আজাদ
১৮ই অক্টোবর ১৯৬৭
শেখ মুজিবের মামলায় আরও ৩ জন সরকারী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ
(কোর্ট রিপাের্টার)
দেশরক্ষা আইনে আটক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দেশদ্রোহিতা মামলার আরও ৩জন সরকারী সাক্ষীর জেরা গতকাল মঙ্গলবার করা হয়। ঢাকা সেন্ট্রাল জেলগেটে অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব এম, এস, খানের কোর্টে এই মামলার বিচার কাৰ্য্য চলিতেছে।
১৯৬৪ সালের ২৯শে মার্চ পল্টন ময়দানে “আপত্তিকর বক্তৃতাদানের অভিযােগে পাকিস্তান ফৌজদারী দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারা ও জননিরাপত্তা আইনের ৭ (৩) ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদধে জনগণের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি ও জনগণকে উত্তেজিত করার অভিযােগে আওয়ামী লীগ প্রধানের বিরুদধে এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা আনয়ন করা হইয়াছে। ঘটনার প্রায় দেড় বৎসর পরে ঢাকার তৎকালীন এস, পি, সৈয়দ মান্নান বক্স আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে উপরােক্ত অভিযােগ পেশ করেন।
১৬৬ নং ওয়াটার ওয়ার্কস রােডের অধিবাসী শাহ আলম জেরার জবাবে নিজকে কনভেনশন মুসলিম লীগ সমর্থক এবং স্থানীয় ইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও তাহার মামাকে মুসলিম লীগ পন্থী বলিয়া জানান। তিনি বলেন, ২৯শে মার্চ পলটনের জনসভায় তিনি শুধু শেখ মুজিবর রহমানেরই বক্তৃতা শ্রবণ করিয়াছিলেন। কোর্টে সাক্ষী দেওয়ার এক মাস পূৰ্ব্বে পুলিশ অফিসার তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিল। পুলিসের কাছে তিনি কখনও কিছু বলেন নাই এবং পুলিশও তাহার কোন জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করে নাই বলিয়া শাহ আলম কোর্টে জানায়। পুলিশ তাহার ঠিকানা জানিত কিনা তাহা তিনি জানিতেন না।
৪৩ নং এন, কে দত্ত রােডের নিবাসী আবদুর রাজ্জাক জেরার জবাবে বলেন, পলটনের জনসভায় প্রদত্ত শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা ব্যতীত অন্য কাহারাে বক্তৃতার বিষয়বস্তু তাহার স্মরণ নাই। সাম্প্রতিক কালে প্রদত্ত প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ও অন্য কোন রাজনৈতিক নেতার বক্তৃতা তাহার স্মরণ নাই। আবদুর রাজ্জাক আরও জানান, পুলিশের সহিত তাঁহার কখনও সাক্ষাৎ হয় নাই।
নােয়াখালীর অধিবাসী ও বর্তমানে ৩৮ নং টিপু সুলতান রােডে বসবাসকারী আবদুস সাত্তার জানান যে, আমীর হােসেন তাহার বজ্র। জেরার জবাবে আবদুস সাত্তার বলেন, পলটন ময়দানে শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা শ্রবণের পরে ও কোর্টে সাক্ষ্যদানের পূর্বে কোন পুলিশ অফিসারের সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইয়াছে কিনা, তাহা তিনি বলিতে পারেন না। পুলিশের নিকট তিনি কোন জবানবন্দী দেন নাই বলিয়া কোর্টে প্রকাশ করেন।
মামলার শুনানী আগামী ৯ই নভেম্বর পর্যন্ত মুলতুবী রাখা হইয়াছে। এডভােকেট জনাব জহিরুদ্দিন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব কামরুজ্জামান এম, এন, এ, জনাব জুলমত আলী প্রমুখ আওয়ামী লীগ সভাপতির এবং জনাব আবদুল আলীম সরকার পক্ষ সমর্থন করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব