You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক ইত্তেফাক
২৩শে মে ১৯৬৬

দেশরক্ষা আইনের অপব্যবহারের নিন্দা
আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবীতে কুমিল্লা বার সমিতির ৩৫ জন সদস্যের যুক্ত বিবৃতি

কুমিল্লা জেলা বার সমিতির ৩৫ জন বিশিষ্ট আইনজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশরক্ষা আইনে আটক সকল রাজনৈতিক নেতার আশু মুক্তি দাবী করিয়াছেন। দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগ করিয়া রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের শায়েস্তা করার নীতিকে তাঁহারা অতীব দুঃখজনক বলিয়া বর্ণনা করেন। আইনজীবীগণ বলেন যে, নিজ কর্মসূচী সাধারণ্যে পেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার সব কয়টি রাজনৈতিক দলেরই আছে। শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর অন্যান্য সহকর্মীকে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার করায় তাহারা বিস্ময় প্রকাশ করিয়াছেন। তাহারা বলেন যে, তাসখেন্দ ঘােষণার পর দেশে জরুরী অবস্থা অব্যাহত রাখার কোন প্রয়ােজনীয়তা নাই এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দেশরক্ষা আইনের ব্যবহার বিধানের অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখার খাতিরে সরকারকে তাঁহারা আইনের অপব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানাইয়াছেন। নিম্নোক্ত আইনজীবীরা যুক্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিয়াছেনঃ
মেসার্স সৈয়দ আবদুল ওয়াহেদ সভাপতি, জেলা বার সমিতি; আহমদ আলী, বজলুর রহমান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান, আবদুল গনী মুন্সি, আমীর হােসেন, আজিজুর রহমান ভূঁইয়া, ইব্রাহীম মজুমদার, মফিজুল ইসলাম, দলিলুর রহমান, গােলাম হায়দার, সুলতান আহমদ মজুমদার, এ, জেড, এন, মাের্শেদ, কাজী হাবিবুর রহমান, ইফতেখার রসুল, ফখরুল ইসলাম, আবদুল খালেক, এফ রহমান, মুজিবর রহমান, আব্দুল খালেক, জাকির হােসেন ভূঁইয়া, নিয়ামৎ উল্লাহ দেওয়ান, গােলাম হাসান, সৈয়দ মােস্তফা আলী, বদরােদ্দোজা চৌধুরী, বি, আলম, জালাল আহমদ, আবদুল ওয়াসেক, মুজাফর আলী ভূঁইয়া, মহব্বত আলী, আবদুস সামাদ ভূঁইয়া, এম, হােসেন, এস, আহমেদ এবং আবদুর রহমান খান।
মুক্তাগাছা
মুক্তাগাছা, ১৫ই মে প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষে গত ১৩ই মে এখানে অনুষ্ঠিত বিরাট জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহণকারী দৃঢ়প্রত্যয়ী প্রতিটি মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হইয়াছে ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই।’
মুক্তাগাছা থানা আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও প্রভাবশালী মৌলিক গণতন্ত্রী খােন্দকার আবদুল মালেক। শহীদুল্লা-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিরাট জনসমাবেশে বক্তৃতা করেন থানা ন্যাপ আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট মৌলিক গণতন্ত্রী জনাব আবদুর রশীদ, আওয়ামী লীগ কর্মী আবু তাহের ও আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।
সভায় শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী, জরুরী আইন প্রত্যাহার, গ্রামে গ্রামে পূর্ণাঙ্গ রেশনিং প্রবর্তন, টেপাতার উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ৬-দফা মানিয়া লওয়ার দাবীসহ কতিপয় প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
সভাশেষে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ কালাে পতাকাসহ এক বিরাট শােভাযাত্রা বাহির করে।
শােভাযাত্রীরা ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই,’ ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ.’ ‘৬-দফা মানতে হবে, ৭ লক্ষ বিড়ি শ্রমিককে ভাতে মারা চলবে না, ‘দমননীতি বন্ধ কর, গ্রামে গ্রামে পূর্ণাঙ্গ রেশনিং প্রথা চালুকর, ট্যাক্স ও খাজনার বােঝা কমাতে হবে’ ও ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করিয়া শহর মুক্তাগাছার বিভিন্ন রাস্তায় প্রচণ্ড বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। -সংবাদদাতা।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!