দৈনিক পয়গাম
২০শে নভেম্বর ১৯৬৭
চৌধুরী মােহাম্মদ আলীর নিকট আবদুল হাই চৌধুরীর জিজ্ঞাসাঃ
৮০ হাজার, না মাত্র ৯৩০ জন ভােটার দ্বারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অধিক গণতান্ত্রিক?
রাওয়ালপিণ্ডি, ১৮ই নভেম্বর।-পূর্ব পাকিস্তানের আইন এবং পার্লামেন্টারী উজির জনাব আবদুল হাই চৌধুরী গতকাল ৮০ হাজার ভােটার দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের চাইতে ৯৩০ জন দ্বারা তাহাকে নির্বাচন করা কিভাবে অধিকতর গণতান্ত্রিক হইতে পারে, উহার জবাবদানের জন্য চৌধুরী মােহাম্মদ আলীকে আহ্বান জানান। নেজামে ইসলাম প্রধান চৌধুরী মােহাম্মদ আলীর বিবৃতির জবাবে পূর্ব পাকিস্তানী উজির বলেন, সমসাময়িক ইতিহাসের ছাত্ররা উহা ভাল করিয়াই জানে যে, অন্যান্যের সহিত মরহুম শহীদ সােহরাওয়ার্দী, জনাব আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবর রহমান, জনাব আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ প্রমুখ কিভাবে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলেন। উক্ত শাসনতন্ত্র অনুযায়ী আইন এবং প্রশাসন ব্যবস্থা দেশকে কিরূপ বিপদের সম্মুখীন করিয়াছিল, তাহাও তাহারা অবগত আছেন।
১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র অনুসারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মুখেই উক্ত শাসনতন্ত্র বাতিল করা হয় বলিয়া চৌধুরী মােহাম্মদ আলী যে কথা বলিয়াছেন, তাহার জবাবে জনাব আবদুল হাই চৌধুরী উল্লেখ করেন, আসলে সামরিক শাসন জনগণের জন্য একটা বিরাট আশীর্বাদ বহন করিয়া আনে এবং প্রেসিডেন্ট আইয়ুবকে আজ সমগ্র জাতি তাহাদের ত্রাণকর্তা হিসাবে বিবেচনা করে।
চৌধুরী মােহাম্মদ আলী দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্পর্কে যে দাবী করিয়াছেন উহাকে বিভ্রান্তিকর বলিয়া জনাব আবদুল হাই চৌধুরী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, জাতীয় বিষয়কর্ম সম্পাদনে জনসাধারণের সক্রিয় অংশীদারত্ব থাকার নামই গণতন্ত্র। বর্তমান শাসনতন্ত্রে এ বিষয়ে সকলকে পূর্ণ গ্যারান্টি দেওয়া হইয়াছে। এমন অনেক দেশ আছে যেখানে এতদিন অন্যান্য ধরনের গণতন্ত্র চালু ছিল। তাহারাও বর্তমানে পাকিস্তানী প্রথা গ্রহণের কথা বিবেচনা করিতেছেন।
জনাব আবদুল হাই চৌধুরী বলেন, কতিপর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিরােধী দল সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবে না বলিয়া চৌধুরী মােহাম্মদ আলী উল্লেখ করিয়াছেন। তাহার এই কথায় দেখা যায় যে, বিরােধী দলের পায়ের তলায় এখন মাটি নাই যেখান হইতে তাহারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারেন, আর একথা নেজামে ইসলাম প্রধান এখন হইতেই ভাবিতে শুরু করিয়াছেন।
বহির্বিশ্বে পাকিস্তানের মর্যাদা হ্রাস পাইতেছে বলিয়া চৌধুরী মােহাম্মদ আলী যে অভিযােগ করিয়াছেন উহার অসারতা প্রমাণ করিয়া জনাব আবদুল হাই চৌধুরী বলেন, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব শুধু দেশের অভ্যন্তরেই তাহার কর্মতৎপরতা সীমাবদ্ধ রাখেন নাই, আফ্রো এশিয়ার একজন মহান নেতা হিসাবেও তিনি বহির্জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্পর্কে তিনি চৌধুরী মােহাম্মদ আলীকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব কিংবা বিচারের রায় অমান্য করা হইয়াছে। এমন একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করার চ্যালেঞ্জ প্রদান করেন।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নাই বলিয়া চৌধুরী মােহাম্মদ আলী যে কথা বলিয়াছেন পূর্ব পাকিস্তানের আইনে উজির উহারও প্রত্যুত্তর দিয়াছেন। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের যদি স্বাধীনতাই না থাকিত তবে চৌধুরী মােহাম্মদ আলীর এই বিবেক বুদ্ধিহীন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে বিবেচিত হইতে পারে এমন বিবৃতি কখনও সাধারণের গােচরে আসিত না।
নেজামে ইসলাম প্রধান দেশে জরুরী অবস্থা বলবৎ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছেন। উহার জবাবে জনাব আবদুল হাই চৌধুরী বলেন যে, একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও তাহার চক্ষু খােলে নাই, ইহাতে আশ্চর্য হইতে হয়।
ভারত আজ বিপুল সমর আয়ােজনে ব্যস্ত হইয়াছে। এখনও আমাদের বিপদ কাটে নাই তাই যুদ্ধ শেষ হইলেও জরুরী অবস্থা অব্যাহত রাখার প্রয়ােজনীয়তা রহিয়াছে। কোন লােক জরুরী অবস্থার আর প্রয়ােজন নাই-একথা বলিলে বােঝা যায় যে, সে দেশের পরিস্থিতি অনুধাবনে সক্ষম হয় নাই।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব