You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.10.10 | চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেখ মুজিবের মামলা | দৈনিক পাকিস্তান - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পাকিস্তান
১০ই অক্টোবর ১৯৬৬

চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেখ মুজিবের মামলা
(কোর্ট রিপাের্টার)

গত শনিবার সেন্ট্রাল জেলের ভিতরে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আনীত মামলার শুনানীকালে সরকার পক্ষের চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়। এই মামলা চলছে ঢাকার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আফসার উদ্দীন আহমদের এজলাসে।
শেখ মুজিবর রহমান গত ২০ শে মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভায় যে বক্তৃতা করেন উহার অংশ বশেষ আপত্তিকর বিধায় সরকারপক্ষ থেকে রমনা থানায় ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলের ৪৭(৫) ধারা মােতাবেক শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়।
গতকাল আবদুল মজিদ, আবদুর রব, মিয়া আবুল হাশিম ও আবদুস সােবহান নামক ৪ ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
প্রথম সাক্ষী আবদুল মজিদ আদালতে বলেন যে, তিনি সদরঘাট হকার মার্কেটে অবস্থিত একটি দর্জির দোকানের মালিক। ২০ শে মার্চ শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, এই মামলার একজন সাক্ষী আবদুর রব তার সাথে ছিলেন। শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলেন। সাক্ষী বলেন, শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমরা সাড়ে চার কোটি লােক বাঁচার দাবীতে নেমেছি। আমরা শতকরা ৭৫ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি। আর পশ্চিম পাকিস্তান তা ভােগ করে। অথচ আমরা জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ ও পশ্চিম পাকিস্তান শতকরা ৪৪ ভাগ। বিগত ১৭ দিনের যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কোন সাহায্য আসেনি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। আমাদের এখানে শুধু কয়েকটি ভাঙ্গা বিমান ও ১ ডিভিশন সৈন্য ছিল। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদর দপ্তর করাচীতে অবস্থিত। চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপিত হলে দেশের অর্থ দেশে থাকত। পূর্ব পাকিস্তান একটি বাজারে পরিণত হয়েছে। টেণ্ডপাতা আমদানী পশ্চিম পাকিস্তানে বন্ধ হয়নি অথচ পূর্ব পাকিস্তানে নিসিদ্ধ করা হইয়াছে।
বিবাদীপক্ষের জেরার জবাবে আবদুল মজিদ বলেন যে, তিনি কখনও পশ্চিম পাকিস্তানে যাননি। প্রেসিডেন্টের মাস পহেলা বক্তৃতা তিনি শুনে। থাকেন। আর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি শেখ মুজিবের বক্তৃতা দু’বার শুনেছি। আমার খুব রাগ হল।
দ্বিতীয় সাক্ষী আবদুর রব সাক্ষ্যদানকালে উল্লেখ করেন যে, তিনি রিক্সা চালান ও রিক্সার মালিক। ২০ শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবের বক্তৃতা শুনেন। শেখ মুজিব, সরকারের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলেন এবং সেই বক্তৃতা শুনে “আমার খুব রাগ হলাে।”
বিবাদীপক্ষের জেরার জবাবে আবদুর রব বলেন যে, তার রিক্সা চালানাের ও মালিকানা স্বত্বের লাইসেন্স আছে।
ঘৃণার সঞ্চার হলাে
তৃতীয় সাক্ষী মিয়া আবুল হাশিম নবাব কাটরার নিমতলিতে অবস্থিত একটি হােটেলের ম্যানেজার। সাক্ষ্যদানকালে তিনি বলেন যে, অপর সাক্ষী আবদুস সােবহান প্রায়ই তার হােটেলে খেতে আসে এই সূত্রে তার সাথে আলাপ। তিনি বলেন, ৬ই চৈত্র তিনি পল্টন ময়দানে শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা শুনেছেন। শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা শুনে তার মনে ঘৃণার সঞ্চার হয়।
বিবাদীপক্ষের জেরার জবাবে সাক্ষী মিয়া আবুল হাশিম বলেন যে, প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা তিনি দুই তিন বার ও গবর্নরের বক্তৃতা কয়েকবার শুনেছেন। কিন্তু বিষয়বস্তু স্মরণ নাই।
সােবহান
সরকার পক্ষের চতুর্থ সাক্ষী ঢাকা জুটমিলের বয়ন বিভাগের মিস্ত্রি আবদুস সােবহান আদালতকে জানান যে, তিনি পল্টন ময়দানে শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা শুনেছেন। শেখ মুজিব তাঁর বক্তৃতায় সরকারের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলেন।
বিবাদীপক্ষের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি মুসলিম লীগের নেতাদের বক্তৃতাও শুনেছেন। আর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, তিনি জনাব সবুর খান ও জনাব মােনেম খানকে চেনেন না।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব