সংবাদ
২২শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৭
পল্টনের জনসভার প্রস্তাবাবলী
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
গতকাল শহীদ দিবস উপলক্ষে আহূত পল্টনের জনসভায় গৃহীত প্রথম প্রস্তাবে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে সরকারী ছুটি ঘােষণার দাবী জানান হয় এবং উহা সাপেক্ষে জনসাধারণের প্রতি আগামী বৎসর হইতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালনের আহ্বান জানান হয়।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে জনাব শেখ মুজিবর রহমান, জনাব তফাজ্জল হােসেন, শ্রী সত্যেন সেন ও শ্রী রণেশ দাশ গুপ্তসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করা হয় এবং সকল গ্রেফতারী পরােয়ানা (রাজনৈতিক কারণে) প্রত্যাহারের দাবী জানান হয়।
তৃতীয় প্রস্তাবে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দাবী করা হয়। দেশরক্ষা, মুদ্রা ও পররাষ্ট্র দফতর (রাজনৈতিক) কেন্দ্রের হাতে রাখিয়া বাকী সকল বিষয়ের এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব পূর্ব পাকিস্তান সরকারের হাতে অর্পণ করার, দুইটি অঞ্চলে দুইটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক রিজার্ভ ব্যাংক গঠন ও পূর্ব পাকিস্তান হইতে পুঁজির পাচার বন্ধের দাবী জানান হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের সাবেক প্রদেশসমূহের পুনরুজ্জীবনেরও দাবী জানান হয়। অপরাপর প্রস্তাবে প্রাপ্তবয়স্কের প্রত্যক্ষ ভােটাধিকার, পার্লামেন্টারী শাসনব্যবস্থা কায়েম, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, সংবাদপত্রের উপর আরােপিত নিষেধাজ্ঞা ও ইত্তেফাকের উপর হইতে বাজেয়াপ্তি নির্দেশ প্রত্যাহার, শ্রমিক স্বার্থ বিরােধী কালাকানুনসমূহ বাতিল, সকল দেশী ও বিদেশী পুঁজি, ব্যাঙ্ক ও বীমা ব্যবসায় জাতীয়করণ ও হামুদূর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপাের্ট বাতিলপূর্বক ছাত্রদের প্রখ্যাত ২২ দফা দাবীর ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থা গড়িয়া তােলার দাবী জানান হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের ছাত্রবিরােধী কার্যকলাপের অবসান, ইডেন কলেজের শহীদ বেদী ভাঙ্গার ও মীরপুরে ছাত্রদের উপর দুবৃত্তদের গুণ্ডামির ও সিদ্ধেশ্বরীতে ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জের নিন্দা করিয়াও প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে। গাইবান্ধার ছাত্রদের উপর গুলীবর্ষণ সম্পর্কে উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবীতেও একটি প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব