You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
৮ই মার্চ ১৯৬৭

ভুট্টোর উক্তি দায়িত্ব জ্ঞানবর্জিত : গবর্ণর

ঢাকা, ৭ই মার্চ (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর জনাব আবদুল মােনায়েম খান আজ রাত্রে প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকারবিরােধী উক্তির নিন্দা করেন। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনাব ভুট্টো সম্প্রতি যে সকল উক্তি করিয়াছেন, তিনি উহাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি বলিয়া বর্ণনা করেন।
আজ রাত্রে এখানে কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা ও কর্মীদের এক। সমাবেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে গভর্ণর জনাব ভুট্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ হইতে সরিয়া আসার পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে যে সকল উক্তি করিয়াছিলেন উহার উদ্ধৃতি দিয়া বলেন যে, এই সকল বিরােধী উক্তিই তাহার অপরিপক্কতা ও বাগাড়ম্বরতা প্রমাণ করে। গভর্ণর বলেন, যে ব্যক্তি প্রথম হইতে এই সরকারের সহিত সংশ্লিষ্ট ছিলেন সেই ব্যক্তিই পদচ্যুত হওয়ার পর মুহূর্তে যদি সরকারের নিন্দা করে তবে তাঁহাকে নীতি, আদর্শ ও বিশ্বাসহীনই বলা যায়।
গভর্ণর বলেন, পাকিস্তানের জনগণের স্মৃতির অন্যায় সুযােগ গ্রহণ করা জনাব ভুট্টোর উচিত হইবে না। কারণ পাকিস্তানের জনগণের স্মৃতিতে সকল ঘটনা ও বিষয়ই তাজা রহিয়াছে।
তিনি বলেন, জনাব ভুট্টোই একজন সাধারণ নাগরিক হইতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের একজন নির্ভীক সৈনিক হইয়া ছিলেন এবং জনাব ভুট্টোই গত বছর ২০শে মার্চ তারিখে ঢাকায় পাকিস্তান মুসলিম লীগের এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে চ্যালেঞ্জ দিয়াছিলেন। জনাব ভুট্টোই সেই ব্যক্তি যিনি মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অন্যান্য সকল বিরােধী দলের বিলােপ এবং সকল সরকারী কর্মচারীকে মুসলিম লীগের দলভুক্ত করার পক্ষে সুপারিশ করিয়াছিলেন। গভর্ণর বলেন, বর্তমানে ইহা খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে, সরকার হইতে সরিয়া আসার পরই তিনি গণতন্ত্রের চালক হইয়া বসিলেন।
গভর্ণর মহােদয় বলেন, জনাব ভুট্টো পাক-চীন নীতির তথাকথিত উগদাতা বলিয়া দাবী করিয়া থাকেন। সরকারে থাকাকালীন বক্তব্যের সহিত তাঁহার বর্তমান দাবীর কোন সামঞ্জস্য নাই। কারণ তিনি বলিয়াছিলেন, প্রেসিডেন্ট চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকারী। ঐতিহাসিক অগ্রগতি ও চীনের সহিত পাকিস্তানের সম্পর্ক বিশ্ববিদিত। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব চীনের প্রতি পাকিস্তানের এই নীতির ভিত্তিস্থাপনকারী জনাব ভুট্টো নহেন।
তিনি বলেন যে, পাক-চীন সীমানা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।
মুসলিম লীগের সদস্য ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে গভর্ণর বলেন, ইহা অতিশয় পরিতাপজনক যে, বর্তমান সরকারের সহিত যিনি সংশ্লিষ্ট থাকিয়া এবং প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের প্রীতি ও শুভেচ্ছার সৌজন্য লাভ করিয়াছেন, আজ তিনিই তাহার সমালােচকদের কাতারে শামিল হইয়াছেন। জাতীয় পরিষদে জনাব ভুট্টোই একদিন বিরােধী দলকে বিশ্বাসঘাতক বলিয়া অভিহিত করিয়াছিলেন।
তিনি বলেন যে, জনাব ভুট্টো মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন অতএব, মুসলিম লীগ সরকারের সমালােচনা করা তাঁহার উচিত নহে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!