দৈনিক পাকিস্তান
২৯ শে অক্টোবর ১৯৬৭
শেখ মুজিব সম্পর্কে ভূট্টো
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জেড, এ ভুট্টো গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় বলেন যে, আগামী মাসের কোন এক সময় তিনি তার দলের নাম ঘােষণা করবেন। পিপিএ পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, ঢাকার একটি হােটেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি দাবী করেন যে, তিনি বিভিন্ন মহল থেকে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পেয়েছেন।
তিনি বলেন যে, তিনি বিভিন্ন মতের লােকের সাথে যােগাযােগ করেছেন এবং মওলানা ভাসানী ও জনাব আতাউর রহমান খানসহ বহু রাজনৈতিক নেতার সাথে ফলপ্রসূ আলােচনা করেছেন। তার দলে যােগদানের জন্য কয়েকজন পরিষদ সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লােকের মধ্যে ইতিমধ্যেই বেশ উৎসাহ দেখা দিয়েছে।
জনাব ভুট্টো তার মুসলিম লীগ ত্যাগ করার পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাপারে মুসলিম লীগের সাথে নীতিগতভাবে তার। মতানৈক্য দেখা দেয়। পাকিস্তান মুসলিম লীগের ভুল-ভ্রান্তি যেন সংশােধিত হতে পারে এই আশায় তিনি ক্ষমতাসীন দলে ফরােয়ার্ড ব্লক গঠনের জন্যে মত প্রকাশ করেছিলেন। মুসলিম লীগ নেতৃত্ব ফরােয়ার্ড ব্লক সম্পর্কে তার এই ধারণা পছন্দ করেননি।
পূর্ব পাকিস্তানের বিশেষ উল্লেখসহ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আলােচনাকালে তিনি বলেন যে, দেশ অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বিশেষভাবে খাদ্যদ্রব্য ও জীবনধারণের জন্য নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে আলােচনা করেন।
পুস্তক রচনা
জনাব ভুট্টো জানান যে, পররাষ্ট্রনীতির উপর তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। আগামী বছরের প্রথম দিকে কোন এক সময় একটি বিদেশী প্রকাশনা সংস্থা গ্রন্থটি প্রকাশ করবেন। আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বলতে যেয়ে তিনি বলেন যে, তিনি শেখ মুজিবর রহমানকে জাতীয় নেতা বলে মনে করেন। তিনি অবিলম্বে তার মুক্তি দাবী করেন।
ছয়দফার উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, ছয়দফা নিয়ে আলাপ-আলােচনা করা যেতে পারে। শেখ সাহেব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে নিজস্ব মত পােষণ করেন বলে তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যায়িত করা ভুল হবে।
রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ প্রশ্নে সৃষ্ট বিতর্কে তাঁকে মােকাবিলা করার জন্য জনাব ভুটো কেন্দ্রীয় যােগাযােগ মন্ত্রী খান এ, সবুরকে চ্যালেঞ্জ করেন।
খান সবুরের কতিপয় মন্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, অবাঙ্গালী হিসাবে রবীন্দ্রনাথের রচনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। ধারণা করে নিলে তা ভুল হবে। তিনি বলেন,রবীন্দ্রনাথের প্রশ্নে জনাব সবুরের মােকাবিলা করতে পারলে তিনি খুশিই হবেন। সংস্কৃতি প্রশ্নে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা অকারণ বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি করেছেন বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, অর্ডিন্যান্স জারী করে সংস্কৃতি সৃষ্টি করা যায় না। কোন জাতির মূল্যবােধ, ঐতিহ্য ও জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনকারী বিশেষ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংস্কৃতির উদ্ভব হয়।
তিনি বলেন যে, তিনি রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবি হিসাবে শ্রদ্ধা করেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন যে, রবীন্দ্রসাহিত্য পাঠ করলে সাংস্কৃতিক বিপর্যয় হবে বলে যারা মনে করেন তাদের ধারণার পিছনে কোন সত্যতা নেই। তিনি বলেন যে, এ মনােভাবে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ব্যাপারে নিজেদের উপর আস্থা নেই এবং আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে অন্য যে সকল শক্তির প্রভাব রয়েছে সে সম্পর্কেও আমরা সচেতন নই।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব