছেন এই শাসনতন্ত্র তৈরির ব্যাপারটাতেই পলিটিসিয়ানরা খুবই টাইম নষ্ট করেন। তাই আগের বার যে ১২০ দিনের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, এবার সেটাও আর তিনি করবেন না। এবারের পার্লামেন্টের সদস্যরা রাওয়ালপিন্ডির ক্যান্টনমেন্ট থেকে তৈরি করা একটা শাসনতন্ত্র পাবেন। এলায় বুঝছেন সেনাপতি ইয়াহিয়া তার মেলেটারি ডেমােক্রেসিতে খটমট ব্যাপারগুলাে কত সহজ আর সােজা করে ফেলেছেন।
এর পরেও ইয়াহিয়া সা’বের কয়েকটা কিন্তুক রইছে। পয়লা কিন্তুক- পালমেন্ট। বইলেই যে ক্ষেমতা দেওয়া হইবাে, তা নয়। পােলাপানে নতুন বই-খাতা কিন্যা য্যাতে মলাট লাগায়, হেই রকম গবর্ণমেন্টের উপর মার্শাল ল’র কভার থাকবাে। মানে কিনা থাকি পােষাকের হাত থনে রক্ষা নাইক্যা হেরা থাকবােই। দুস্রা কিন্তুকবাংলাদেশের পরিস্থিতি আয়ত্বের মাইধ্যে আইলে কি অইবাে, যদ্দিন পর্যন্ত রাস্তাঘাট মেরামত আর ট্রেন-স্টিমার পুরা চালু করণ যাইবাে না- যদ্দিন পর্যন্ত বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব হইবাে না- তদ্দিন পর্যন্ত টিক্কা-নিয়াজী-ফরমানের রাজত্ব থাকবােই। তিরা কিন্তুক- স্বাভাবিক অবস্থা হওনের লাইগ্যা আরাে চার মাসের দরকার হইতে পারে। তবে এই সময়ের মধ্যে যদি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কায়-কারবার আগের মতােন না হয়, তা হইলে বুঝতেই পারতাছেন মেলেটারি ডেমােক্রেসি দেওন। আরাে Late হইবাে।
সেনাপতি ইয়াহিয়া আর একটা জব্বর কথা কইছেন। তার মেলেটারি ডেমােক্রেসি কায়েম হলে প্রদেশগুলাে স্বায়ত্বশাসন পাবে, আবার সেন্টারও শক্তিশালী হবে। এ্যাও হয়, অও হয়। ক্যামন বুঝতাছেন। অক্করে ভানুমতির খেল আর কি? বাঙালি দালালেরা খুশি, মেলেটারিও খুশি। যাতির চোটে বেচারা ইয়াহিয়া খান মিছা কথা কইতে-কইতে মুখের গাইলস্যার মধ্যে একেবারে ফেনা তুলে ফেলেছেন। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাস থেকে আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান সাবের এই অবস্থা হয়েছে।
২৮শে জুন তারিখে ভদ্রলােক তার বেতার ভাষণে ভট্ট করে বলে ফেললেন ‘আঙ্গুর ফল চুকা”। যখন দেখলেন তেল দিয়ে কোনাে কাজ হলাে না। আর হেগাে কথামতাে কাম করতে করতে হেঁচকি উঠে গেল তবুও Aid-Pakistan Consortium-এ ডাইল গলাে না। মানে কিনা বাঙালি মারনের লাইগ্যা মাল-পানি পেলাে না। তখন ইয়াহিয়া সা’ব চিল্লাইয়া কইলেন, কুছ পরােয়া নেহি হ্যায়। হেগাে Aid খুবই খারাপ জিনিষ। হেইডা ছাড়াই কাম চালামু। ব্যাডা একখান? কিন্তু আর কয়দিন? এদিকে তাে ঘণ্টা পড়ে গেছে। বুড়াে জেনারেল হামিদ খান আইজ কাইল কেন জানি না খুবই আর্মি ক্যাম্পে ঘুরতাছেন। নাকি হেরও দিলের মাইদ্দে চিরকিৎ অইছে?
যাউগ্গা যা কইতাছিলাম। আমাগাে সেনাপতি আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান আর একটা ফার্স্ট কেলাস্ কথা কইছেন। তিনি বলেছেন, বাঙালি শরণার্থী যারা সীমান্তের ওপারে চলে গেছেন তারা এখনই ফিরে এসে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন। কি সােন্দর দাওয়াৎ। শরণার্থীরা ফিরে আইলে তাে তাদের প্রিয়জনদের মাটির নিচে দেখতে পাইবাে। তা হইলে কি এসব শরণার্থীদেরও তিনি মাটির নিচে হােতনের দাওয়াৎ দিতাছেন? আমি কই কি ব্রাদার ইয়াহিয়া, আপনে তাে এর মধ্যেই বাংলাদেশে পাঁচ ডিভিশন সৈন্য, পাঁচ হাজার সশস্ত্র পুলিশ, নর্দার্ন স্কাউট, গিলগিট স্কাউট আর উপজাতীয় এলাকার ফৌজ এনেছেন। এখন বাকি যা আছে তাও নিয়ে আসুন। না হলে মুক্তিফৌজের গেরিলারা কোবাইবাে কাগাে? কেবল তাে মাইর শুরু হইছে। এর মধ্যেই আপনাগাে হাজার কয়েক পটল তুলছে আর হাজার কয়েক গতরের মাইদ্দে ব্যান্ডেজ বানছে। ভিয়েতনামের দিয়েন বিয়েন ফুতে যে রকম হইছিল আমাগাে গেরিলারা বাংলাদেশে হেইরকম একটা কারবার করবার জন্য অস্থির হইয়া উঠেছে। তাই কইতাছি আগেই কিন্তু ভাগাবেন না। আপনাগাে অফিসারগাে মাইদ্দে হেইরকম একটা Tendency দেখতাছি। লুট আর লাড়াইর মাইদ্দে কিন্তুক আশমান-জমিনের ফারাক।

সূত্র: চরমপত্র – এম আর আখতার মুকুল