সংবাদ
২৮শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৭
নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সভা
ঢাকা, ২৬শে ফেব্রুয়ারী।-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের এক প্রেস রিলিজে বলা হয় যে, আজ ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটি ও বিশিষ্ট সদস্যদের এক যুক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট জনাব শামসুল হক উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান জনাব আবদুস সালাম খান। ছয়দফার ভিত্তিতে ও আওয়ামী লীগের ইশতাহারে ঘােষিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যের ভিত্তিতে পার্টির সাংগঠনিক ও অন্যান্য কার্যতৎপরতা আরও ব্যাপকভাবে পরিচালনার আহ্বান জানান। আমেনা বেগম, দেওয়ান সাইফুল আলম, জনাব আহমেদুল হক চৌধুরী, জনাব নূরুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব বজলুর রহমান প্রমুখ বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা সভায় বক্তৃতা করেন। সভায় নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহ গৃহীত হয়।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক জনাব সিরাজুদ্দীন আহমেদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট সদস্য শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন, জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী, এম, এন, এ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জনাব আবদুস মােমেন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সমাজ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জনাব ওবায়দুর রহমান, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য খােন্দকার মুস্তফা আহমেদ। আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য মােল্লা জালালুদ্দীন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব মহিউদ্দিন, ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক জনাব মােঃ সুলতান এবং অন্যান্য সকল রাজনৈতিক নেতার মুক্তির দাবী জানানাে হয়।
(১) ইত্তেফাক সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হােসেনসহ সকল আটক সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তি দানের দাবী জানান হয়।
(২) আটক সকল রাজবন্দীকে প্রথম শ্রেণীর রাজবন্দীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য দাবী জানানাে হয়।
(৩) জেলে আটক থাকাকালে সকল রাজবন্দী ও অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন ব্যক্তিগণ তাহাদের প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য জেল কর্তৃপক্ষের নিকট কিছু অর্থ জমা রাখাও এবং এই ব্যবস্থা দেশের কারাগারগুলিতে বহুদিন হইতে চলিয়া আসিতেছিল; কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ডি,পি, আর, বন্দীদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। সরকারের এক নির্দেশেই ইহা বন্ধ করা হইয়াছে। এই সভা সরকারের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করিতেছে।
(৪) অপর এক আদেশবলে ডি, পি, আর বন্দীদের বাহির হইতে রান্না করা কোন খাবার কিংবা রুটি, কেক, বিস্কুট প্রভৃতি দেওয়া সরকার নিষিদ্ধ ঘােষণা করিয়াছেন। সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে এই নিষেধাজ্ঞা তুলিয়া নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানাে হয়।
(৫) জনাব মুস্তাক আহমদ ও জনাব তাজুদ্দীনকে রাজশাহী ও ময়মনসিংহ জেল হইতে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তরিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানাে হয়।
(৬) আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রদেশের সমস্ত থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের আহ্বান জানানাে হয়।
(৭) সভায় সিদ্ধান্ত করা হয় যে, যে কোন মূল্যের বিনিময়েও ছয়দফা দাবীকে বাস্তবায়িত করিতে হইবে।
(৮) সভায় সকল ছাত্র ও শ্রমিক নেতার মুক্তি এবং শ্রমিক ও ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে সকল গ্রেফতারী পরােয়ানা প্রত্যাহারের দাবী জানানাে হয়।
(৯) খাদ্য ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর মূল্য হ্রাসের জন্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানাে হয়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব