You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পাকিস্তান
১০ই আগষ্ট ১৯৬৭

মুজিবের আটকাদেশ বৈধ ঘােষণা
(হাইকোর্ট রিপাের্টার)

গতকাল বুধবার ঢাকা হাইকোর্টে সেখ মুজিবর রহমানের হেবিয়াস কর্পাস মামলার পুনর্বিচারের রায় প্রদান করা হয়। বিশেষ বেঞ্চের অধিকাংশ বিচারপতি হেবিয়াস কর্পাস আবেদন খারিজ করে দিয়ে দেশরক্ষাবিধি বলে প্রদত্ত আটকাদেশকে বৈধ বলে ঘােষণা করেন। কেবলমাত্র বিচারপতি জনাব আবদুল্লা পৃথক রায় প্রদান করেন এবং আটকাদেশ আইনের দৃষ্টিতে অচল বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপীল দায়ের করার জন্য হাইকোর্ট সার্টিফিকেট প্রদান করে।
উল্লেখযােগ্য যে, ১৯৬৬ সালের ৬ই মে শেখ মুজিবকে দেশরক্ষাবিধি বলে আটক করা হয় এবং এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আদেশবলে আটকের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। উক্ত আটকাদেশ চ্যালেঞ্জ করে ঢাকা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন পেশ করা হলে হাইকোর্টের পাঁচজন বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত এক বিশেষ বেঞ্চের চারজন বিচারপতি আটকাদেশকে বৈধ ঘােষণা করেন। একমাত্র বিচারপতি জনাব আবদুল্লা আটকাদেশকে অবৈধ বলে রায় প্রদান করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপীল দায়ের করলে সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের রায় বাতিল করে দেন এবং পুনর্বিচারের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে ফেরৎ পাঠান। বিচারপতি জনাব বাকের, বিচারপতি জনাব আবদুল্লা ও বিচারপতি জনাব এ হাকিম সমবায়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চে মামলাটির শুনানী অনুষ্ঠিত হয় এবং গতকাল উক্ত বিশেষ বেঞ্চ রায় প্রদান করেন।
গত মে মাসে দেশরক্ষা বিধিবলে আটকাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উক্ত আদেশকে আর বর্ধিত করা হয়নি। কিন্তু উক্ত সময়ে বিশেষ মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। ঐ মামলায় ঢাকা দায়রা জজ কর্তৃক জামীন প্রদান করায় কর্তৃপক্ষ আবার নূতন করে দেশরক্ষাবিধি বলে আটকাদেশ প্রদান করেন। উক্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে অপর একটি হেবিয়াস কর্পাস আবেদন পেশ করা হলে হাইকোর্ট রুল জারী করেন। দুটো রুলের শুনানী একই সঙ্গে উক্ত বিশেষ বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীকালে রুদ্ধদ্বার কোর্টে সরকার সেখ মুজিবের বিরুদ্ধে যাবতীয় গােপন নথিপত্র কোর্টে পেশ করেন। বিচারপতি জনাব বাকের ও বিচারপতি জনাব এ, হাকিম অভিমত প্রকাশ করেন যে, শেখ মুজিবকে আটক রাখার যথেষ্ট কারণ কর্তৃপক্ষের নিকটে আছে। বিচারপতি জনাব আবদুল্লা অভিমত প্রকাশ করেন যে, রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী এমন কোন কারণ সেখ মুজিবের আটকের পেছনে নেই। সুতরাং দেশরক্ষা বিধিবলে তাকে আটক রাখা আইনের দৃষ্টিতে অচল। বিচারপতি জনাব বাকের ও বিচারপতি জনাব হাকিম আটকাদেশ বৈধ ঘােষণা করে দুটো রুলই খারিজ করে দেন। কিন্তু বিচারপতি জনাব আবদুল্লা দুটো রুলেই আটকাদেশ অবৈধ বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
সেখ মুজিবের পক্ষে জনাব আবদুস সালাম খান, জনাব সিরাজুল হক, জনাব এম, রব ও জনাব আমিনুল হক এবং সরকারপক্ষে এডভােকেট জেনারেল জনাব আশরারুল হােসেন, জনাব এস এম, আব্বাস ও জনাব নূরুল্লা মামলা পরিচালনা করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!