You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.05.18 | জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার কর : শেখ মুজিবসহ সকল বন্দীর মুক্তি চাই | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১৮ই মে ১৯৬৬

জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার কর : শেখ মুজিবসহ সকল বন্দীর মুক্তি চাই
প্রতিবাদ দিবসে সর্বত্র বলিষ্ঠ আওয়াজ
(নিজস্ব সংবাদদাতা)

চাঁদপুর, ১৪ই মে- পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকাল স্থানীয় পৌর পার্কে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব চান্দ বক্স পাটোয়ারী।
কোটি কোটি মানুষের ন্যায্য দাবী ৬-দফা দাবাইয়া রাখার জন্য দেশরক্ষা আইনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করিয়া আটক রাখার তীব্র নিন্দা এবং তাঁহাদের আশু মুক্তির দাবী জানাইয়া সভায় বক্তৃতা করেন। চাদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব সিরাজুল ইসলাম (উকিল), জনাব আবদুল করিম, জনাব আবদুল লতিফ ও রুহুল আমিন প্রমুখ।
সভাপতির ভাষণে জনাব চান্দ বক্স দমন নীতির তীব্র নিন্দা করেন এবং শেখ মুজিব ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার আশু মুক্তির জন্য প্রদেশের সর্বত্র নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগ্রাম চালাইয়া যাইবার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা এবং আশু মুক্তি দাবী, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার ও দেশরক্ষা আইন রাজনীতিবিদদের প্রতি প্রয়ােগ করার তীব্র নিন্দা, টেপাতা অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার ও লক্ষ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের কর্মসংস্থান, ৬-দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন, লেভীপ্রথা প্রত্যাহার ও প্রচুর পরিমাণে খাদ্য সরবরাহের দাবী এবং প্রদেশের সর্বত্র পূর্ণ রেশনিং প্রথা চালু করার দাবী জানাইয়া কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
জামালপুর
জামালপুর, ১৪ই মে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানসহ সাতজন আওয়ামী লীগ নেতাকে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতারের প্রতিবাদে অদ্য জামালপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্থানীয় পুনাই পার্কে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব সৈয়দ আবদুস সােবহান (উকিল), আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী জনাব মাকসুদ আলী খান বক্তৃতা করেন। সভায় শেখ মুজিবসহ সমস্ত রাজবন্দীর আশু মুক্তি দাবী, দেশরক্ষা আইনের যথেচ্ছা প্রয়ােগের তীব্র নিন্দা এবং বর্তমান খাদ্যসহ নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের মূল্য হ্রাসের সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাইয়া কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুর (ননায়াখালী), ১৬ই মে শেখ মুজিব ও অন্যান্য ধৃত আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তির দাবীতে গত ১৩ই মে এখানে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে শেখ মুজিব ও অপরাপর আওয়ামী লীগ নেতার আটকের তীব্র নিন্দা করিয়া তাহাদের আশু মুক্তি দাবী করা হয়। সভায় ৬দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। জনাব নাজির আহমদ ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তৃতা করেন জনাব আখতারুজ্জামান (উকিল), ডাঃ আবুল বশর ও ডাঃ আবদুল হক।
রায়পুর
রায়পুর (নােয়াখালী), ১৪ই মে- রায়পুরে অনুষ্ঠিত অপর এক জনসভায় শেখ সাহেব ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তি দাবী করা হয়। জনাব বিসমিল্লাহ মিয়া উকিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতা করেন মেসার্স সাইফুদ্দীন ইত্তেহাদ, আবদুর রশীদ ও নূরুল আলম।
রামগঞ্জ
রামগঞ্জ (নােয়াখালী), ১৬ ই মে- গত ১৩ই মে প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষে এখানে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে তাঁহাদের মুক্তি দাবী, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ এবং অবিলম্বে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের মূল্য হ্রাস করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাইয়া কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব বিসমিল্লাহ মিয়া। বক্তৃতা করেন জনাব সাইফুদ্দিন, জনাব আবদুর রশিদ ও জনাব নূরুল ইসলাম। -সংবাদদাতা
চট্টগ্রাম
(ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম অফিস হইতে) পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ মােতাবেক ১৩ই মে’র প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগ এক ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করে। এতদুপলক্ষে ১৩ই মে সকাল সাতটায় আওয়ামী লীগ অফিসে কালাে পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং শহরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবী সম্বলিত পােষ্টার লাগানাে হয়। শ্রমিক, ছাত্র ও জনসাধারণের মধ্যে “রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি চাই” লিখিত কালাে ব্যাজ বিতরণ করা হয়।
বিকাল ৩ টায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার জন্য স্থানীয় জে, এম, সেন হলে প্রতিবাদ সভার আয়ােজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শহর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সভাপতি ডাঃ সৈয়দুর রহমান চৌধুরী। নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ করিয়া ও তাঁহাদের মুক্তি দাবী করিয়া বক্তৃতা করেন, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ আনােয়ার হােসেন, জেলা আওয়ামী লীগ কোষাধ্যক্ষ বাবু মানিক চৌধুরী ও পূর্ব পাকিস্তান টোবাকো কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদক ও শ্রমিক নেতা জনাব নূর আহমদ, যুবনেতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শহর আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক জনাব ইদ্রিস আলম, যুবনেতা জনাব নাজিমউদ্দিন, শহর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইপরেল শ্রমিক নেতা জনাব রহমত উল্লা চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব এস, এন, তৌফিক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংস্থার সম্পাদক ও বার্মা ইষ্টার্ণ লেবার ইউনিয়নের সম্পাদক জনাব জামশেদ আহমদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সম্পাদক জনাব আবদুল মান্নান। সভাপতির ভাষণে ডাঃ সৈয়দুর রহমান অবিলম্বে দেশের জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার ও নেতৃবৃন্দের আশু মুক্তি দাবী করেন। তিনি বলেন, নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করিলেই গণ-আন্দোলন স্তব্ধ হইয়া যাইবে না, বরং জনমত তীব্র হইতে তীব্রতর হইয়া উঠিবে।
