সংবাদ
৯ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৭
করাচী আওয়ামী লীগ এডহক কমিটির সভায় দেশীয় ও বিশ্ব পরিস্থিতি আলােচনা
মতান্ধতা ও কমিউনিজম উভয়ই মানব সমাজকে ধ্বংসের পথে লইয়া চলিয়াছে
করাচী, ৫ই ফেব্রুয়ারী।- অদ্য করাচী আওয়ামী লীগ এডহক কমিটির এক সভা, জনাব আবু আসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বলিয়া আওয়ামী দফতর হইতে পরিবেশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ।
সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালােচনা করিয়া গৃহীত প্রস্তাবে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, বর্তমান বিশ্ব মতান্ধতা ও কমিউনিজম এই দুই শক্তি জোটের মধ্যে বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছে এবং উভয় মানবসমাজকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের পথে লইয়া চলিয়াছে। ইহার মাঝে অযুত জনগণের স্বাধীনতা ও মুক্ত সংগ্রামের মধ্যদিয়া গণতন্ত্রের আশার আলােকরশ্মি প্রত্যক্ষ করা যাইতেছে। পরিতাপের বিষয় এই যে, এমনকি গণতন্ত্রের যাহারা ধারক ও বাহক বলিয়া কথিত তাঁহারাও যাহা প্রচার করিয়া থাকেন, কাজে উহা করেন না। এক্ষণে দেশের জনগণকে শােষণ ও নির্যাতন হইতে পরিত্রাণের জন্য প্রয়ােজন সত্যিকার গণতন্ত্রকামীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। পাকিস্তানের বিরােধী দলগুলির প্রথমতঃ উহাই করা উচিত, যাহা তাহারা অপরের নিকট হইতে প্রত্যাশা করিয়া থাকেন। তাহাদিগকে অন্য বিরােধী দলের নেতৃবৃন্দের অকৃত্রিমতা ও আন্তরিকতা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হইতে হইবে, এইভাবে পারস্পরিক বিশ্বাসের মনােভাব গড়িয়া তুলিতে হইবে। শ্লোগান ও মিথ্যা আশ্বাস প্রদানের দিন চলিয়া গিয়াছে। বর্তমানে বাস্তব রাজনীতির যুগ। এক্ষণে একমাত্র সঠিক পথ হইল সকলে একত্রে এক বৈঠকে মিলিত হইয়া দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যাহা প্রয়ােজনীয় উহা গ্রহণ করিয়া বাস্তব রাজনীতির নীতি নির্ধারণ করা। গণতন্ত্রের অর্থ হইল ‘বাচ ও বাঁচতে দাও’ এই নীতিতে বিশ্বাস করা; ভিন্নতার মাঝে ঐক্য সাধন, পৃথক মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার নীতিকে বিশ্বাস করা। নেতৃবৃন্দকে কোনরূপ দ্বিধা না রাখিয়া খােলা মন লইয়া অগ্রসর হইতে হইবে। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার ন্যায্য সমাধানের জন্য তাহাদিগকে শেখ মুজিবর রহমানের ছয়-দফা কর্মসূচীকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক কাঠামাে সম্পর্কিত আলাপআলােচনার ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করিতে হইবে।
ইহাছাড়া এড-হক কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান, ইত্তেফাক সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হােসেনের মুক্তির দাবী জানাইয়া কতিপয় প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব