You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক পূর্বদেশ
১৫ই জানুয়ারী ১৯৬৭

বিরােধী দলের সেমিনারে নূরুল আমিন বলেন
জনগণের ম্যাণ্ডেট নিয়ে নিম্নতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালাতে হবে
(পূর্বদেশের প্রতিনিধি)

দলীয়, ব্যক্তিগত ও ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিতে না পারলে বিরােধী রাজনৈতিক দলসমূহের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা সম্ভবপর হবে না বলে জাতীয় পরিষদে বিরােধী দলের নেতা জনাব নূরুল আমীন গত রবিবার ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ন্যূনতম কর্মসূচী “গণতন্ত্র” আদায়ের দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব।
পাকিস্তান ষ্টাডি সার্কেলের উদ্যোগে উক্ত সেমিনারের আয়ােজন করা হয়। সেমিনারের আলােচ্য বিষয় ছিল “বিরােধী দলের ঐক্য সমস্যা।” জনাব নূরুল আমীন এতে সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন জনাব আতাউর রহমান খান, জাতীয় পরিষদে বিরােধী দলের ডেপুটি লিডার জনাব শাহ আজিজুর রহমান, জনাব ফরিদ আহমদ, ব্যারিষ্টার আবদুল হক, জনাব শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গােলাম আজম এবং মাহমুদ আলী।
সার্বজনীন ভােটাধিকারের ভিত্তিতে
সার্বজনীন ভােটাধিকার আদায়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিরােধী দলসমূহকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তােলার আহ্বান জানিয়ে জনাব নূরুল আমীন বলেন যে, গণশক্তির উপর আমরা নির্ভর করি, তাদের হাতে যদি ভােটের অস্ত্র এবং তার সদ্ব্যবহার করবার অধিকার প্রদান করতে পার তবে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অধিকারই সর্বাপেক্ষা বড় অধিকার। এই গণতন্ত্রের ভিত্তিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে কি বাধা রয়েছে? গণতন্ত্রের অর্থ হল পরম সহিষ্ণুতা। তাই আজ আমাদের বিরূপ ভাবধারা বর্জন করতে হবে।
প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক-দলগুলির মধ্যে ঐক্য আনয়নের যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ মহৎ প্রচেষ্টার জন্য আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।
জনগণের হাতে ক্ষমতা থাকলে
বর্তমান শাসনতন্ত্রের সমালােচনা করে জনাব আমীন বলেন যে, বর্তমান অবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারকে পরিবর্তন করার পক্ষে অসুবিধা রয়েছে। যদি জনগণের হাতে ক্ষমতা থাকত তবে একমাত্র তখনই প্রমাণিত হত যে, জনগণের সমর্থন কাদের পিছনে রয়েছে।
জনাব আতাউর রহমান
বর্তমান শাসনব্যবস্থার তীব্র সমালােচনা করে জনাব আতাউর রহমান খান বলেন যে, সামরিক আইন প্রবর্তনের পর থেকেই এদেশের জাতীয় জীবনে এক চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।
জনাব আতাউর রহমান খান অভিযােগ করেন, আজ পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা এবং সব বিষয়েই পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কতিপয় পরিবার ছাড়া জনসাধারণের কোন প্রকার উন্নতি সাধন করতে পারেননি।
বিভিন্ন দলের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের উপর গুরুত্ব আরােপ করে তিনি বলেন যে, জাতীয় জীবন নির্ভর করে জাতীয় ঐক্যের উপর। গণতান্ত্রিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য তিনি বিরােধী দলসমূহের প্রতি আহবান জানান।
জনাব ফরিদ আহমদ
গণতন্ত্র আদায়ের জন্য বিরােধী দলসমূহের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে নেজামে এছলাম পার্টির নেতা জনাব ফরিদ আহমদ বলেন যে, আমরা পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা করেছি এবং সেই প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, জনসাধারণের কোন দোষ নেই। যদি বিরােধী দলসমূহের মধ্যে ঐক্য বজায় থাকত তবে জনগণের দাবী আদায় করার জন্য কোন প্রকার কষ্টসাধ্য হত না। তিনি বলেন, ঐক্য স্থাপনের জন্য জনসাধারণেরও উচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণ ধিকৃত সরকার, তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য জনগণও আজ উদগ্রীব হয়ে রয়েছে।
শাহ আজিজুর রহমান
শাহ আজিজুর রহমান বলেন যে, ঐক্যের প্রশ্নই আজ বিরােধী দলসমূহের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেননা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া দেশের কোন সমস্যাই সমাধান হবে।
তিনি বলেন, ঐক্য আনতে হলে প্রথমেই আমাদের প্রধান কর্তব্য হবে শেখ মুজিবর রহমানসহ যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী কারাগারে আবদ্ধ আছেন তাদের মুক্তি দাবী করে কারামুক্ত করা এবং এরপর সকলে মিলে ঐক্যের আলােচনায় মিলিত হওয়া অবশ্যই সম্ভব হবে।
জনাব আজিজ বলেন, আলােচনা, জনসভা এবং সংবাদপত্রের বিবৃতির মাধ্যমে ঐক্য আসতে পারে না, ঐক্যের জন্য প্রয়ােজন ঘরােয়া বৈঠক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বুঝান।
জনাব আবদুল হক
প্রাক্তন এম এন এ এবং ন্যাপ সদস্য ব্যারিষ্টার আবদুল হক বলেন যে, যে কোন বৃহত্তর জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা অন্য সব দলের সহিত একযােগে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি। ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে আমরা যুক্ত শিবির করতে চাই-তবে সেখানে শুধু গণতন্ত্রের শ্লোগান থাকলে চলবে না, সেখানে সাম্রাজ্যবাদী বিরােধী ভূমিকা এবং কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের দাবীর কথাও উল্লেখ থাকতে হবে।
বিরােধী দলের মধ্যে ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে ঐক্য আনয়নের জন্য ইহা প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) নেতা জনাব শফিকুল ইসলাম, জামাতে ইছলামী নেতা অধ্যাপক গােলাম আজম এবং এন, ডি, এফ, নেতা জনাব মাহমুদ আলী।
প্রচারপত্র মামলা মূলতবী
ঢাকার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আফসারউদ্দিন আহমদের কোর্টে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে প্রচারপত্র মামলা চলছে, গত বৃহস্পতিবার ২৫ মার্চ পর্যন্ত তার শুনানী মূলতুবী রাখা হয়েছে।
উল্লেখযােগ্য যে, ১৯৬৪ সালের জানুয়ারী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় কতিপয় প্রচারপত্র বিলির অভিযােগে রমনা পুলিশ উক্ত মামলায় ১২ জনকে অভিযুক্ত করেছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ৩জন শেখ মুজিব, জনাব তফাজ্জল হােসেন ও জনাব এ, কে, ওবায়েদুর রহমান বর্তমানে বন্দী রয়েছেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!