You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পয়গাম
৩রা নভেম্বর ১৯৬৭

রাজনৈতিক হালচাল
স্পষ্টভাষী

ভুট্টো সাহেবকে লইয়া দেখি মহা বিপদেই পড়া গেল। ভদ্রলােক ঢাকা হইতে লাহাের হইয়া করাচী পৌছিয়াই তার নতুন সাক্ষাৎ শেখ মুজিবর রহমানকে ৬-দফার উপর আবার কন্টেশনের চ্যালেঞ্জ দিয়াছেন। এটা অবশ্য তাঁর কোন নতুন চ্যালেঞ্জ নয়। তিনি গত বছর ২০ শে মার্চ ঢাকায় শেখ মুজিবের ৬-দফা প্রােগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও পাকিস্তানের ঐক্য-সংহতি বিনাশী সুগভীর চক্রান্ত’ বলিয়া অভিহিত করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের যেকোন স্থানে এ বিষয়ে বিতর্কে অবতীর্ণ হইবার জন্য তাঁকে (শেখ মুজিবকে) যে- খােলাখুলি চ্যালেঞ্জ দিয়াছিলেন, করাচীর চ্যালেঞ্জ উহারই পুনরাবৃত্তি। অথচ এই ভুট্টো সাহেবই মাত্র পাঁচদিন আগে ঢাকার প্রেস কনফারেন্সের মুজিবর রহমানের ৬দফা প্রােগ্রামকে কত লম্বা-চওড়া সার্টিফিকেটই না দিয়া গেলেন। এমনকি পাকিস্তান আন্দোলনের সময় যে মুজিবর রহমান মাত্র একজন কলেজ ষ্টুডেন্ট ছিলেন, তাহাকেই ভুট্টো সাহেব পাকিস্তান সংগ্রামের একজন অগ্রগামী সেনানী ও বর্তমানের অন্যতম জাতীয় নেতা বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় ভুট্টো সাহেব নেহাৎ বালক না হইলেও মুজিবর রহমানের মতই একজন তরুণ ছিলেন। শেখ মুজিব সে সময় অন্ততঃ ছাত্রনেতাদের পিছনে ভলান্টিয়ারী করিয়াছেন, ভুট্টো সাহেব তাহাও করেন নাই। পাকিস্তান আন্দোলনের খবর পত্র তিনি রাখেন না, সে সংগ্রাম তিনি আদৌ দেখেন নাই। বিশেষতঃ বাংলা তাঁর কাছে ছিল নিতান্তই বিদেশ। দুই যুগ পূর্বকার আন্দোলনের বিন্দু বিসর্গও তার জানা নাই। অতএব যেটা তিনি জানেন না সে সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করিতে যাওয়া তারপক্ষে নিছক বাতুলতা। ভুট্টো সাহেব এখন আর তরুণ নন, এখন তার যথেষ্ট বয়স হইয়াছে। বেশ কিছুকাল একটি বড় দায়িত্বশীল পদেও তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তাকে হাতে ধরিয়া টানিয়া তুলিয়া একটি বড় পদে বসাইয়াছিলেন। সেই পদে থাকিয়া তিনি দেশ-দুনিয়া ঘুরিয়া অনেক। কিছু দেখিবার সুযােগ পাইয়াছিলেন। চপলমতি বাক্যবাগীশ ভুট্টো সাহেব ভিন্নভাবে সেই সুযােগের ব্যবহার করিয়াছেন, উহার সদ্ব্যবহার করেন নাই, হাওয়ার বুকে পাখা মেলিয়া সুখের পায়রার ন্যায় উড়িয়া বেড়াইয়াছেন, যাহা শিখিতে পারিতেন তাহা শিখেন নাই। বরঞ্চ, তাঁর অকূটনীতিক অরাজনীতিক সুলভ মাত্রাজ্ঞানহীন উক্তি ও অসাবধান আচরণ দেশের অনেক ক্ষতি করিয়াছে, পার্টি ও গভর্ণমেন্টকে অকারণে অনাহুতভাবে অনেক জটিলতার মুখে নিক্ষেপ করিয়াছে, এমনকি, বহু ক্ষেত্রে সাংঘাতিকভাবে বেইজ্জত ও বিব্রত করিয়াছে। তাই অতবড় সুযােগ ও উচ্চপদ পাইয়াও তিনি তাহা। রাখিতে পারেন নাই। তাহাকে বিদায় লইতে হইয়াছে।