গৌরীপুর
গৌরীপুর শহর (ময়মনসিংহ), ১৪ই মে গতকাল বিকাল ৫ টায় গৌরীপুর থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের আহ্বানে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমানসহ ৭ জন নেতাকে দেশরক্ষা আইনে আটক করার প্রতিবাদে স্থানীয় বাজার ময়দানে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ নেতা জনাব জামশেদ আলীর সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সদর মহকুমা (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, গৌরীপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব হাতেম আলী মিয়া, গৌরীপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক জনাব আবদুস সামাদ, থানা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জনাব শফিরউদ্দিন, মহকুমা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও গৌরীপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আবদুস সােবহান, শহর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক জনাব তালেব হােসেন, আওয়ামী লীগ কর্মী জনাব মাের্তাজ আলী ফকির সরকারের দমন নীতির তীব্র সমালােচনা করেন। প্রত্যেক বক্তাই সাম্প্রতিক পূর্ব পাক আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপ্লবী নেতা শেখ মুজিবসহ ৭ জন নেতাকে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা করেন। সভায় শেখ মুজিবসহ সকল আটক বন্দীর আশু মুক্তি, দেশরক্ষা আইন প্রত্যাহার, ৬-দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন, সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ রেশনিং প্রথা চালু এবং দ্রব্যমূল্য হ্রাসের দাবী জানাইয়া কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
পটিয়া
(ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম অফিস হইতে) প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের ঘােষণা মােতাবেক ১৩ই মে পটিয়া থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পটিয়া টাউনে বিকাল ৪ ঘটিকায় এক বিরাট প্রতিবাদ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জনাব বদিউল আলম এল, এল, বি। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিয়া বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক জনাব এম, এ, মান্নান, আওয়ামী লীগ নেতা মেসার্স এ, কে, এম আবদুল মান্নান, জনাব সুলতান আহমেদ ও জনাব শফিউল আলম এল, এল, বি। সভাশেষে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, এম, এ, আজিজের মুক্তি চাই’, ‘প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি চাই’, ‘দমননীতি চলবে না’, ‘হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার কর, ‘ছয়দফা কায়েম কর’, ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’, ‘শহীদ সােহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি ধ্বনি সহকারে পটিয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। সভায় শেখ মুজিবর রহমান এবং অন্যান্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করিয়া অবিলম্বে নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবী, গ্রামাঞ্চলে পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থার প্রবর্তন ও বিড়ি শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানের উপর হইতে সকল প্রকার হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান হয়। সর্বশেষ প্রস্তাবে ছয়-দফা আদায়ের সংগ্রাম আরও জোরদার করার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করা হয়।
সাতকানিয়া
সাতকানিয়া, ১৪ই মে গতকাল শুক্রবার স্থানীয় বার লাইব্রেরী ময়দানে শেখ মুজিবর রহমানসহ প্রদেশের অন্যান্য নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে এক “প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব সিদ্দিক আহমদ। প্রতিবাদ সভায় নেতাদের গ্রেফতারের নিন্দা করিয়া বক্তৃতা করেন থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জনাব শামসুদ্দিন আহমদ, মেসার্স ওসমানুল হক, সিরাজুল ইসলাম, পরিমল কান্তি দত্ত ও আমিনুল ইসলাম।
সভায় শেখ মুজিবসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর আশু মুক্তি, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, খাদ্যমূল্য হ্রাসের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাইয়া কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।-সংবাদদাতা
মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভা
গত রবিবার মুন্সিগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভা মুন্সীগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব শামসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে মুন্সীগঞ্জ মহকুমার সকল ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ রেশনিং চালু করার দাবী জানান হয়। এক প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানসহ দেশরক্ষা আইন ও নিরাপত্তা আইনে আটক নেতৃবৃন্দের অনতিবিলম্বে মুক্তিদানের দাবী জানান হয়। ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারের সংকল্প ঘােষণা করিয়া একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব