You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.10.25 | বেকসুর খালাস শেখ মুজিবের মামলার রায় | দৈনিক পাকিস্তান - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পাকিস্তান
২৫ শে অক্টোবর ১৯৬৬

বেকসুর খালাস শেখ মুজিবের মামলার রায়
(কোর্ট রিপাের্টার)

ঢাকার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব এম এ মালেক গতকাল সােমবার পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান আপত্তিকর বক্তৃতা করার অভিযােগ আনীত মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন।
বর্তমান দেশরক্ষা আইনে আটক শেখ মুজিবর রহমানের মামলার শুনানী ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ভেতরে এতদিন চলার পর গতকাল ম্যাজিষ্ট্রেট জেলের ভেতরে আদালতে রায় দেন।
ম্যাজিষ্ট্রেট তাঁর রায়ে বলেন যে, বাদীপক্ষ অভিযােগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।
মামলার অভিযােগে বলা হয়েছিল যে, ১৯৬৪ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে শেখ মুজিবর রহমান এক জনসভায় বক্তৃতা করেন। উক্ত বক্তৃতায় অংশবিশেষ আইন-শৃঙ্খলার পরিপন্থি ও সরকার বিরােধী। সরকার পক্ষ হতে রমনা থানার সাব-ইন্সপেক্টর জনাব মােহাম্মদ ইসমাইল পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা অর্ডিনান্সের ৭(৩) ধারা মােতাবেক শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ভেতরে মামলার শুনানী হয়। সরকারপক্ষ থেকে মামলা পরিচালনা করেন মির্জা সােহরাব বকত ও তারেক সাহায্য করেন কোর্ট ডিএসপি জনাব আবদুল খালেক। বিবাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভােকেট জনাব আবদুল সালাম খান, জনাব বজহিরুদ্দীন, জনাব আবদুল হােসেন, খােন্দকার মাহবুব হােসেন প্রমুখ।
সরকারপক্ষ এই মামলায় মােট ৬ জন সাক্ষী উপস্থিত করেন। তারা হচ্ছেন রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ, জনাব মােহাম্মদ ইসমাইল, সরকারী বার্তা লেখক জনাব মােজাম্মেল হক, ঢাকার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আফসার উদ্দীন আহমদ, মােহাম্মদ ইসমাইল নামক একজন ব্যবসায়ী, তাঁতি বাজারের বাশিন্দা সৈয়দ হায়াত ও মামলার তদন্তকারী পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর জনাব মােহাম্মদ সেকেন্দার আলী। সরকারপক্ষ থেকে এই মামলায় মােট ৭টি এক্সিবিটও দাখিল করা হয়।
হাকিম তার রায়ে উল্লেখ করেন যে, এই মামলার প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে মূলতঃ দুটি। প্রথমতঃ শেখ মুজিবর রহমান পল্টন ময়দানে সরকারকে শােষক ও জালেম বলে সাধারণের মনে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তৃতা করেছেন কিনা এবং দ্বিতীয়ত সে বক্তৃতা কতখানি আইন বিরােধী।
জনাব এম এ মালেক তার রায়ে উল্লেখ করেন যে, ১ নং সাক্ষী সাবইন্সপেক্টর জনাব মােহাম্মদ ইসমাইলের সাক্ষ্য পরস্পর বিরােধী। তার মৌখিক সাক্ষ্য ও লিখিত অভিযােগের মধ্যে স্ব-বিরােধীতা রয়েছে। বক্তৃার অনুলিপি তিনি আটক করেন নাই, অথচ তা তার কাছে কিভাবে এল তা বােঝা মুশকিল।
২ নং সাক্ষীর সাক্ষ্যেও পরস্পর বিরােধীতা রয়েছে। ১ নং সাক্ষীর লিখিত অভিযােগ ও তার মৌখিক সাক্ষ্যের মধ্যে মিল নাই। বিবাদীপক্ষের কৌশুলীর জেরার জবাবে সাক্ষী বলেন যে, তিনি বহু জনসভায় উপস্থিত থেকেছেন কিন্তু কোন বক্তৃতার অংশ স্মরণ নাই। অথচ শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতার অংশবিশেষ স্মরণ আছে, ইহা সত্যিই অদ্ভুত ও আশ্চর্য বলে মনে হয়। এই সাক্ষী আরও বলেন যে, বক্ততার অনুলিপি তিনি লেখেন। নাই, দাখিল করেন নাই এবং এক্সিবিট করেন নাই। বাদীপক্ষ থেকে সাক্ষ্যের এই বক্তব্যের বিরােধীতা করা হয়। এটা খুবই কৌতুককর বাদীপক্ষ থেকে তিনি যে সাক্ষ্য দেন বিবাদীর জেরার সময় তার বিরােধী উক্তি করেন। তার সাক্ষ্য নির্ভরযােগ্য নয়।
বাংলা ভাষায় প্রাথমিক জ্ঞান নাই।
হাকিম রায়ে বলেন, ৩নং সাক্ষী একজন অবাঙ্গালী। তদন্তকারী অফিসার তার কোন জবানবন্দী নিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে বিবাদীপক্ষের কৌশুলীর এক জেরার জবাবে তিনি বলেন যে, বাংলা ভাষায় কোন প্রশ্নই তিনি বুঝতে পারেন না। তিনি শুধু উর্দু পড়িতে পারেন। তিন নম্বর সাক্ষীর বাংলা ভাষায় প্রাথমিক জ্ঞান পর্যন্ত নেই। বাদীপক্ষ থেকে কি বলতে হবে সাক্ষীকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। ৪নং সাক্ষীও একজন অবাঙ্গালী ও শেখান সাক্ষী। এরা বাদীপক্ষের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। সরকার পক্ষের ৪ নং ও ৫ নং সাক্ষী হচ্ছেন যথাক্রমে জনাব আফসারউদ্দীন (ম্যাজিষ্ট্রেট ফাষ্ট ক্লাস) ও তদন্তকারী অফিসার মােহাম্মদ সেকেন্দার আলী (সাব-ইন্সপেক্টর)। জনাব আফসারউদ্দীন জনসভায় উপস্থিত ছিলেন কিন্তু বক্তৃতার কোন অংশ তার স্মরণ নাই বলে সাক্ষ্য দেন। বিবাদীপক্ষের এক জেরার জবাবে তিনি বলেন যে, কোন অনুলিপিতে তিনি স্বাক্ষর করেন নাই।
বাদীপক্ষ মামলা প্রমাণে ব্যর্থ
রায়ের উপসংহারে হাকিম উল্লেখ করেন যে, বাদীপক্ষ অভিযােগ প্রমাণে শােচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ প্রমাণ হয়নি বলে ম্যাজিষ্ট্রেট তাঁকে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫৮ (১) ধারা মােতাবেক অভিযােগ থেকে খালাস দেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব