You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
৭ই মে ১৯৬৭

পত্রিকাবিশেষের অপপ্রচারের জবাবে ৪ জন আওয়ামী লীগ নেতার বিবৃতি
পি ডি এম নির্বাচনী জোট নহে ও দলীয় কার্যক্রম চালানাের পরিপন্থী নহে
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

পাকিস্তান ডেমােক্র্যাটিক মুভমেন্টের ৮-দফা কর্মসূচীর বিশদ বিশ্লেষণ করিয়া এবং ইহার বিরুদ্ধে সরকার সমর্থক প্রেস ট্রাষ্ট পরিচালিত পত্রিকাসমূহের মিথ্যা অপপ্রচারের জবাবে গতকাল আওয়ামী লীগের ৪ জন নেতা একটি বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব মুজিবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী, নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জহিরুদ্দিন ও যশাের জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব এ, রশীদ। বিবৃতিতে তাঁহারা বলেন যে, প্রকৃতপক্ষে ৮-দফা কর্মসূচী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক কমিটিরই মানসপুত্র। গত ২২ শে হইতে ২৪ শে এপ্রিল পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সভায় উক্ত কমিটিদ্বয় ৬-দফা কর্মসূচীর অনুসরণে উক্ত ৮-দফা দাবী প্রণয়ন করে এবং ঐক্যের আলােচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহিত আলােচনার উদ্দেশ্যে উহাকে ভিত্তি হিসাবে গ্রহণের জন্য দলের আলােচনা কমিটির প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।
পরবর্তীকালে অন্যান্য দলীয় নেতৃবৃন্দ উহা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করে। ফলে উহার ভিত্তিতে পি ডি এম গঠন করা সম্ভব হয়।
বিবৃতিতে তাঁহারা দৃঢ়তার সহিত অস্বীকার করেন যে, পি, ডি, এম গঠনের দ্বারা বিভিন্ন দলীয় কার্যকলাপ বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে অথবা উহার দ্বারা একটি নির্বাচীন জোট গঠন করা হইয়াছে। | তাহারা বলেন যে, ৮-দফা কর্মসূচী কোন কোন ক্ষেত্রে ৬-দফা অপেক্ষা অধিক স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতিবহ।
তুলনামূলক চিত্র তুলিয়া ধরিয়া তাঁহারা বলেন যে, ৮-দফা ও ৬-দফা উভয় কর্মসূচীরই ১নং দাবীতে হইতেছে শাসনব্যবস্থার ধরন সম্বন্ধীয় এবং উভয় দাবীই একইরূপ।
৬-দফার দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রের হাতে দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র বিষয় ও মুদ্রা ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। ৮-দফার ২ নং দফায় উহাদের সাথে আন্তঃ আঞ্চলিক যােগাযােগ ও বাণিজ্য এবং ফেডারেল ফাইনান্স যােগ করা হইয়াছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ঐগুলির পরিচালন ভার কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত করার পরিবর্তে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চল হইতে অসমসংখ্যক প্রতিনিধি লইয়া গঠিত কতিপয় বাের্ডের নিকট প্রদানের প্রস্তাব করা হইয়াছে।
৩ নং দাবী ৬-দফা কর্মসূচীর ৩নং দাবীতে পূর্ব পাকিস্তান হইতে পুঁজির পাচার বন্ধের জন্য দুইটি সতন্ত্র কারেন্সী (সহজ বিনিময়যােগ্য) প্রবর্তন প্রস্তাব করা হইয়াছিল। কিন্তু ৮-দফা কর্মসূচীতে একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যাংক ডিপােজিত প্রফিট ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম শিল্প মুনাফা প্রভৃতির পাচার বন্ধের জন্য প্রয়ােজনীয় আইন প্রণয়নের কথা বলা হইয়াছে।
৪ নং ৬-দফার ৪ নং দফায় কেন্দ্রের ট্যাক্স গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার কথা বলা হইয়াছে। ৮-দফার কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র নিজস্ব বিষয়গুলি পরিচালনার জন্য সীমিত পরিমাণে ট্যাক্স ধার্যের ক্ষমতা প্রদান করা হইয়াছে।
৫নং ৬-দফার ৫নং দফায় বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপারে দুইটি অঞ্চলের জন্য স্বতন্ত্র হিসাব রাখার কথা বলা হইয়াছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়ােজন উভয় অঞ্চল কর্তৃক সমভাবে অথবা নির্দিষ্ট অনুপাতে পরিপূরণের কথা বলা হইয়াছে।
কিন্তু ৮-দফা কর্মসূচীতে প্রদেশসমূহের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রদেশগুলির হাতে রাখার এবং আগামী ১০ বৎসর পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান কর্তৃক অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পূর্ণ অংশ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করার কথা বলা হইয়াছে।
অধিকন্তু ৮-দফা কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়ােজন মিটাইবার ক্ষেত্রে দেশরক্ষা, পররাষ্ট্রীয় বিষয়ক প্রভৃতি বাবদ খরচের এবং বৈদেশিক সাহায্য প্রভৃতি ব্যয়ের যে পরিমাণ সংশ্লিষ্ট প্রদেশগুলিতে ব্যয়িত হইয়াছে, শুধু সেই পরিমাণই সংশ্লিষ্ট প্রদেশগুলির নিকট হইতে আদায় করার কথা বলা হইয়াছে। সুতরাং ৬-দফা কর্মসূচী অনুযায়ী যেখানে দেশরক্ষা খরচ বাবদ পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণকে ১১২ কোটি টাকা (কেন্দ্রের দেশরক্ষা বাজেট ২২৪ কোটি টাকার অর্ধেক প্রদান করিতে হইত)। সেখানে ৮-দফা কর্মসূচী অনুযায়ী মাত্র ১২ কোটি টাকা প্রদান করিতে হইবে। কারণ, এই প্রদেশে গত বছরের দেশরক্ষা ব্যয় (বাজেট অনুযায়ী) ১২ কোটি টাকার অধিক নয়।
৬ নং ৬-দফার ৬নং দফায় পূর্ব পাকিস্তানের আধা সামরিক বাহিনী গঠনের কথা বলা হইয়াছে। কিন্তু ৮-দফা কর্মসূচীতে সকল দেশরক্ষা বিভাগের চাকুরীতে সংখ্যাসাম্যের নীতি প্রয়ােগ ও উভয় অঞ্চলের দেশরক্ষা প্রস্তুতি সমপর্যায়ে উন্নীত করার কথা বলা হইয়াছে। বিবৃতিদাতাগণ বলেন যে, ৮-দফা কর্মসূচী শুধু ৬-দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতেই রচিত হয় নাই, বরং উহাকে বহুলাংশে ৬-দফা অপেক্ষা উন্নত করা হইয়াছে এবং উহা গ্রহণ করিয়া পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানের দাবী-দাওয়ার প্রতি মর্যাদা এবং পাকিস্তানের সংহতির স্বার্থে সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানের নীতির প্রতি ঐকান্তিক সমর্থন এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়াছেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!