অনেক লােক আছে, যাদের বয়স পাকিলেও জ্ঞানবুদ্ধি পাকে না। ভুট্টো সাহেবও কাচাই থাকিয়া গেলেন। তার বালসুলভ চপলতা ও অস্থির চিত্ততা গেল না। তার উদ্ভট, অসংলগ্ন ও স্ববিরােধিতাপূর্ণ কথাবার্তা শুনিয়া মনে হয় যেন আজকাল সর্বক্ষণই তিনি কতকটা এ্যাবনরমাল থাকেন। জানি না ইহার হেতু কি? পলিটিকস তিনি যাহাই করুন, অভিজাত সন্তান হিসাবে তার ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা ও অভ্যাস যাহাই হউক, অন্ততঃ উক্তি ও অভিব্যক্তিতে কিছুটা সংগতি থাকিতে হইবে। জানি তার ন্যায় অভিজাতের পক্ষে অত উঁচু হইতে এত নীচে ধূলা কাদা মাখা জনতার মধ্যে নামিয়া আসিয়া জনগণের পলিটিকস করা পােষাইবে না।
ননীর পুতুল গলিয়া যাইবে, সােনার অঙ্গ কালি হইয়া যাইবে। দেশের একমাত্র সুসংগঠিত পার্টি, অগণিত মানুষের মহা প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারীরূপে জনতার সঙ্গে একাত্ম হইবার, জনগণের সেবা করিবার যে বিরাট সুযােগ প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের দওলতে তিনি পাইয়াছিলেন তাহা তিনি রাখিতে পারিলেন না। জনগণের মধ্য হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া পুনমুষিকভব ভুট্টো হােটেলের প্রকোষ্ঠে তাঁর বিচিত্র রঙীন পলিটিক্সের আখড়া জমাইতে প্রয়াস পাইতেছেন। অবশ্য এসব অভিজাত সন্তানদের পােষাকী ‘বামপন্থী’ পলিটিক্সের দৌড় ঐ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হােটেলের প্রকোষ্ঠে আয়ােজিত প্রেস কনফারেন্স পর্যন্তই। যখন-যেমন-তখন-তেমন দুই-চারিটা মুখরােচক বিল্পবী কথা বলিয়া এই শ্রেণীর বিমানবিহারী স্বনিয়ােজিত “লিডাররা” বাজীমাতের আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। জানি, মােল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। জানি, ভুট্টো সাহেবের পলিটিক্সের দৌড়ও ঐ পর্যন্তই। কিন্তু তাই বলিয়া কি তিনি চৌ-মাথার লাইট পােষ্টটাকে মধ্যরাত্রিতে প্রাণশখা মুজিব প্রেমে জড়াইয়া ধরিয়া চুমা খাইতে আরম্ভ করিবেন ? মাত্রাজ্ঞান এতটা হারাইলে চলিবে কেন ? আমাদেরও যে শরম লাগে।
বিপ্লবী ভুট্টো সাহেব নাকি সােশ্যালিজম করিবেন। তবে সেটা রুশ, চীনা বা যুগােস্লাভ ছাঁচের সােশ্যালিজম নয়। (ভুট্টো সাহেব অবশ্য ‘ক্যুনিজম’ শব্দটা ব্যবহার করিয়াছেন। তিনি জানেন না যে, ঐসব দেশেও কম্যুনিজম নয়, বরং সােশ্যালিজমের পর্যায়ই চলিতেছে। কম্যুনিজমের পর্যায় আসিতে এখনও অনেক দেরী)। মিঃ ভুট্টো নাকি “পাকিস্তানের জনগণের প্রয়ােজনমাফিক” এক বিশেষ ধরনের সােশ্যালিজম চালাইবেন। ভুট্টোর উদ্ভাবিত সেই অভিনব সােশ্যালিজমের নাম নিশ্চয়ই ‘ভুট্টোইজম’ হইবে। অবশ্য ভুট্টোইজমের কোন মেনিফেষ্টো এখনও বাহির হয় নাই। এখনও ইহা অপদার্থ রূপে তরল আকারে ভুট্টো ইজমের ভাবী জনকের মস্তকেই বিরাজ করিতেছে।
ভুট্টো সাহেব বলিয়াছেন যে, আগেকার দিনে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করিয়া রাজনীতি গড়িয়া উঠিত। নেতার চারিদিকে সকলে চক্রাকারে ঘুরিত। কিন্তু এখন প্রােগ্রাম ও আদর্শকে কেন্দ্র করিয়া পলিটিক্স গড়িয়া উঠিতেছে। এটা অবশ্য সত্যেরই স্বীকৃতি। পূর্ব পাকিস্তানে ততটা না-হইলেও পশ্চিম পাকিস্তানের পলিটিক্স আগেকার যুগে নবাব-যুবা, মিয়া-মালিকদের অভিজাত শ্ৰেণীরই একচেটিয়া ছিল, জনসাধারণের উহাতে প্রবেশাধিকার ছিল না। প্রজা ও ভূমিহীন মজুরদল তাদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা জমিদার বা নবাব সাহেবকে ভােট দিতে ও সমর্থন করিতে বাধ্য ছিল। