সংবাদ
১৩ই মার্চ ১৯৬৭
পল্টনে কাউন্সিল মুসলিম লীগের জনসভা
উভয় প্রদেশ হইতে পর্যায়ক্রমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দাবী
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
গতকল্য পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম (কাউন্সিল) লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পল্টন ময়দানের জনসভায় এবডােযুক্ত কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা জনাব খান আবদুল কাইয়ুম খান দেশের উভয়াঞ্চল হইতে পর্যায়ক্রমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব ভার প্রদেশবাসীর হস্তে অপর্ণ, মৌলিক মানবিক অধিকার প্রদান, বিনাবিচারে আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভােটাধিকার প্রদানের দাবী জানান।
প্রাদেশিক মুসলিম (কাউন্সিল) লীগের সহ-সভাপতি জনাব আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কাউন্সিল মুসলিম লীগ দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব মুখলেছুজ্জামান, প্রাদেশিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামের জনাব মঈদুর রহমান চৌধুরী, জনাব জয়নাল আবেদীন, জনাব সিরাজউদ্দীন আহমদ, জনাব মজিদুল হক এবং আরও অনেকে বক্তৃতা করেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তৃতা প্রসঙ্গে ‘খানে আজম’ পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার অনুকূলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, তবে একান্তই যদি প্রেসিডেন্টশিয়াল পদ্ধতি অব্যাহত রাখিতে হয় তাহা হইলে শাসনতন্ত্র সংশােধন করিয়া পর্যায়ক্রমে দেশের উভয়াঞ্চল হইতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিধান প্রচলন অপরিহার্য। এই পথেই সংহতি দৃঢ়তর ও পরিস্থিতির সত্যিকার উন্নতি হইবে বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।
কাউন্সিল লীগ নেতা সরকারের কার্যাবলীর কঠোর সমালােচনা করিয়া জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার ও দেশরক্ষা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করার দাবী জানান। ‘খানে আজম’ বলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানে বসিয়া আমরা বিশ্বের খবর পাই কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে কি ঘটিতেছে বা পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা কি ভাবিতেছেন, তাহার কোন সংবাদ সেখানকার সংবাদপত্রগুলিতে পাওয়া যায় না। তিনি বিরােধী দলীয় ঐক্যের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে উহা কষ্টকর বলিয়া মন্তব্য করেন। তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগ ও জামাতে ইসলামীর যে সকল নেতার সঙ্গে অর্থপূর্ণ আলােচনা সম্ভব তাহাদের সকলেই কারান্তরালে। জনাব কাইয়ুম খান তাহার ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব এতদঞ্চলের উপর ছাড়িয়া দেওয়ার এবং সেনাবাহিনীতে অধিক সংখ্যায় পূর্ব পাকিস্তানী নিয়ােগের আহ্বান জানান। তিনি জাতীয় ঐক্য ও সংহতির উপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব মুখলেছুজ্জামান সরকারের ভ্রান্ত খাদ্যনীতির সমালােচনা করিয়া বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থা ও জনসাধারণের দুঃখ-দৈন্যের জন্য সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন যে, কর্তৃপক্ষীয় মহলের আশ্বাসবাণী অনুযায়ী খাদ্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক হইলে রেশনে চাউলের পরিমাণ হ্রাস করিয়া ভুট্টা সরবরাহ করা হইতেছে কেন? জাতীয় পরিষদের ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি বলেন যে, জাতীয় পরিষদের প্রত্যেকটি অধিবেশনকালে বিপুল অর্থব্যয় হয়-অথচ পরিষদ সদস্যদের সেখানে করণীয় কিছু নাই। অন্যান্য বক্তাও খাদ্য পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করিয়া অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। চট্টগ্রামের জনাব মাইদুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও ‘এত্তেফাক’ সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হােসেনসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও ইত্তেফাকের ছাপাখানা বাজেয়াপ্তি আদেশ প্রত্যাহারের দাবী জানান।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব