You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
২৭ শে জুন ১৯৬৭

শেখ মুজিবকে আটক রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জঃ
হাইকোর্ট কর্তৃক প্রাদেশিক সরকারের উপর রুল জারী
(হাইকোর্ট রিপাের্টার)

গতকাল সােমবার ঢাকা হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ সমীপে দেশরক্ষা আইনে জনাব শেখ মুজিবর রহমানের আটককে চ্যালেঞ্জ করিয়া একটি হেবিয়াস কর্পাস আবেদন পেশ করা হয়। হেবিয়াস কর্পাস আবেদনটি পেশ করেন জনাব শেখ মুজিবর রহমানের আত্মীয় জনাব শেখ আকরাম হােসেন। বিচারপতি জনাব বাকের ও বিচারপতি জনাব আবদুল হাকিম উপরােক্ত আবেদনের ভিত্তিতে প্রাদেশিক সরকার, ঢাকার ডেপুটি কমিশনার এবং অদ্য এক ব্যক্তিকে এই মর্মে কারণ দর্শাইতে বলিয়াছেন যে, কেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক জনাব শেখ মুজিবর রহমানকে হাইকোর্টে হাজির এবং মুক্তি প্রদান করা হইবে না। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ প্রতিবাদীদের চারি সপ্তাহের মধ্যে উপরােক্ত আটক সম্পর্কে কারণ দর্শাইবার নির্দেশ দিয়াছেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব শেখ মুজিবর রহমানকে আপত্তিকর কর্মে লিপ্ত থাকার অভিযােগে গত বছর ৮ই মে তারিখে দেশরক্ষা আইনের ৩২ (১) (খ) বিধিবলে আটক করা হয়। উপরােক্ত আটকাদেশটি এক হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের মাধ্যমে গত বছর চ্যালেঞ্জ করা হয়। পাঁচজন বিচারপতি সমবায়ে গঠিত ঢাকা হাইকোর্টের এক বিশেষ বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট আটকাদেশকে বৈধ বলিয়া ঘােষণা করেন। অতঃপর ঢাকা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে একটি আপীল দায়ের করা হয়। সুপ্রীম কোর্ট উক্ত আপীলটি গ্রহণ করিয়া জনাব শেখ মুজিবর রহমানের মামলাটি পূনর্বিচারের জন্য ঢাকা হাইকোর্টে প্রেরণ করেন।
জনাব শেখ মুজিবর রহমানকে সময়ে সময়ে প্রদত্ত আটকাদেশের ভিত্তিতে গত বছরের মে মাস হইতে আটক রাখা হয় এবং সর্বশেষে গত জানুয়ারী মাসের ২৫ তারিখে প্রদত্ত এক আদেশের ভিত্তিতে আটকের মেয়াদ আরও তিন মাসের জন্য বর্ধিত করা হয়।
ইতিমধ্যে ঢাকার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আফসার উদ্দিন দেশরক্ষা আইনের ৪৭(৫) বিধি মােতাবেক জনাব শেখ মুজিবরের বিরুদ্ধে আনীত এক মামলায় তাহাকে এক বৎসর তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
উপরােক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার দায়রা জজ সমীপে এক আপীল পেশ করা হয় এবং জামিনে জনাব মুজিবরকে মুক্তি প্রদান করার প্রার্থনা জানান হয়। ঢাকার দায়রা জজ গত ২৯ শে মে তারিখে জনাব মুজিবরকে জামিনে মুক্তি প্রদানের আদেশ দেন, অতঃপর উক্ত জামিনের আদেশ জেল কর্তৃপক্ষকে ১লা জুন তারিখে প্রেরণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট জামিনের আদেশ প্রাপ্তির পর জেল কর্তৃপক্ষ জনাব শেখ মুজিবরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সদর দরজায় মূক্তি দানের জন্য লইয়া আসেন। কিন্তু সেই সময় দেশরক্ষা আইনের ৩২ বিধিবলে প্রদত্ত ঢাকা ডেপুটি কমিশনারের এক আদেশ তাঁহার উপর জারী করা হয় এবং মুক্তি প্রদান না করিয়া পূনরায় তাঁহাকে আটক রাখা হয়। উপরােক্ত আদেশে জনাব শেখ মুজিবরকে আদেশ জারির দিন হইতে নব্বই দিন আটক রাখা হইবে বলিয়া উল্লেখ করা হয়।
আবেদনকারী আলােচ্য হেবিয়াস কর্পাস আবেদনে উপরােক্ত আটকাদেশকে অবৈধ, এখতেয়ার বহির্ভূত ও উদ্দেশ্যমূলক বলিয়া চ্যালেঞ্জ করিয়াছেন।
উপরােক্ত বেঞ্চ আবেদনকারীর অভিযােগ পরীক্ষাযােগ্য মনে করিয়া সংশ্লিষ্ট কারণ দর্শাইবার রুলটি জারি করেন।
আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব আবদুস সালাম খান ও তাঁহাকে সাহায্য করেন জনাব এম, এ, রব, জনাব আমিনুল হক ও জনাব জোহা চৌধুরী।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!