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব সেই ফিউডালিজম বিলােপ করায় এবং পার্লামেন্টারী ডেমােক্রেসির নামে প্রচলিত পলিটিক্যাল ফিউডালিজম বা রাজনৈতিক কৌলিন্যবাদ চূর্ণ করিয়া দেওয়ায় এখন জনগণের রাজনীতি গড়িয়া উঠিবার সুযােগ পাইয়াছে। বর্তমান সিষ্টেমে জনগণকে দূরে সরাইয়া রাখিয়া পলিটিকসের অভিজাতদের মনােপলী চালাইবার আর সুযােগ নাই। পার্লামেন্টারী আমলে এই ভুট্টো সাহেবদের সিন্দুতেই গুটিকয়েক অভিজাত পরিবারের বংশানুক্রমিক কলহকোন্দলে সেখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ বিরূপ বিষাক্ত হইয়াছিল এবং কত রাজনৈতিক হাঙ্গামা, গুণ্ডামি, অপহরণ, লুণ্ঠন, এমনকি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হইয়াছিল, তাহা কাহারও অজ্ঞাত নহে। এক নেতা অপর নেতাকে পাকড়াও করিয়া শত শত মাইল মরুপথে টানাহ্যাচড়া করিয়া লইয়া গিয়া গুম করিয়া ফেলিত, এরূপ দৃষ্টান্তও বিরল নহে। ঐসব অভিজাতেরা রাজনীতিকে এতই কলুষিত করিয়া তুলিয়াছিলেন যে, জনগণের অবস্থার উন্নয়মূলক কোন কাজ সেই পরিবেশে করা সাধ্যাতীত ছিল। তখন টাকা ল্যান্স হইয়াছে, সম্পদের অপচয় হইয়াছে, আর দেশের উন্নয়নের নামে কতিপয় অভিজাতের অধিকতর ভাগ্যোন্নয়ন হইয়াছে। আইয়ুবের অনুষ্ঠিত বিপ্লব তাঁর প্রবর্তিত শাসনতন্ত্র তার পরিচালিত স্থিতিশীল ও গণ-অনুকুল সরকার এবং তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লবাত্মক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারসমূহের দরুন শুধু সিন্ধু বা পশ্চিম পাকিস্তানে নহে, বরঞ্চ সারাদেশে অভিজাত ও কায়েমী স্বার্থীচক্র বহুলাংশে পর্যদস্ত হইয়াছে। ভুট্টো সাহেব গদিচ্যুত হওয়ার পূর্বে পঞ্চমুখে এসবের প্রশংসা করিতেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হইয়া এখন তিনি আবার সেই সগােত্রীয়দের সঙ্গেই হাত মিলাইয়াছেন।
যাহারা প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের নেতৃত্বে সংঘটিত বৈপ্লবিক পরিবর্তনসমূহকে বানচাল করিয়া সাবেক দিনের অরাজকতাপূর্ণ ব্যবস্থা ফিরাইয়া আনিতে সচেষ্ট। এইত বামপন্থী ভুট্টো সাহেবের বিচিত্র ‘বিপ্লবী রাজনীতির নমুনা।
ইহাই তার ভুট্টোইজম।
সাবেক দিনে দেখা যাইত, শীতের মওসুমটাই অভিজাত রাজনীতিক, সানডে-পলিটিশিয়ান, অদলীয় নেতৃবর্গ-এক কথায় গায়ে-মানে না-আপনিমােড়লদের পলিটিক্সের মওসুম। শীত মওসুমে তাহারা বড় বড় সিটিতে কনফারেন্স করিয়া (এবং সেই সংগে ক্রিকেটের টেষ্টম্যাচ দেখিয়া) দেশােদ্ধার করিতেন। ভুট্টো সাহেব সােস্যালিজমের টুপি পড়িয়া বামপন্থী সাজিলেও অভিজাত সন্তান। তাই তিনি গ্রীষ্ম ও বর্ষা-বাদলে রাজনৈতিক তীর্থদর্শনে বাহির হন নাই, হইয়াছেন শীতের মওসুমে। ২৬শে অক্টোবর ঢাকায়, ২৮ শে অক্টোবর লাহােরে ও ৩১ শে অক্টোবর করাচীতে তিন তিনটা প্রেস কনফারেন্সে বক্তৃতা করিয়া এবং “ক্রস-সেকশনের” (অর্থাৎ কাউন্সিল লীগ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, এন ডি এফ ও পি ডি এমের কয়েকজন নেতা উপনেতা) সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করিয়া ভুট্টোইজমের ভিৎ প্রায় গড়িয়া