You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
৭ই মার্চ ১৯৬৭

জনৈক পাঠকের’র উত্তরে

জনাব,
আপনাদের সম্পাদকীয় সমালােচনা করতে গিয়ে জনৈক পাঠক এক আলােচনার সূত্রপাত করেছেন। বিষয়বস্তু হলাে, আমরা কি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অভাবে আমাদের আন্দোলন থেমে গেছে বা থামেনি।
জনৈক পাঠক বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, আমাদের আন্দোলন থামেনি, বিশেষ করে মেহনতী মানুষদের সংগ্রাম চলছেই। এ যে সত্যি কথা-এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সরকার ও মালিকরা এসব মেহনতী মানুষের দাবী-দাওয়া ছলে-বলে-কৌশলে সকল নীতি প্রয়ােগ দমিয়ে রেখেছেন। জনগণের মনে আজ পুঞ্জিভূত অভিযােগ। খাদ্য সমস্যা, অফিস-আদালতে আমলাতন্ত্রদের রাজত্ব, অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি মিলে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে এবং এর প্রতিকার লাভের জন্য জনগণ ব্যগ্র হয়ে উঠেছে। আর এর সঠিক নেতৃত্ব দিতে রাজনৈতিক দলগুলি যদি ব্যর্থ হয়, তা হলে জনগণের মনে হতাশা সঞ্চারিত হইবে। যদিও সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলছে, তবুও ওরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না। তবে কি বলার মধ্যে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে? হয়তাে বা তাই!
কিন্তু এ সত্যি যে তাদের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্বও রয়েছে। এ আদর্শগত দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও মার্শাল ল পরবর্তীকালে এন, ডি, এফ গঠন করা সম্ভবপর হয়েছিল এবং ব্যাপক গণআন্দোলনের সৃষ্টি করা সম্ভবপর হয়েছিল। পরবর্তীকালে মৌলিক গণতন্ত্র নির্বাচনেও সম্মিলিত বিরােধী দল গঠন করা হয়।
পাক-ভারত সংঘর্ষের পরবর্তীকালে বিরােধী দলের একটি অঙ্গ পররাষ্ট্রনীতির নামে সরকারকে সমর্থন কোন কোন গণতান্ত্রিক নেতার সরকারের সাথে আপােষমূলক নীতি জনগণের মনে যেমন হতাশার সৃষ্টি করে, তেমন বিরােধী দলগুলাের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করে।
পাক-ভারত সংঘের সময় পূর্ব পাকিস্তান যে অবস্থায় পতিত হয়, তার ভিত্তি করেই আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান গণতন্ত্র, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, দুই প্রদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ ও পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষা-ব্যবস্থা দৃঢ় করার জন্যে ৬-দফা প্রস্তাব করেন এবং এ নিয়ে এক ব্যাপক আন্দোলন সৃষ্টি করেন। জনসাধারণ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। কিন্তু যখন ৬-দফার জনপ্রিয়তা রােধ করা যাচ্ছে না তখন ৬- দফাকে খেল করার জন্য আরাে কয়েক দফা যােগ করে ৭-দফা, ১৪-দফা, বিভিন্ন দফা তৈরী করেছেন কোন কোন দল। কিন্তু তাতে ব্যাপক কোন আন্দোলন তৈরী করতে পারেননি। তাই বলছিলাম বিরােধী দলগুলাের মধ্যে ঐক্য আনতে হলে প্রথমেই তাদের পরস্পরকে আক্রমণ করে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেকেরই নিজের দলের চেয়ে দেশকে বড় করে দেখতে হবে। জরুরী সমস্যাগুলাে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম চালাতে হবে। যেমন, খাদ্য সমস্যা, রাজবন্দীদের মুক্তি ইত্যাদি। আন্দোলন যে থেমে নেই যে, কথা জনৈক পাঠক বলেছেন, তা সত্যি। কিন্তু এও সত্যি বিচ্ছিন্নভাবে সরকারের তীব্র দমনমূলক নীতির মধ্যে এ আন্দোলন স্তব্ধ হতে বাধ্য। আর তার পরিণতি জনগণের মধ্যে হতাশা এবং বিরােধী দলগুলাের প্রতি আস্থা হারানাে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!