You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
১৪ই মে ১৯৬৬

আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভা
অবিলম্বে সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী
(ষ্টাফ রিপাের্টার)

সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগকে তীব্র নিন্দা করিয়া গতকাল শুক্রবার পল্টন ময়দানে দাবী দিবস উপলক্ষে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ আয়ােজিত জনসভায় গৃহীত প্রস্তাবে শেখ মুজিবর রহমানসহ দেশের সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করা হইয়াছে।
ভারতের সহিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে দেশ হইতে অবিলম্বে। জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার দ্বারা রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরাইয়া আনিয়া জনসাধারণের মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রবর্তনের দাবী করিয়া সভায় একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হইয়াছে।
জনসভায় গৃহীত একটি প্রস্তাবে প্রদেশের খাদ্য ও নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া প্রদেশের সর্বত্র পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, লেভীর ক্রয়মূল্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ এবং নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির ন্যায়সঙ্গত মূল্য নির্ধারণের দাবী জানান হয়।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে দেশের জনসাধারণের চিন্তাধারা বিকাশের পথ সুগম করিবার জন্য সংবাদপত্রের উপর হইতে সর্বপ্রকার বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবী জানান হয়।
দাবী দিবস উপলক্ষে আয়ােজিত জনসভায় প্রস্তাবের মাধ্যমে শ্রমিক স্বার্থবিরােধী আইন প্রত্যাহার, ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, সাতলক্ষ বিড়ি শ্রমিকের স্বার্থে টেণ্ডপাতা অর্ডিন্যান্স বাতেল ও জাহাজী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের দাবী জানান হয়। প্রস্তাবে পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের মওজুদ টেপাতা পশ্চিম পাকিস্তানে রফতানীর চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ করা হয় এবং আগামী ২২ শে মে খাদ্য দাবী দিবসের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়।
একটি প্রস্তাবে দেশের বৃহত্তর জনগােষ্ঠী কৃষকদের প্রতি সরকারের অবহেলার নিন্দা করিয়া বলেন যে, জাতীয় পরিষদ কেন্দ্রীয় উজির জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং জনাব খান এ সবুর আশ্বাস দান করিয়াছিলেন যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগ করা হইবে না।
জনাব জহীর উদ্দিন আরও বলেন যে, দেশে বিভেদ সৃষ্টি করা আমাদের কাম্য নয়, শক্তিশালী পাকিস্তান গড়িয়া তােলাই আমাদের লক্ষ্য।
৬-দফা দাবী সম্পর্কে তিনি বলেন যে, যত অত্যাচারই হউক না কেন। সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে।
জনসভায় সকল বক্তাই দেশরক্ষা আইনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারকে নিন্দা করেন এবং অবিলম্বে সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করেন।
জনসভার পর একটি মিছিল বাহির হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং জেল গেটের সম্মুখে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত সার্টিফিকেট রদ এবং ২৫ বছরের জন্য কৃষকদের খাজনা মওকুফ করার দাবী জানান হইয়াছে।
প্রদেশের শিক্ষায়তনের ব্যাপারে সরকারের অহেতুক হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা করিয়া একটি প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার নােটিশ দ্বারা হয়রানির প্রচেষ্টাকে স্বৈরতান্ত্রিক কাৰ্য্য বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে এবং এই ধরনের কাজ হইতে বিরত থাকার দাবী করা হইয়াছে। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে সরকারের নিকট আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে কারাগার হইতে মুক্ত করিয়া ৬-দফার উপর গণভােট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনমত যাচাইয়ের দাবী জানান হইয়াছে।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব হাফেজ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জহীরউদ্দিনসহ দশজন বক্তা ভাষণদান করেন। জনাব জহীরউদ্দিন তাহার ভাষণে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দেশরক্ষা আইন প্রয়ােগ করার জন্য সরকারের সমালােচনা করিয়া বলেন যে, জাতীয় পরিষদে কেন্দ্রীয় ….

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!