ফেলিয়াছেন, এখন ব্যাঙ্ক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানী, কলকারখানা, পূর্বাপট ন্যাশনালাইজ করিলে সােস্যালিজম হয় আর কি ! সে নােটিশও তিনি লাহােরের প্রেস কনফারেন্সে দিয়া ফেলিয়াছেন। কিন্তু স্বগােত্রীয় অভিজাত শ্ৰেণীর যে ভেষ্টেড ইনটারেষ্ট এখনও অবশিষ্ট আছে। সেগুলি সম্পর্কে তিনি নির্বাক। ভুট্টো সাহেব উত্তম রূপেই জানেন যে, বর্তমান শাসনামলে দেশের উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টরের এলাকা নিতান্ত সীমিত, পাবলিক সেক্টরই সর্বপ্রধান। যত কিছু বৃহৎ কার্য পাবলিক সেক্টরেই করা হইয়াছে ও হইতেছে। দেশে ভারী শিল্পের সংখ্যা যা এখনও অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। সেগুলি কিছু গড়িয়া উঠিয়াছে, তা সবই পাবলিক সেক্টরে। পাওয়ার ষ্টিল, ফার্টিলাইজার গ্যাস, সিমেন্ট, মেশিন টুল, জাহাজ নির্মাণ—সবকিছু শিল্প সরকারী সংস্থার উদ্যোগে পাবলিক সেক্টরে হইয়াছে। শিপিং-এর ক্ষেত্রেও সরকারী উদ্যোগই মুখ্য। ট্রান্সপাের্ট বা পরিবহণ ক্ষেত্রেও পাবলিক সেক্টরের উদ্যোগ দ্রুত সম্পসারিত হইতেছে। এমনকি, এই আমলে আন্তর্জাতিক আমদানী-রফতানী বাণিজ্য ও নবগঠিত সরকারী সংস্থা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছে। পাটের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও কয়েকটি স্বার্থীদের এলাকা ক্রমেই সঙ্কুচিত ও সরকারী সংস্থার উৎপাদন বৰ্দ্ধিত হইতেছে। এর জন্য কায়েমী স্বার্থবাদীদের অভিযােগের অন্ত নেই। বস্তুতঃ সরকারী নীতিকে ব্যর্থ করার জন্য তাহারা উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। উন্নয়ন ঋণ ও সাহায্য প্রদানকারী কোন কোন বৈদেশিক মহল প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের আমলে পাবলিক সেক্টরের এই ব্যাপক সম্প্রসারণ ও সরকারী উদ্যোগের ক্রম বিস্তৃতি আদৌ ভাল চক্ষে দেখিতেছে না। কিন্তু সরকার পাবলিক সেক্টর বাড়াইয়াই চলিয়াছেন। ব্যাঙ্ক, ইনসিওরেন্স কোম্পানীসমূহও স্টেট ব্যাঙ্ক বা সরকারী কর্পোরেশন কর্তৃক কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ভুট্টো সাহেব এসব কথা অস্বীকার করিতে পারিবেন না। এতদসত্বেও তিনি ব্যাঙ্ক, ইনসিওরেন্স কোম্পানী, শিল্প-কারখানা প্রভৃতি জাতীয়করণের বুলি কপচাইয়াছেন। প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যোগ এমনিতেই আশাপ্রদ নয়। তদুপরি এইসব কথা বলার অর্থ বেসরকারী উদ্যোগকে আরও ভীতিগ্রস্ত করিয়া দূরে সরাইয়া দেওয়া। বামপন্থী ভুট্টো সাহেবের অন্ততঃ এটুকু জানা থাকা উচিত যে, কয়েকটি ব্যাংক, ইনসিওরেন্স কোম্পানী, ন্যাশনালাইজ করাই সােশ্যালিজম নয়, উহাতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন হিত সাধিত হয় না। জনাব ভুট্টোর আরও জানা উচিত যে, অরণ্যে বা শূন্য মরুভূমিতে সােস্যালিজম হয় না, জনপদেই হয় এবং সােস্যালিজম করিতে হইলেও ন্যূনতম অর্থনৈতিক মান বা ভিত্তির প্রয়ােজন। অভিজাত সন্তান ভুট্টো সাহেব হঠাৎ বামপন্থী বিপ্লবী সাজিয়া সবটাতেই ঘােড়ার আগে গাড়ী জুড়িতেছেন। হয়ত এরই নাম ভুট্টোইজম।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!